একের পর এক শিশুর জীবন কেড়েছে, বিকৃত রুচির এক ভয়ঙ্কর ক্রমিক শিশু ধর্ষক



Odd বাংলা ডেস্ক: ঘটনা বাংলাদেশের। থানায় আনার পর চেয়ারের ওপর প্রায় নিঃসাড় অবস্থায় পড়েছিলো ৫/৬ বছরের পুতুলের মতো ছোট্ট মেয়েটি। ঈষৎ মেলা চোখজোড়ায় অভিব্যক্তিহীন ভাসা ভাসা দৃষ্টি। অন্যদিকে আত্মজার দুর্ভাগ্যের উপাখ্যান বর্ণনা করতে গিয়ে ঘন ঘন চোখ মুছতে থাকেন মালেকা বেগম। তার যে সর্বনাশ ঘটে গেছে। ক’দিন আগেও যেই মেয়েকে বুকের দুধ পান করিয়েছেন, সেই শিশুকন্যাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কান্নার দমকে বারবার রুদ্ধ হয়ে আসে মাঝ বয়েসী নারীর কণ্ঠ। আমাদের প্রশ্নের জবাব দেন আর থেকে থেকে হাহাকার করে ওঠেন ‘আমার সোনার চানের এতবড় সর্বনাশ যে করছে, তাকে দুনিয়ায় ও পরকালে আল্লাহ তার বিচার করুক’। 

 শিশুশ্রেণির ছাত্রী ছোট্ট মিনু আক্তার (ছদ্মনাম)। পুরুষ ও নারীর পার্থক্য ঠিকমতো বুঝে ওঠার আগেই মানবরূপী এক পশুর লালসার শিকার হতে হয়েছে যাকে। প্রতিদিনকার রুটিনমতো খেলতে গিয়েছিলো বাড়ির পার্শ্বস্থিত বাগানে। আর সেখানেই তার ওপর কেয়ারটেকার খালেকের লোলুপ দৃষ্টি। বিস্কুট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে মেয়েটিকে তিনি নিয়ে যান বাগানের নির্জন প্রান্তে। তারপর...। দুর্বল দুটি হাতের বাঁধা এবং মর্মবিদারক অনেকগুলো আর্তচিৎকারকে উপেক্ষা করে মানুষরূপী এক হায়েনার নির্মমতা। জেনে অবাক হবেন, ধর্ষক খালেকের একমাত্র মেয়ের বয়সও কিন্তু কাকতালীয়ভাবে মিনুরই সমান। ৬ বছর। মেয়েটির ওপর জান্তব অত্যাচারে মেতে ওঠার সময় একবারও কি একই বয়সী নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবিটি ভেসে ওঠেনি তার মানসপটে! মালেকা বেগমের ফরিয়াদ অনুযায়ী এই অপরাধে পরকালে কি কি বিচার হবে, আমার জানা নেই। ধর্মীয় গ্রন্থে নিশ্চয়ই এ সম্পর্কে সবিস্তার বর্ণনা দেয়া আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সম্মানিত অভিভাবক, পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, পিপিএম স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী দুনিয়ায় বিচারের বন্দোবস্ত আমরা এরইমধ্যে করে ফেলেছি। ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অনতিবিলম্বে আমাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ধর্ষক আব্দুল খালেক (৩৫)। 

আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নিকটও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করেছেন তিনি। আশা করি, এবার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তিই নিশ্চিত হবে তার। খালেককে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে আরো ভয়ঙ্কর ঘটনা। এর আগেও একাধিক শিশুর দিকে লোলুপ হাত বাড়িয়েছিলেন তিনি। এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে একবার তাকে জুতাপেটাও হজম করতে হয়। তার বক্তব্যের অসামঞ্জস্যতায় আরো অনেক জঘন্য ঘটনা আড়াল করার চেষ্টার লক্ষণও ফুটে উঠে। সবদিক বিবেচনায় আমার মনে হয়েছে, আব্দুল খালেক বিকৃত রুচিসম্পন্ন, শিশুদের প্রতি বিকৃত যৌনতায় আসক্ত একজন ক্রমিক শিশুধর্ষক। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেও তার চরিত্রের এই জঘন্য দিকের প্রমাণ মেলে। জানতে চেয়েছিলাম, এই প্রায় দুগ্ধপোষ্য শিশুর মধ্যে তিনি কি আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছেন! ‘আমার তাকে ভাল লাগতো’ খালেকের নির্বিকার জবাব। সাধারণত দেখা যায়, একেকটা শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর ধর্ষকের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন পক্ষের মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি ইত্যাদি। 


এক সময় হয়তো পত্রিকার পাতায় বড় অক্ষরের শিরোনাম তৈরি করে আসামি গ্রেফতার হন। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমরা কোনো মিছিল, সমাবেশ বা বড় শিরোনামের অপেক্ষা করিনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘৃণ্য এই অপরাধীকে আইনের আওতায় এনেছি। কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, এরপর? আবারো অন্য কোনো মিনুর দুর্ভাগ্যের উপাখ্যান? আবারো পুলিশ, উকিল, আদালতের কর্মযজ্ঞ। মিছিল,মিটিং, সমাবেশ। তারপর কোনো এক কুক্ষণে আরো এক নিষ্পাপ মিনু, আরেক অমানুষ খালেক...! সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে- আপনার কন্যাশিশু কোথায় যাচ্ছে, কে তার সঙ্গে কথা বলছে, কে ভিন্ন উদ্দেশ্যে কোলে নিচ্ছে, এ বিষয়গুলো একটু ভালমতো লক্ষ্য রাখুন। বয়স কমপক্ষে ১২ হবার আগ পর্যন্ত যতটা সম্ভব তাকে চোখেচোখে রাখুন। আব্দুল খালেকেরা কিন্তু সবজায়গায়, সব সমাজেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছেন। প্রজাপতির ন্যায় উড়ে বেড়ানো শিশুদের দেখা আমার পছন্দের দৃশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর অপছন্দ করি, কিলবিল করতে থাকা শূয়োপোকার চাইতেও বেশি ঘৃণা করি এসব খালেককে। বিকৃত রুচির, মনোবিকারগ্রস্ত খালেকদেরকে। শিশু ধর্ষণের মতো অমানবিক, বর্বরোচিত কাজের এটাই হোক শেষ ঘটনা।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.