কাউকে না জানিয়েই হাজারো দরিদ্র রোগীর চিকিৎসার খরচ বহন করেন তিনি!

Odd বাংলা ডেস্ক: বয়স তার ৪০ ছুঁই ছুঁই। পোশাক আষাকে সর্বদা কেতাদুরস্ত ভাব ফুটে থাকে। কালো রঙের আকর্ষণীয় এক মারসিডিজ গাড়িতে চলাফেরা করেন তিনি। পেশায় তিনি একজন ফিন্যানশিয়াল কন্সালটেন্ট। সামনে থেকে তাকে দেখে সবাই ভাববেন তিনি হয়তো এই পৃথিবীর আর দশটা ধনকুবেরের মতো। যারা কেবলই নিজের পাহাড়সম সম্পদকে আকাশসম করার আশায় ব্যস্ত। বলছি এক উদরমনা মানুষের কথা। 

নাইজেরিয়ান এই নাগরিকের নাম জিল আকারাওয়াই। তবে তিনি মোটেই আর দশটা বিত্তশালী মানুষের মতো নন। সে যেন আকাশ থেকে নেমে আসা এক স্বর্গীয় দূত! তাকে এক বিত্তশালী দরবেশ বললেও কিন্তু ভুল বলা হবে না। নিজের আয়ের একটা বড় অংশ জিল ব্যয় করেন নাইজেরিয়ার হাসপাতালগুলোতে ঘুরে ঘুরে, অর্থাভাবে যাদের চিকিৎসা হচ্ছে না তাদের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে। আফ্রিকা মহাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য দেশ নাইজেরিয়া। অনগ্রসর এই মহাদেশের অন্যান্য সাধারণ দেশগুলোর তুলনায় নাইজেরিয়ার অর্থনীতিও কিছুটা সমৃদ্ধ। এ কারণে দেশটিতে চিকিৎসা সেবার খরচটা বেশ চড়া। দেশটির হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিয়ে তাদের বিল পুরোপুরি শোধ না করতে পারলে রোগীদের কপালে থাকে অনেক ভোগান্তি। 

 মেডিকেল বিল সম্পূর্ণ পরিশোধ না করে সেদেশের অধিকাংশ হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়া যায় না। এ কারণে দরিদ্র নাইজেরিয়ানরা অহরহই বিপাকে পড়েন। মেডিকেল ফিস জমা পড়ে থাকায় স্বজনের মৃতদেহ দিনের পর দিন পড়ে থাকে হাসপাতালের মর্গে। জিলের সঙ্গে কিছু স্বেচ্ছাসেবী কর্মী কাজ করেন, যাদের দায়িত্ব হলো হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে আটকে থাকা অভাবী রোগীদের একটি তালিকা তৈরি করা। এরপর জিল নিজেই হাসপাতালের সেই ওয়ার্ডগুলোতে ছুটে যান, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের অনেকেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার ইচ্ছা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করতে না পেরে দীর্ঘদিন যাবত সেখানেই পড়ে থাকেন। কিছু কিছু নাইজেরিয়ান হাসপাতালে কিস্তিতে চিকিৎসার খরচ প্রদানের সুযোগ রয়েছে। 

কিন্তু সমাজের হতদরিদ্র শ্রেণির লোকদের জন্য কিস্তির সেই অঙ্কটাও অনেক বড় হয়ে দাড়ায়। জিল যেসব মানুষের সঙ্গে দেখা করেন তাদের অনেকেই চিকিৎসা খরচ জোগানোর আশা ছেড়ে দিয়ে হয়তো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন, কোনো না কোনো উপায়ে যদি ঈশ্বর তাদের মুক্তি দেন হাসপাতাল থেকে! জিলের সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর কথোপকথন হুবহু তুলে ধরেছে বিবিসি। স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে নিয়ে যান এক অসুস্থ রোগীর কাছে, যার পুরো উরু কয়েক প্রস্থ ব্যান্ডেজ দিয়ে বাঁধা। জিল তার দিকে খানিকটা ঝুঁকে তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার সঙ্গে কি ঘটেছে? 




হতভাগ্য রোগীটি পেশায় নাপিত, তিনি উত্তর দেন - দূর থেকে কেউ একজন তাকে গুলি করেছে, তিনি দেখতে পাননি সেটা কে ছিল! কাহিনী শুনে জিল তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তো আপনি কীভাবে আপনার মেডিকেল বিলের চাপ সামলাচ্ছেন? শূন্য দৃষ্টিতে রোগীটি উত্তর দেন, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি। এভাবেই চলে জিলের সঙ্গে রোগীদের কথোপকথন। রোগীরা কেউই জানেন না জিলের আসল পরিচয়, জিলও আগ বাড়িয়ে তার পরিচয় দেন না কখনোই। রোগীদেরর সঙ্গে কথা বলে জিল চলে আসেন কর্তব্যরত নার্সদের কাছে। অতঃপর তিনি রোগীদের অভাবী জীবনের সত্যতা যাচাই করেন। তারপর অভাবগ্রস্থ রোগীদের যত বকেয়া মেডিকেল বিল আছে তা পরিশোধ করে দিয়ে চলে যান। রোগীরা তখনও জানেন না, ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা কবুল করেছেন, সেদিন বিকেলেই তারা বাড়ি যেতে পারবেন। জিল যাদের এভাবে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেন, পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। এমনকি তিনি কোনোদিন ধন্যবাদও পেতে চান না। তবে তার মনেও একটা গোপন বাসনা থাকে, আজীবন হয়তো সেই অসহায় মানুষগুলো গল্প করে বেড়াবে। কীভাবে এক স্বর্গীয় দূত এসে একদিন তাদের রক্ষা করেছিল! এ কারণেই জিল তার এই কর্মকাণ্ডের নাম দিয়েছেন, ‘দ্য অ্যাঞ্জেল প্রোজেক্ট’। তাইতো তিনি নির্দ্বিধায় বলেন, ‘বি দ্য অ্যাঞ্জেল ইউ হোপ টু মিট!’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.