এটা পড়ুন, জীবনে আর মুরগি খাওয়ার সাহস করবেন না!
Odd বাংলা ডেস্ক: মাংসের রেসিপির অভাব নেই। যখন যতবারই খাওয়া হোক না কেন, মুরগির অনন্য স্বাদ আমাদের মুখে লেগে থাকে। কিন্তু মুরগির স্বাদ পেতে জীবন যদি ঝুঁকির মুখে পড়ে, তাহলে এ নিয়ে ভাবাটা জরুরি।
এখানে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক মারিন ম্যাককেনা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুরগির বিষয় খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। ব্রয়লার মুরগি সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন যে, যা জানার পর আপনি হয়তো আর কোনোদিন মুরগি খাওয়ার সাহস করবেন না। তার প্রতিবেদনের মূল অংশ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
আমেরিকার জর্জিয়াকে বলা হয় পোল্ট্রি শিল্পের রাজধানী। মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ওই জর্জিয়াতেই। প্রতিবছর কেবল জর্জিয়া থেকে ১৪০ কোটি মুরগি মানুষের পেটে যায়।
কেবল আমেরিকাতেই বছরে ৯০০ কোটি মুরগি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। চীন বা ব্রাজিলও এর ব্যতিক্রম নয়। এশিয়াতেও বিশাল পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি বিকাশ লাভ করেছে।
আপনি হয়তো বাজারে গিয়ে পরিপুষ্ট দেখে একটা মুরগি কিনে বাড়ি ফিরলেন। ওটা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা আর সয় না। কিন্তু আপনি জানেন না, ওটাকে বড় করে তোলার পেছনে কী কী করেছেন খামারিরা।
ম্যাককেনা লিখেছেন, আমার বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরেই সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। মার্কিন মুলুকের এই ফেডারেল এজেন্সি গোটা বিশ্বে মুরগির রোগ ছড়ানোর বিষয়টি তাদের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে নজরদারি করে।
এই গোয়েন্দাদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতে শুরু করেন সাংবাদিক। আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকায় কর্মরত মহামারী রোগ বিশেষজ্ঞ, মুরগির চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ করেছেন তিনি। যেসব তথ্য মিলেছে তাতে চমকে না উঠে পারা যায় না, এমনটাই বলছেন ম্যাককেইন। মুরগি পালনের পদ্ধতি এবং মহামারী রোগের বিষয়টি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্রয়লার মুরগি খেয়েছেন। কিন্তু আমেরিকায় মুরগির মাংসের স্বাদটাই আলাদা। এর পেছন মুরগি পালনের পদ্ধতিগত ভিন্নতা রয়েছে।
সেটা যাই হোক না কেন, ব্রয়লারের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যুগ যুগ ধরে একটি বিষয় মেনে চলা হচ্ছে। তা হলো- মুরগিকে বিশেষ খাবার প্রদান এবং নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ দেওয়া। প্রায় প্রতিদিনই তাদের অ্যান্টিবায়োটিক গিলতে হয়। শুধু মুরগি নয়, সব ধরনের মাংসের বাণিজ্যিক উৎপাদন দখল করেছে নানা ধরনের ওষুধ। পৃথিবীর নানা প্রান্তে এই অ্যান্টিবায়োটিক পৌঁছে যায় খামারিদের কাছে। বছরে ৬৩ হাজার ১৫১ টন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় ওদের দেহে।
বাজারে গেলেই খাঁচায় বন্দি নাদুস-নুদুস ব্রয়লারগুলোকে দেখা যায়। এদের স্বাস্থ্য দারুণ ভালো। দেখলেই মনে হয়, মাংসল দেহটা বেশ মজার হবে। তাদের দেহটাও অনেক কোমল। তবে এই কোমলতা মূলত অ্যান্টিবায়োটিকে আসে না। এর পেছনে কাজ করে বিশেষ ধরনের শক্তিশালী প্রোটিন। খাদ্যের এই বিশেষায়িত উপাদান পাখিগুলোকে অতি অল্প সময়ে ভারী দেহের অধিকারী করে দেয়। ওদের চলাফেরাও ধীর হয়ে আসে। পেশিগুলো হয় মাংসল।
