দুই হাত-পা নেই তবুও বিশ্বজয় করেছেন আহমদ জুলকারনাইন



Odd বাংলা ডেস্ক: মানুষ কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর মনোবল দিয়েই পৃথিবী জয় করেছে। এর অনেক প্রমাণ রয়েছে আমাদের সমাজে। এমনকি জন্মগতভাবে কিংবা দুর্ঘটনাজনিতভাবে অনেকেই শরীরের একটি অঙ্গ হারিয়ে জয় করেছেন পৃথিবী।

স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করেন। এমন অনেকের কথাই তো জেনেছেন। আজ এমন একজন অদম্য মনোবলের মানুষের কথা জানাবো যিনি মনের জোড়েই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিশ্ব জয় করেছেন। নাম তার আহমদ জুলকারনাইন। 

ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা তিনি। জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ সে, তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত নেই। নেই দু’টি পা। তারপরও দমে যাননি। জীবনের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে নেই ক্লান্তি বা বিষন্নতা। স্বাভাবিক জীবন-যাপন, উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নিয়ে সমাজের আট-দশজন মানুষের মতো তিনিও একজন। 

আহমদ জুলকারনাইন জন্মেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তবে অন্য অনেক শিশুর মতো স্বাভাবিক জন্ম হয়নি তার। জন্মলগ্ন থেকেই সে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ। তাই ছোট থেকেই কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়েছে জুলকারনাইনকে। এভাবেই পার করলেন জীবনের ২৭টি বসন্ত। ২৭ বছরের জীবনে হাত-পা না থাকায় বাল্যকাল থেকেই সংগ্রাম আর প্রত্যয়ই তার নিত্যসঙ্গী।

তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে ইচ্ছাশক্তি, প্রবল মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের এক জলন্ত উদাহরণ হতে চেয়েছেন জুলকারনাইন। সব বঞ্চনা উপেক্ষা করে, জীবনের প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পৌঁছেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বিকলাঙ্গ হয়েও চমৎকার ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে। রীতিমত ছবি তোলার গুরুর খেতাব পেয়েছেন ২৭ বছরের দুরন্ত তরুণ জুলকারনাইন।

একসময় স্থানীয় একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে কাজ করতেন জুলকারনাইন। সেখানে ছিল একটি ফটোগ্রাফি সার্ভিসও। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ক্যাফেটিতে ছবি তুলতে আসতেন। আর তা দেখেই ছবি তোলার প্রেমে পড়েন তিনি। পরিবার ততটা স্বচ্ছল ছিল না তার। আর তাই ক্যামেরা কেনার টাকাও ছিল না। একটা সময় ধার করা টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন একটি ক্যামেরা এবং নেমে পড়েন ছবি তোলার কাজে।

প্রথম দিকে নিজের এলাকার জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্ডের ছবি তুলতেন তিনি। এক সময় পেশাদার ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেন। শুধু সমতলেই নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার উঁচুতেও ছবি তুলেছেন। একবার একটি জলপ্রপাতের ছবি তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতাও হয়েছিল তার। প্রাণে বেঁচে গেলেও পেয়েছিলেন চোট।

ভালোবাসা ও শখের বসে যে ছবি তোলা শুরু করেছিলেন তা এখন পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন নিজের কোম্পানি। নাম দিয়েছেন ‘ব্যাঙ ডেজোয়েল’। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমেও ছাপা হচ্ছে তার তোলা ছবি। আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জুলকারনাইন বলেন, যদি সেরা হতে চাও, তাহলে তোমার সীমাবদ্ধতাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। তুমি যা করো সেখানে সেরা হতে তোমাকে নিখুঁত হতে হবে না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি এখন ভাইরাল। হাত-পা না থেকেও যে এত ভালো ছবি তুলতে পারেন সেজন্যই রাতারাতি তার দৃষ্টিনন্দন ফটোগ্রাফিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। তাকে এখন পুরো বিশ্বের মানুষই চিনে এক নামে। ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে সমস্ত সামাজিক মাধ্যমেই তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। যে ছেলেটির জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল পরিবার, সে ছেলেটিই এখন অনেক বিজ্ঞ লোকের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যারা ফটোগ্রাফি শিখতে চান তাদের সাহায্য করতে চান জুলকারনাইন। তিনি বলেন, যারা স্বাভাবিক শুধু তাদের কাছ থেকেই নয় যারা ভিন্নভাবে সক্ষম তাদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা নেয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। আমি আমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে গর্বিত। আমি ডিজাবলড, তবে পরাজিত নই।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.