'নিজেকে ভালবাসো, তুমি এবার', মহামারির সময় 'বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস' পালন হওয়া কতটা জরুরী
ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: আজ ১০ সেপ্টেম্বর, আজকের দিনটি সারা বিশ্বে 'আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস' হিসাবে পালিত হয়। 'ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন' নামে একটি সংগঠন প্রতি বছরের এই দিনটি পালন করে। এই দিনটির তাৎপর্য হল 'ওয়ার্কিং টুগেদার টু প্রিভেন্ট সুইসাইড' অর্থাৎ 'আত্মহত্যা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করা'।
২০০৩ সালে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লুএইচও) এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথের (ডাব্লুএফএমএইচ) একসঙ্গে প্রথম বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসটির আয়োজনে সহযোগিতা করেছিল। তারপর থেকে বিশ্বের বহু দেশ তাদের সঙ্গে এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে। এরপর ২০১১ সালে, প্রায় ৪০ টি দেশ এই দিনটিতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর বিশ্বে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যান। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। এছাড়াও প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তবে আত্মহত্যার কারণ যে সবসময় খুব সুনির্দিষ্ট হয় তা নয়। অনেকসময়, জিনগত, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টরও যেমন, কোনও ক্ষতি বা তার জেরে তৈরি হওয়া মানসিক আঘাত এসবকিছুর সংমিশ্রণে মানুষ নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে। এর ফলে আত্মহননকারী যে কেবন নিজের ক্ষতি করেন তা নয়, তার আশেপাশে থাকা মানুষগুলিরও একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সমীক্ষা বলছে, প্রতিটি আত্মহত্যার জন্য প্রায় ১৩৫জন মানুষ তীব্র শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন- 'সে অন্য কাউকে ভালবাসে' চিঠিতে লিখে আত্মঘাতী ১২ বছরের কিশোরী
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালনের মূল মন্ত্রই হল, সমাজের প্রতিটি স্তরের সমস্ত মানুষ যেন আত্মহত্যা প্রতিরোধের কাজে এগিয়ে আসতে পারেন। এমনকি সমাজের খুদে সদস্যরাও কিন্তু এই আত্মহত্যা প্রতিরোধে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। তারাও কিন্তু কথাবার্তার মাধ্যমে, নিজেকে এবং অন্যকে শেখানো সতর্কতামুলক শিক্ষালাভ এবং প্রদানের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করতে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল মানুষের মনে সহমর্মিতা বোধ জাগিয়ে তোলা এবং ছোট থেকে শিশুদের এই শিক্ষা দেওয়া।
চলমান করোনা মহামারিটি বিশ্বব্যাপী এক কঠিন পরিবেশ তৈরি করেছে যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষত অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে কাজ হারিয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়া এবং গত কয়েক মাস ধরে সামাজিক দূরত্ব মানুষের মনের ওপর একটা কঠিন প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে বাড়ছে মানসিক চাপ, অবসাদ, যা পরোক্ষভাবে আত্মহননের প্ররোচনা দিচ্ছে। যার ফলে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা প্রতিরোধমুলক সচেতনতা গড়ে তোলা বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Post a Comment