গা শিউরে ওঠা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: ফোন পেয়ে আসা বন্ধুটিও ধর্ষণ করল স্ত্রীকে



Odd বাংলা ডেস্ক: রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন মোড়। ব্যক্তিগত কাজ শেষে বাসায় ফিরছেন স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের পথ রোধ করেন কথিত পুলিশের সোর্স মো. শফি। বিয়ের প্রমাণপত্র দেখতে চান তিনি। শ্রমিক স্বামী ও পোশাককর্মী স্ত্রীর হাতে কাবিননামা নেই। এবার শফি বললেন, ‘কোন হুজুর বিয়ে পড়িয়েছে, সেই হুজুরের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রমাণ করতে হবে তোমরা স্বামী-স্ত্রী।’ এ অবস্থায় স্বামী ফোন করলেন বন্ধু জাবেদকে। কিছু সময় পর তিনি পৌঁছলেন ঘটনাস্থলে। এরপর অটোরিকশায় করে হুজুরের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা। কিন্তু হুজুরের বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেল না। এবার একটি কলোনির সামনে থামানো হলো অটোরিকশা। স্বামীকে অটোরিকশায় বেঁধে রেখে পরিত্যক্ত একটি ঘরে নিয়ে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন জাবেদসহ পাঁচজন। 

ঘটনাটি গত শনিবার দিবাগত রাতের। স্ত্রীর ওপর যখন নিপীড়ন চলছিল, তখন বাঁধা অবস্থায়ই কৌশলে নিজের মোবাইল ফোন থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন স্বামী। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধারসহ দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। গৃহবধূর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরো দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক ফাঁকে পালিয়ে যান শফি। গ্রেপ্তার চারজন হলেন মো. বাদশা মিয়া (৩৬), মো. জাবেদ (২৮), মো. রবিন (১৯) ও মো. ইব্রাহীম (৩০)। এঁদের মধ্যে ইব্রাহীম ছাড়া শফিসহ সবাই অটোরিকশাচালক। ইব্রাহীম পেশায় দারোয়ান। এই চার আসামির মধ্যে তিনজন গত রবিবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন মহানগর হাকিম মোহাম্মদ খাইরুল আমীন। 



জবানবন্দিতে আসামি বাদশা মিয়া জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় তিনি অটোরিকশা নিয়ে অক্সিজেন মোড় এলাকায় ছিলেন। সেখানে পুলিশের সোর্স মো. শফি এক দম্পতিকে নিয়ে আসেন। ওই সময় শফির সঙ্গে দারোয়ান ইব্রাহীমও ছিলেন। শফি তাঁদের কাছে বিয়ের প্রমাণপত্র চান। তখন স্বামীটি ফোন করে তাঁর বন্ধু জাবেদকে ডাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জাবেদ ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। এরই মধ্যে শফি তাঁদের বিয়ে পড়ানো হুজুরের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। জাবেদ পৌঁছার পর রবিন নামের আরো এক অটোরিকশাচালক সেখানে আসেন। জবানবন্দিতে বাদশা আরো বলেন, এরপর স্ত্রীকে নিয়ে রবিনের অটোরিকশায় ওঠেন স্বামী। সেটিতে ওঠেন জাবেদও। তাঁরা রাত ১টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও অক্সিজেন মোড় এলাকার শহীদনগরে হুজুরের বাসা খুঁজে পাননি। এ অবস্থায় তাঁদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন শফি, কিন্তু তাঁদের কাছে এত টাকা ছিল না। টাকা না পেয়ে শফি গৃহবধূর স্বামী ও তাঁর বন্ধু জাবেদের সঙ্গে কী কী যেন বলেন। এরপর গৃহবধূকে পরিত্যক্ত একটি ঘরে নিয়ে যান। জাবেদ তাঁকে প্রস্তাব দেন ধর্ষণের। 

 বাদশা জবানবন্দিতে জানান, এতে রাজি হয়ে তিনি প্রথমে গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। এরপর জাবেদ, রবিন, শফি ও ইব্রাহীম পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। পুলিশের কথিত সোর্স শফি গ্রেপ্তার না হওয়া প্রসঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি প্রিন্টন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মো. শফি নামে বায়েজিদ থানা পুলিশের কোনো সোর্স নেই। সে মূলত রিকশাচালক। কখনো কখনো অটোরিকশা চালায়। আর নিজেকে নাকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স পরিচয় দেয়। অভিযানের সময় কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’ বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান শুরু করে স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার এবং চার ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.