ছিপ বা জাল নয়, মাছ শিকার করা হয় পাখি দিয়ে



Odd বাংলা ডেস্ক: কখনো কি মাছ ধরেছেন কিংবা মাছ ধরতে দেখেছেন? উত্তরটি নিশ্চয় হ্যাঁ। সরাসরি কিংবা টেলিভিশনে মাছ ধরার দৃশ্য কম বেশি আমরা সবাই দেখে থাকি। মাছ ধরতে জাল, বড়শি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে জেনে আশ্চর্য হবেন যে, এমন একটি পাখি আছে যা দিয়ে মাছ ধরা হয়। অর্থাৎ সেই পাখিটি জলে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে আনে।  

পুকুর, নদী-নালা, হাওর, বাঁওড়, বিলের মাঝে নৌকায় চলার সময় চারপাশে তাকালেই দেখা যায় পুঁতে রাখা বাঁশের কঞ্চি বা লাঠির মাথায় ডানা মেলে ঠায় বসে আছে কালচে মতো একটি পাখি। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য যেন বিখ্যাত ভাস্কর্যকেও হার মানায়। ডুবসাঁতারে অন্যতম সেরা এই পাখিটিই হচ্ছে পানকৌড়ি। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিতে এ পাখি নিয়ে বেশ আলোচনা পাওয়া যায়। গ্রামবাংলায় দুরন্ত শৈশবে কেউ জলে বেশিক্ষণ ডুবালে বলা হতো ছেলেটি বা মেয়েটি পানকৌড়ির মতো সারাক্ষণ ডুব দিয়ে বেড়ায়।
পানকৌড়ি দিয়ে মাছ শিকার 

জলের পাখি পানকৌড়ি ভারতে সবার কাছে অত্যন্ত পরিচিত। গায়ের কালো রঙের জন্য একে জলের কাক নামেও ডাকা হয়। গ্রামাঞ্চলে এটি পানিউড়ি, পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকহুর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট নামেও পরিচিত। ইংরেজিতে এরা কর্মোরেন্ট ও শ্যাগ নামে পরিচিত।

এই ডুবুরি সত্তাকে কাজে লাগিয়ে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় এদের দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। বিশেষত চীন, জাপান ও ভিয়েতনামে একে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখনো অনেক পর্যটক পানকৌড়ি বা কর্মোরেন্ট পাখি দিয়ে মাছ শিকার দেখতে এসব দেশের নদীতে ভ্রমণ করে। পানকৌড়ির বিষ্ঠা থেকে উৎপন্ন সার গুয়ানো একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে যথেষ্ট সমাদৃত।
এ পাখির দীর্ঘক্ষণ জলে ডুব দিয়ে মাছ খাওয়ার দৃশ্য অত্যন্ত চমৎকার। কিছুক্ষণ পরপর টুপটুপ করে জলাশয়ের গভীরে দ্রুতগতিতে ডুব দেয়। আর মাছ ধরে নিয়ে এসে ভুস করে ভেসে উঠে গিলে ফেলে। দূর থেকে পানকৌড়ির এমন ডুবসাঁতার দেখলে মাঝে মাঝে মনে ভ্রম হবে। মনে হবে যেন সাপ জলে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পানকৌড়ি জলের তলদেশে দীর্ঘক্ষণ থাকার পর যখন উঠে এসে ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গলে গাছের ডালপালা, আগাছা, বাঁশের খুটি বা লাঠিতে বসে সূর্যের দিকে ডানা দু’টি উঁচিয়ে শুকাতে থাকে, তখন দারুণ লাগে।


Blogger দ্বারা পরিচালিত.