রানি রাসমণির স্বপ্নের ভবতারিণী মন্দিরে আজও মায়ের আরাধনা হয় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের দেখানো পথ ধরেই
Odd বাংলা ডেস্ক: দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির কোনও সতীপিঠ নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মন্দির পশ্চিম বাংলার সকল মানুষের কাছে ভীষণ কাছের একটি জায়গা। প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে এখানে জাঁকজমক করে পূজিতা হন মা ভবতারিণী।
জানবাজারের জমিদারবাড়ির রানিমা তথা রানি রাসমণি দাসী চলেছিলেন কাশী যাত্রায়। বজরাতেই তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন, যেখানে মা তাঁকে বলেন হুগলি নদীর তীরে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে, সেখানে তিনি মা ভবতারিণী রূপে নিত্যপুজো গ্রহণ করবেন। এরপরই গঙ্গার তীরে শুরু হয় জমির অনুসন্ধান। সাল ১৮৪৭, শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। শেষ হয় ১৮৫৫ সালে। সেই সময়ে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় দক্ষিণেশ্বর মন্দির। এরপর পুরোহিত রামকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ছোট ভাই গদাধর (রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব) এই মন্দিরে দেবীর নিত্যপুজোর দায়িত্ব নেন। এরপর রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হলে মন্দিরের যাবতীয় দায়ভার এসে পড়ে গদাধরের ওপর। প্রায় ৩০ বছর মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রামকৃষ্ণ। পরবর্তীকালে এই মন্দিরই হয়ে উঠেছিল শ্রী শ্রী ঠাকুরের সাধনাস্থল। তাঁর কারণেই দক্ষিণেশ্বর মন্দির পরিণত হয়েছিল পুণ্যভূমিতে।
প্রসঙ্গত, মন্দিরটি বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন স্থাপত্যের আকারে নির্মিত। তাই মন্দিরটিকে নবরত্ন মন্দির হিসাবেই অভিহিত করা হয়। ভবতারিণীর মন্দির ছাড়াও সেখানে রয়েছে একটি নাটমন্দির, শ্রী শ্রী রাধাকান্ত মন্দির (রাধা-কৃষ্ণ) এবং ১২টি আটচালা ধাঁচের শিবমন্দির। শ্রী শ্রী ঠাকুরের দেখানো পথেই সেখানে প্রতিবছর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তিথির পাশপাশি দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে দেবী ভবতারিণীর আরাধনা করা হয়। আজও সেই নিয়মের অন্যথা হয় না।
তাই প্রতি বছর দিপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে চোখে পড়ার মতো। রামকৃষ্ণ পরমহংসের দেখানে পথেই দেবীর পুজো করা হয়। দেবীকে সাজানো হয় রঙীন বেনারসিতে। ধূপ-দীপের আরাধনার পাশাপাশি দক্ষিণেশ্বরের সন্ধ্যারতি দেখতেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ভক্তকূল। গোটা পুজার্চনা এখন তুলে ধরা হয় এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে।
মা ভবতারিণীর ভোগেও থাকে অভিনবত্ব। ঘি-ভাত, পাঁচরকমের ভাজা, চাটনি,পায়েসের মাঝে সবথেকে আকর্ষণীয় হল মাছের পদ। প্রায় পাঁচ রকমের মাছের পদ রান্না করে নিবেদন করা হয়ে মাকে। আলোয় আলোয় সেজে ওঠে গোটা মন্দির চত্বর। অগণিত ভক্তের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর। তবে একইসঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় প্রশাসনের তরফে। সবমিলিয়ে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অবদান, রানি রাসমনি দাসীর ভক্তির মহিমা চিরদিন মানুষের প্রাণে বাজবে।
Post a Comment