বিয়ের ফ্যাশনে কাশ্মীরি তরুণীর স্বপ্ন পূরণের গল্প
Odd বাংলা ডেস্ক: হেবা। এক কাশ্মীরি তরুণী। ভূস্বর্গ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের ওয়েডিং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে এক উদীয়মান নারী উদ্যোক্তা। কাশ্মীর উপত্যকায় শত শত সমস্যার বেড়াজালে স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে হাজারো তরুণীর অনুপ্রেরণা। মানুষের কটু কথা, সিভিল সার্ভিসের জন্য পড়াশোনা করার উপদেশ উপেক্ষা করে হাতের মুঠোয় বন্দি করেছেন স্বপ্নকে।
কাশ্মীরি তরুণী হেবার তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলেছেন ভারতীয় গণমাধ্যমে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ওয়েডিং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে হেবার যাত্রা শুরু হয় মূলত ইনস্টাগ্রামে।
‘মেকআপ অ্যান্ড স্লে’ নামে তিনি ওয়েডিং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে পথ চলা শুরু করেন। সেখানে তিনি প্রচুর প্রশংসা কুড়ান। আর বর্তমানে তিনি একই নাম দিয়ে সেটিকে বিয়ের ফ্যাশন স্টুডিওতে পরিণত করেছেন।
একই নামে ফেসবুকেও তাঁর একটি পেজ রয়েছে। হেবা এই পেজটিকে ব্যবহার করেন নিজের স্টুডিওতে সাজানো নববধূর ছবি শেয়ার করায়। একই সঙ্গে বধূকে সাজাতে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর ছবিও শেয়ার করেন তিনি। কখনো কখনো পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে অনুপ্রেরণামূলক দু-একটি উক্তিও জুড়ে দেন সেসব পোস্টে।
উদীয়মান এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমি সব সময় মেকআপ এবং ওয়েডিং ফ্যাশনে আগ্রহী ছিলাম। যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার চাচাতো বোনদের ওপর সেটার চর্চা করতাম। শৈশবে আমি মুখ আঁকতাম এবং সেগুলো সাজাতাম। আমি জানতাম, আমি এটি করতে চাই।
মেক-আপ আর্টিস্ট হওয়ার ধারণা সমাজের মূলধারায় প্রচলিত ছিল না। সমাজের রক্ষণশীলতার কারণে আমি সেটা চর্চা করতে দ্বিধান্বিত ছিলাম। তবে গত কয়েক বছরে এই শিল্পে অনেক তরুণ নারী উদ্যোক্তা যুক্ত হয়েছেন এবং আমি তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
স্বপ্নের পথে হাঁটা সহজ ছিল না বলে জানিয়েছেন হেবা। তিনি জানান, তাঁকে অনেকেই বলতেন, এসব করে তিনি শুধু নিজের সময় নষ্ট করছেন। এটা কাজের ভালো ক্ষেত্র নয়। এখনো অনেকেই বলে, আমার এই ক্ষেত্রে থাকা উচিত নয়। অনেকেই আমাকে সিভিল সার্ভিসের জন্য পড়াশোনা করতে পরামর্শও দেন। কিন্তু আমি মনে করি, মেকআপের প্রতি দুর্বলতা আমার সব সময়ই থাকবে। কাশ্মীরে সুযোগ নেই এমন ক্ষেত্র সম্পর্কে উৎসাহী অন্য নারীদেরও এগিয়ে আসা উচিত, এগিয়ে এলেই শুধু তাঁরা বুঝতে পারবেন তাঁদের স্বপ্ন বাস্তব হতে পারে।
বিশাল স্বপ্ন রয়েছে জানিয়ে হেবা বলেন, আমি একজন ব্লগার হতে চাই এবং একটি সফল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে চাই। এই মুহূর্তে আমি এখনো প্রথম পর্যায়ে আছি।
তবে আমি বিশ্বাস করি আমার কাজ প্রশংসিত হবে। নারীদের উচিত তাঁদের সব প্রতিভা নিয়ে এগিয়ে আসা এবং লোকেরা কী বলবে সে সম্পর্কে ভয় না-পাওয়া। মানুষ যা বলতে চায় তা বলবেই, তাই আমাদের উচিত যেটা আমাদের আনন্দিত করে তা-ই করা।
হেবা আরো বলেছিলেন যে বেশির ভাগ দাম্পত্য পোশাক পুরুষরা ডিজাইন করেছেন এবং বিক্রি করেছেন দেখে তিনি তাঁর দোকান খুলতে উদ্বুদ্ধ হন।
পুরুষরাই বেশির ভাগ বিয়ের পোশাকের ডিজাইন ও বিক্রি করা দেখে হেবা নিজে স্টুডিও খুলতে উদ্বুদ্ধ হন।
তিনি বলেন, আমি লক্ষ করেছি, অধিকাংশ বিয়ের পোশাক পুরুষদের ডিজাইন করা এবং বিক্রিও করে তারাই। এরপর আমি ভাবি, নারীরা নারীর সঙ্গে কথা বলতে আরো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, বিশেষত পোশাকের মাপজোকের বিষয়টি নিয়ে।
পোশাকের রং নিয়েও বেশ সচেতন হেবা। তিনি বলেন, বেশির ভাগ দোকানে শুধু কালো রঙের পোশাক দেখা যেত। তাই আমি স্বর্ণ ও ক্রিমের মতো হালকা রঙের প্রচুর পোশাক ডিজাইন করেছি।
কাশ্মীর উপত্যকার নারীদের জন্য হেবা বড় অনুপ্রেরণা- জানিয়ে তারঁ স্টুডিওর গ্রাহক তাইবা জান বলেন, শৈশবকাল থেকেই নারীদের বলা হয় কিছু কাজ আমরা করতে পারি কিছু কাজ করতে পারি না। আমি আনন্দিত যে হেবা নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করে এত বড় একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি আশা করি, অন্য তরুণীরাও হেবাকে দেখবে এবং তাঁর সাফল্যের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হবে।
Post a Comment