দিনরাত দাবায় মগ্ন এই গ্রামের মানুষ,পড়ার সিলেবাসেও আছে দাবা
Odd বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের আজব মানুষ রয়েছেন যারা একেকজন একেক ধরনের কাজে নিজের ব্যস্ত রেখেন। এমনকি কিছু গ্রাম আছে যেগুলো একই কাজ করছে হাজার হাজার বছর ধরে। আবার কিছু কিছু গ্রাম আছে তাদের অদ্ভুত রীতি এবং আচারের জন্য বিখ্যাত হয়েছে।
তাইওয়ানের এক গ্রাম আছে রং- তুলির গ্রাম নামে পরিচিত। কাজাখস্তানের এক আজব গ্রাম কালাচি। এই গ্রামের বাসিন্দারা হঠাৎ করেই ঘুমিয়ে পড়েন।
সেই ঘুম একদিন, দুইদিন এমনকি কারো কারো এক সপ্তাহ পরে গিয়েও ভাঙে। আজ যে গ্রামের কথা বলছি সেটি দাবা গ্রাম নামেই পরিচিত। এই গ্রামের ১০০ শতাংশ মানুষই দাবা খেলায় দক্ষ। উত্তর কেরলের মারোত্তিচাল গ্রামটি ‘চেস ভিলেজ’ নামে পরিচিত। এ খেলার জন্যই এই গ্রামটি অন্যান্য গ্রাম থেকে ভিন্ন। দাবা যেন এই গ্রামের মাটি ও বাতাসে মিশে আছে। গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষই দাবাপ্রেমী। সবসময়ই চলে দাবা নিয়ে আলোচনা। খেলার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে চলে গল্প।
দাবা ছাড়া যেন এই গ্রামে আর কোনো বিষয় নেই!তবে এর শুরুটা বেশিদিন আগের নয়। এই দাবা আসক্তির পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস। গত শতকের ৬০ ও ৭০-এর দশকে ছোট্ট এ গ্রামটি এক বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ে। গ্রামের মানুষজন খুব মদ্যপায়ী ছিল। তারা বাড়িতে তৈরি সস্তা চোলাই মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। মদপান যেন তাদের জীবনের অংশ হয়ে পড়ে। মদের পাশাপাশি জুয়ার নেশাও ছিল প্রকট। বিষয়টি পুরো গ্রামেই এক করুণ পরিণতি বয়ে আনতে থাকে। অবস্থা এতই খারাপ হয় যে, কয়েক সচেতন গ্রামবাসী সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে বাধ্য হন যেন গ্রামের চোলাই মদের মজুদগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
তবে গ্রামের এই দৃশ্যটি পাল্টে ফেলেন দশম শ্রেণীতে পড়ূয়া এক ছাত্র। সি.উন্নিকৃষ্ণণ কাছেরই একটি ছোট একটি শহরে থাকতেন। সেখানে তিনি দাবা খেলা শেখেন। গ্রামে ফিরে অন্যদেরও দাবা খেলা শেখানোর সিদ্ধান্ত নেন উনি্নকৃষ্ণান। ১৬ বছর বয়সী মার্কিন কিংবদন্তি গ্র্যান্ডমাস্টার ববি ফিসার সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি দাবা খেলার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই আগ্রহ থেকেই তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে দাবা খেলা শেখেন। এক পর্যায়ে তিনি দাবাকে তার গ্রামের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। শুধু তাই নয়, দাবাকে তিনি তার গ্রামের বড় সমস্যাটি দূরীকরণেও কাজে লাগানোর চিন্তা করেন।
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন গত বছর আগস্ট মাসে গ্রামটিকে ভারতের প্রথম 'দাবা গ্রাম' বলে ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির কিংবদন্তি দাবাড়ূ বিশ্বনাথ আনন্দ গ্রামের এই অর্জনে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এদিকে দাবা প্রশিক্ষক উনি্নকৃষ্ণান গ্রামে একটি রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছেন। এখানে ৮ থেকে ৮০ বছর বয়সী সবার জন্যই সব সময় দাবা খেলার দুয়ার খোলা রয়েছে। গ্রামটির এই দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ নিয়ে 'আগস্ট ক্লাব' নামে একটি মুভি তৈরি হচ্ছে।
Post a Comment