ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিগ্রহটি আসল নয়! আসল বিগ্রহটি দেশভাগের সময় আনা হয় কলকাতায়!
Odd বাংলা ডেস্কঃ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নারায়ণপুরে অবস্থিত ঢাকেশ্বরী মন্দির। একান্নটি শক্তিপীঠের অন্যতম হল এই ঢাকেশ্বরী কালী। আপনাদের জন্য রইল ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কিছু না-জানা গল্প।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের স্থাপনা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। প্রচলিত রয়েছে, সেন বংশের মহারাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু অপরদিকে এও বলা হয় যে, সেন বংশের রাজত্বকালে বাড়ি তৈরিতে বালি-চুনের গাঁথনি ব্যবহারের প্রচলন ছিল না। তাই মন্দিরটি বল্লাল সেনের আমলে তৈরি নয় বলেও মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের গঠনকার্য এবং স্থাপত্যে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পৌরাণিক মত অনুসারে, সতীর দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তাঁর একান্নটি খণ্ডের মধ্যে তাঁর কিরিটের ডাক তথা উজ্জ্বল গহনার অংশ এই স্থানে পড়েছিল বলে একটিকে উপপীঠ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর সেই ডাক থেকেই 'ঢাকেশ্বরী' নামের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যে বিগ্রহটি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তা কিন্তু আসল বিগ্রহ নয়। জানলে অবাক হবেন, এই মন্দিরের আসল বিগ্রহটি রয়েছে কলকাতার দুর্গাচারণ স্ট্রিটের শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে। দেশ ভাগ হওয়ার সময়েই এটিকে বাংলাদেশ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। কারণ দেশ ভাগের পর দাঙ্গার জেরে দেবীর মন্দিরে আক্রমণ হতে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মাতার মুল বিগ্রহটি গোপনে কলকাতায় নিয়ে আসেন হরিহর চক্রবর্তী এবং রাজেন্দ্রকিশোর তিওয়ারি মতান্তরে প্রহ্লাদকিশোর তিওয়ারি নামে দুই ব্যক্তি। কলকাতায় বিগ্রহটি আনার পর প্রথম দুই বছর ব্যবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরীর বাড়িতে বিগ্রহটি পুজো করা হয়।
পরবর্তীকালে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী ঢাকার ওই অঞ্চলে দেবীর মন্দির নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেবীর নিত্য আরাধনার জন্য কিছু সম্পত্তি দান করেন। মূল দেবী বিগ্রহের দশটি হাত। সেখানে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী রূপে অবস্থান করছেন। সঙ্গে রয়েছে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। বাহন সিংহের পিঠে দাঁড়িয়ে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছেন। বর্তমানে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যে বিগ্রহটি বিগ্রহটি রয়েছে, তা হল মূল বিগ্রহটির প্রতিরূপ। প্রতিবছর দুর্গা পুজোর দিনে ধুমধাম করে পুজো করা হয় এখানে।
ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রবেশ পথে রয়েছে একটি সিংহ দুয়ার। মূল মন্দিরটি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি মন্দিরের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। হরয়েছে শিব মন্দির এবং নাটমন্দির-সহ আরও বেশ কয়েকটি ইমারত যার মধ্যে রয়েছে পান্থশালাও। আজও প্রতি বছর ধুমধাম করে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় এই মন্দিরে।
Post a Comment