এক দুপুরেই হঠাৎ উধাও এই শহরের মানুষ


Odd বাংলা ডেস্ক: ইতালির পাম্পেই নগরী কথা তো জানেনই। ব্যভিচার, সমকামিতা ও পতিতাবৃত্তির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম অভিজাত জনপদগুলোর একটি ছিল এই পম্পেই নগরী। সে সময় প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি ছিল নগরটি। এটি ছিল দুই হাজার বছরের পুরনো একটি অভিজাত শহর।  

তবে আজ বলছি ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সের কথা। অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সেরও একটি নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। এই দেশ শিল্প এনেছে, সৃষ্টি এনেছে, বিপ্লব এনেছে। সেই প্রাচীন সময় থেকেই একের পর এক ইতিহাসের সাক্ষী এই শহর। শুধুই কি ইতিহাস! সুন্দর, শিল্পের এই শহরে বিশ্বের নানা জায়গা থেকেও পর্যটকরা আসেন।

ঠিক সেরকমই একটি শহরেও লোক সমাগম হয় প্রতি বছর। নাম অঁরাদার-সুর-গ্লান শহর। কিন্তু অন্যান্য শহরের মতো ঝাঁ-চকচকে চেহারা তার নয়। বরং শহরে ঢুকলেই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে অনেকগুলো লম্বা লম্বা কংক্রিটের মতো টুকরো। এখানে একসময় মানুষের বাড়ি ছিল। ছিল সন্তান, সংসার। অঁরাদার শহর আজ সেই ভৌতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  


এক দুপুরে হঠাৎ করেই এখানকার সবাই উধাও হয়ে যায়। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। হিটলারের হুংকার আর নাৎজি সেনাদের আক্রমণ ক্রমশ বেড়েই চলছে। একসময় ফ্রান্সেও নেমে এল সেই আঘাত। হিটলারের আদেশে নাৎসিরা যেখানেই যাকে পাচ্ছে সবাইকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রাখা হচ্ছে যুদ্ধবন্দি করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নয়তো সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলছে। এর বাইরে আর কোনো রাস্তা নেই। বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে নাৎজি বাহিনী যখন একটু একটু করে পেছনে সরছে, তখন তাদের চোখ পড়ল ফ্রান্সের এই নির্জন জনবসতির দিকে। ঠিক কেন অঁরাদারই জার্মান নাৎজিদের লক্ষ্য হল, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি কোনোদিন।

১৯৪৪ সালের জুন মাসের ১০ তারিখ, দুপুরবেলা। নিয়তি যেন এই দিনটিকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন অঁরাদারের জন্য। শহরের বাইরেও কেউ ছিলেন না। সর্বত্র নাৎজিদের কড়া নজরদারি। এমন সময় সেনা কর্তাদের নির্দেশে শহরের সমস্ত নাগরিককে বাইরে নিয়ে আসা হয়। নারী আর শিশুদের আলাদা করে গির্জায় বন্ধ করে পাহারা দিয়ে রাখা হয়। আর পুরুষদের জড়ো করা হয় শস্যাগারে।

এরপর শুধু মেশিনগানের ঠা ঠা শব্দ মেশিনগানের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় তাদের দেহ। কিছুক্ষণ আগেও তারা হাসছিলেন। প্রতিদিনের মতোই নিজেদের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এমন পরিণতি যে ঘটতে পারে সেটা ভাবেনইনি! শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হননি সেনারা। মৃতদেহগুলোয় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন তখনও জীবিত ছিলেন। 

পুরুষদের তো শেষ করা গেল, এবার বাকিদের পালা। অন্য এক রাস্তা বেছে নিল নাৎজিরা। একের পর এক গ্রেনেড বর্ষণ করে চার্চের ভেতরে বাইরে সব জায়গায় আগুন লাগিয়ে দিল। এদিকে ভেতরে আটকে পড়া নারী আর শিশুরা চেষ্টা করেও বেরোতে পারছে না। চার্চের দেয়ালগুলোও ভাঙছে, সেইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। যারাই জানলা ভেঙে বা ফাঁক খুঁজে পালানোর চেষ্টা করেছে, সঙ্গে সঙ্গে গুলি! দেখতে দেখতে সব শেষ হয়ে গেল চোখের সামনে। যাওয়ার আগে পুরো অঁরাদার শহরে আগুন লাগিয়ে গেল নাৎজি বাহিনী। শেষ হল ইউরোপের যুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস গণহত্যা। পরে নাৎজি সেনারা রীতিমতো উৎসব করে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য। পৈশাচিক কাজের সফলতা উদযাপনে মত্ত হয়ে ওঠে তারা।

তবে সেই ধ্বংস স্তূপের মধ্যে মাত্র ছয়জন বেঁচে বেরিয়ে এসেছিলেন। পরে তাদের মুখ থেকেই বিস্তারিতভাবে জানা যায় এই গণহত্যার ঘটনা। তা না হলে হয়তো সবার অজানাই থেকে যেত সেদিনের নারকীয় হত্যালীলার কাহিনী। আজও অঁরাদার-স্যুর-গ্লাঁ শহরে গেলে দেখা যাবে সেই বীভৎসতার চিহ্ন। গায়ে পোড়া ক্ষত মেখে আজও শুধু তাকিয়েই থাকে নিস্তব্ধ এই শহর।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.