ব্রয়লার ব্যবসায়ীরা অতি উৎসাহে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে শুরু করেন। খাওয়ানো হয় প্রোটিন। এতে করে তাদের দেহের মাংসও স্বাদের হয়ে ওঠে। তা ছাড়া রোগও তেমন দেখা দেয় না। ১৯৭১ সালের দিকে জর্জিয়ার এক ইতিহাসবিদ লিখেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের এই আবিষ্কারের প্রয়োগ ঘটেছে মুরগির মাধ্যমে। এটাকে আমরা বাণিজ্যিক কৃষি বলে ডাকতে চাই।
উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রয়লারের দামও ব্যাপক হারে কমে আসে। ফলে ক্রেতা বাড়তে থাকে। যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের ঘরে সহজে পৌঁছে যায় মুরগি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্যঘটিত রোগে ভোগে এসব মুরগি। আর ব্যাপক হারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণে এমন রোগের আগমন ঘটতে পারে যা অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা রুখে দেবে।
ওষুধের কার্যকারিতা রুখে দেওয়া সংক্রমণ ঘটা অশনিসংকেত দেয়। মাংসের মাধ্যমে ওষুধের ক্রিয়া ছড়াচ্ছে মানুষের দেহে। ফলে ধীরে ধীরে এমন সংক্রমণ আমাদের দেহেও ছড়াতে পারে যা রুখতে অক্ষম ওষুধ। ইতিমধ্যে এর তীব্র প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে শুরু করেছে মানুষ। মারাত্মক শক্তিশালী সব ব্যাকটেরিয়ার হামলা ঘটছে। অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হচ্ছে না। প্রতিবছর শুধু এই কারণেই বিশ্বজুড়ে ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এর মধ্যে আমেরিকাতে ২৩ হাজার, ইউরোপে ২৫ হাজার এবং ৬৩ হাজারেরও বেশি সংখ্যাক শিশুমৃত্যু ঘটেছে ভারতে। এ ছাড়াও ওষুধকে পরাস্ত করা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে অসংখ্য মানুষ অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ঠেকিয়ে দেওয়া ব্যাকটেরিয়ার আগমন প্রতিবছর ১ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে। এই বিশ্ব ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতিকর সম্মুখীন হবে।
জীবাণুর বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে মানুষের অ্যান্টিবায়োটিকই ভরসা। এটি যতদিন কাজ করতে সক্ষম, ততদিন ভালো থাকবে মানুষ। এমনিতেও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খুব বেশিদিন তাদের জাদু দেখাতে পারেনি। ১৯৪০-এর দশকে বিখ্যাত পেনিসিলিন আসে। কিন্তু ১৯৫০ দশকেই তাকে পরাজিত করে জীবাণু। টেট্রাসাইক্লিন ১৯৪৮-এ আসার পর ১৯৫০ সালেই তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। একই ঘটনা ঘটেছে অ্যারিথ্রোমাইসিন বা মেথিসিলিনের ভাগ্যে।
মুরগি আমাদের প্রায় প্রতিদিনের খাবারের পাতে স্থান করে নিয়েছে। গোটা বিশ্বে প্রতিদিন লাখ লাখ ব্রয়লার সাবাড় করা হচ্ছে। আর এসব মুরগি খাঁচায় থাকাকালীন প্রায় প্রতিদিনই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে চলেছে। তাই পোল্ট্রি বাণিজ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ বন্ধের বিষয়ে এখনই মনোযোগী হতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু মুরগিই নয়, গরু-ছাগলসহ অন্যান্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাংসের ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া জরুরি।
Post a Comment