বংশবৃদ্ধি করাই এই পতঙ্গের মূল কাজ, জীবনের আয়ু মাত্র ২৪ ঘণ্টা!
Odd বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীতে অনেক ধরণের পোকামাকড় রয়েছে। যাদের বৈশিষ্ট্য, দেহের গঠন ভিন্ন। কোনো কোনো পোকা আছে বেশি দিন বাঁচে। আবার কোনো পোকা ২৪ ঘণ্টা কিংবা তারও কম সময় বাঁচে। আজকে এমনি এক পোকার কথা বলবো, যাদের আয়ু একদিন।
পোকাটির নাম হলো মেফ্লাই। এদের আয়ু সবচেয়ে কম। এদের জীবন কেবল ২৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়। এই স্বল্প জীবনযাপনের জন্য এদেরকে ‘একদিনের পোকামাকড়’ হিসেবে ডাকা হয়। বিশ্বে ২৫০০ প্রজাতির বিভিন্ন ধরণের মেফ্লাই রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতির মেফ্লাই জনগোষ্ঠীর পুরুষ সদস্যরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যায়।
মেফ্লাইরা তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় প্রকৃতির মধ্যে কাটায়। এদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো প্রজনন। জীবনের এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা গোষ্ঠী গঠন করে। মেফ্লাই একটি ইউরোপীয় প্রাণী। ইউরোপকে জীব বৈচিত্র্যের স্বর্গ বলা হয়। প্রতি বছর ইউরোপের স্বতন্ত্র জলবায়ু এক অসাধারণ ঘটনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে, ইউরোপের হাঙ্গেরি নামক স্থানের টিসজা নদীতে।
গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে, যখন দিনের দৈর্ঘ্য ও জলের তাপমাত্রা অনুকূলে থাকে তখন নদীটিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেফ্লাইয়ের উত্থান ঘটে। তিন বছর নদীর তলানিতে নিম্ফ হিসেবে কাটানোর পর, পুরুষরা প্রথমে জলের উপরে দৃশ্যমান হয়। নতুন পাখায় ভর করে এরা নদীর পাড়ে পৌঁছায় এবং শেষবারের মতো খোলস পরিবর্তন করে। এখন তারা যৌনতায় সক্ষম এবং এখন তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বংশবৃদ্ধি।
প্রত্যেক মেফ্লাই পুরুষের জীবনের যখন মাত্র তিন ঘন্টা বাকি, এমন সময় মেফ্লাই নারীরা জলের উপর ভেসে উঠতে থাকে। নারীদের গর্ভস্থ ডিমগুলো নিষিক্ত করতে পুরুষদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিটি নারীই এখানে পুরুষদের কাছে মহামূল্যবান। পুরুষদের জীবনে যখন মাত্র কয়েক মিনিট অবশিষ্ট থাকে, প্রতিযোগিতা চরম আকার ধারণ করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সব পুরুষের জীবন সায়াহ্ন ঘটে।
তবে নারীদের যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে। নিষিক্ত ডিম পেটে নিয়ে এরা উজানের দিকে রওনা হয়। এ যাত্রা পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ডিম নির্গমণের স্থলে প্রায় এক কোটি নারী মেফ্লাই একত্রিত হয়। প্রচণ্ড ক্লান্তি নিয়ে নারী মেফ্লাইরা একেক করে নদীর বুকে লুটিয়ে পড়তে থাকে এবং পানির স্পর্শ পাওয়া মাত্র প্রত্যেকে হাজার হাজার ডিম ছেড়ে দেয়। ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়ার সময় ডিমগুলো স্রোতের টানে ভাটির দিকে এগিয়ে চলে। ফলে, পরবর্তী প্রজনন মৌসুমে যেখানে এদের পিতা-মাতার উত্থান হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই এরা উত্থিত হয়।
প্রথম মেফ্লাইয়ের উত্থানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, সব মেফ্লাই চিরবিদায় নেয়। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই এরা জীবনের উদ্দেশ্য সম্পন্ন করে ফেলে। মানব জীবনের সময় সংক্ষিপ্ত নয়, প্রয়োজন শুধু সঠিক ব্যবহারের। যারা সময় সঠিক ব্যবহারে অক্ষম তারাই সময় অল্প বলে অভিযোগ করে।
Post a Comment