কেন বেলুড়মঠে সূচনা হল কুমারী পুজোর, সেই ইতিহাস কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো


Odd বাংলা ডেস্ক: ভারতের ঐতিহ্য হল দেবীকে 'মা' রূপে পুজো করা। 'মা' হলেন সর্বশক্তিমান। কেবল ভারতবর্ষেই নয়, সিন্ধু, গ্রিস, রোম, ব্যাবিলন ও মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন মাধ্যেমে ঐশ্বরিক মায়ের পুজো যে করা হত, সেই সংক্রান্ত নানা প্রমাণ রয়েছে। নারী রূপে দেবী তথা মাতৃশক্তির  আবাহন ও পুজো মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাসের অঙ্গ। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, ''ভগবানকে 'মা' হিসেবে দেখতে পেলে, তাই হল সাধনার সর্বোচ্চ সীমা।'' বাংলায় শক্তিরূপিনী দেবী দুর্গার পুজোও আসলে মাতৃশক্তিকে পুজো করার একটি জনপ্রিয় উৎসব। বাঙালি ঘরে মেয়েদের মা বলে সম্বোধন করা একটি সুপ্রাচীন রীতি। আসলে সবকিছুই মাতৃশক্তির আরাধনার উপলক্ষ্যমাত্র। 

শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে তাঁর স্ত্রী সারদাদেবীকে 'মা' হিসেবে পুজো করেছিলেন। মা শব্দটা এক শিশুর জন্যও আরাধ্য শব্দগুলির মধ্যে সবথেকে কাছের। বাংলার দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজো হল এখটি বিশেষ আকর্ষণ। অল্পবয়সী কুমারী মেয়েদের আনুষ্ঠানিকভাবে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। কুমারী পুজোকে উত্তর ভারতে বলা হয় 'কন্যা পূজন'। পশ্চিম ভারতে দুর্গাপুজোর অষ্টম দিনে অর্থাৎ মহাঅষ্টমীর দিন কন্যাপুজো বা কুমারী পুজো করা হয়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে নবম দিনে অর্থাৎ নবরাত্রির শেষ দিনটিতে কুমারী পুজো করা হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সদর দফতর হল হুগলির বেলুর মঠ। এখানেও অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো।

ভারতে যেখানে যেখানে রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে সেখানে, সেখানেই কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু হুগলি নদীর ধারে অবস্থিত বেলুড় মঠের কুমারী পুজো ঠিক যেন পুজো নয়,এক সাংস্কৃতিক সংহতি। বেলুড় মঠের কুমারী পুজো এক দর্শনীয় অনুষ্ঠান। বেলুড় মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণের দেবী মায়ের পুজোর অনুসঙ্গ ধরেই কুমারী পুজা শুরু করেছিলেন।


বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরা রামকৃষ্ণ দেবের পথ অনুসরণ করেই কুমারীকে মায়ের মতো করে দেখেন এবং মহাঅষ্টমীর দিন তাঁকে দেবী রূরে উপাসনা করেন। শ্রীরামকৃষ্ণের মতে, অল্পবয়সী মেয়েরা যখন কুমারী থাকেন সেই বয়সে জগতের নেতিবাচক শক্তি থেকে তাঁরা দূরে থাকেন। তখনই তাঁদের মধ্যে মাতৃভাবনা প্রকাশ পায়। প্রাক বয়ঃসন্ধির একজন কন্যাশিশুকে এই পুজো উপলক্ষ্যে পবিত্র গঙ্গা জলে স্নান করিয়ে লাল অথবা সোনালী পাড়ের অগ্নিসদৃশ হলুদ শাড়ি পরানো হয় সাজিয়ে তোলা হয় ফুল ও গয়নায়।

যেভাবে যে নিয়মে মা দুর্গাকে পুজো করা হয় ঠিক সেই সেই রীতি মেনেই কুমারী (কুমারী অবিবাহিত কন্যা) পুজো করা হয়। দেবী দুর্গাকে দেওয়া অর্ঘ্য ও নৈবেদ্যই অর্পণ করা হয় কুমারীর পায়েও। পবিত্র মন্ত্র পাঠ করে কুমারীর পুজো করা হয়। তারপরেই হয় দেখার মতো আরতি। সন্ন্যাসী এবং ভক্তরা কুমারীর প্রতি আনুগত্যে ফুল দিয়ে অঞ্জলি দেন। কুমারীকে দেবীজ্ঞানে প্রার্থনা জানান ভক্তরা। বেলুড় মঠের কুমারী পুজো দেখতে প্রতি বছর বিরাট সংখ্যক ভক্তদের সমাগম ঘটে। এমনকি পুজোর পুরো অনুষ্ঠানই সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.