কোনও উৎসবে সামনে রেখে নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য প্রথম ওড়ানো হয়েছিল ফানুস, জানুন আকাশ লন্ঠনের ইতিহাস


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: ফানুস ওড়ানো আজকালকার দিনে একটা চল হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত দীপাবলির রাতে শব্দ বাজি ফাটানো বা আতশবাজি পোড়ানোর থেকে ফানুস ওড়াতেই পছন্দ করেন অনেকে। আকাশ লন্ঠন বা ফানুস হল কাগজের তৈরি একটা এয়ারবেলুন, যার নীচের দিতে সরু তারের একটা কাঠামো থাকে, যেখানে একটি ছোট্ট মশাল থাকে, যার সাহায্যে ফানুস খুব সহজেই আকাশে উড়ে যায়। ফানুসের মধ্যে থাকা মশাল একটা গরম বাতাস তৈরি করে যা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে খুব সহজেই উড়ে যায়।  

কিন্তু জানেন কি, কোন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই ফানুস ওড়ানোর চল শুরু হয়েছিল? মূলত এশিয়া মহাদেশেই এই ফানুস ওড়ানোর চল শুরু হয়েছিল। ইতিহাসবিদদের কথায়, খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সেনাবাহিনীর মধ্যে সংকেত আদান-প্রদানের জন্য চিনে প্রথম এই ফানুস ওড়ানোর চল শুরু হয়। অন্যদিকে পূরাণ বলছে, সামরিক কৌশলবিদ ঝুগে লিয়াং (কংমিং নামে পরিচিত) প্রথম এই ফানুস আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। শত্রুরা যখন তাঁকে ঘিরে ফেলেছিল তখন ফানুসের মধ্যে সাহায্য প্রার্থনা করে তিনি একটি বার্তা লিখে তা আকাশে উড়িয়েছিলেন। এই কারণে চিনে এটি কংমিং লন্ঠন নামেও পরিচিত। আর একটি প্রচলিত বিষয় হল, এগুলিকে চিনে কংমিং লন্ঠন বলা হয় তার কারণ হল এগুলি দেখতে অনেকটা টুপির মতো। যে ধরণের টুপি ঝুগে লিয়াং পরতেন, তাঁর অনেক ছবিতে তাঁকে এই ধরণের টুপি পরতে দেখা গিয়েছে। 


তবে বর্তমানে এই ধরণের ফানুস সকলের কাছে বিশেষত শিশুদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। চিনে ল্যান্ট্রেন ফেস্টিভ্যাল, মিড অটম ফেস্টিভ্যালে এই আকাশ লন্ঠন ওড়ানোর প্রচলন রয়েছে। শুধু তাই নয়, তাইওয়ানে তাঁদের নিজস্ব ল্যান্ট্রেন ফেস্টিভ্যাল রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে কয়েকশো ফানুস আকাশে ওড়ানো হয়। ফানুস উড়িয়ে তাঁরা সকলে নিজের মনের ইচ্ছা জানায়। পাশপাশি থাইল্যান্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ইয়ে পিং, এই উৎসবে সকল মানুষ আকাশে ফানুস ওড়ান, কারণ তাঁরা মনে করেন যে এটি তাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। পাশাপাশি তাঁরা এও বিশ্বাস করে তাঁদের জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট এবং সমস্যাগুলি এই ফানুসের মতোই তাদের থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। ব্রাজিলে আবার শীতকালীন ছুটির মেজাজ উদযাপন করতে আকাশে ফানুস ওড়ানোর চল রয়েছে। এমনকি সেখানে ১-২ মিটার ব্যাসযুক্ত ফানুসও ওড়ানো হয়ে থাকে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.