নৃশংসভাবে বলি দেওয়া হয় এই কুমারীকে, প্রকৃতিই তাকে করেছে মমি


Odd বাংলা ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত বিশাল এক পর্বতমালা আন্দিজ। বহু পার্বত্য অঞ্চল একসঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এই পর্বতমালা গড়ে ওঠার কারণে, এখানে রয়েছে অভাবনীয় সব প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। আজ জানাবো সেই আন্দিজ পর্বতমালার লেডি অব এমপাটো ৫০০ বছর আগের এক ইনকা সুন্দরী সম্পর্কে- ১৯৯০ সালের ঘটনা। দক্ষিণ পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার নেভাডো স্যাবাংক্যায়া আগ্নেয়গিরি হঠাৎ জীবন্ত হয়ে ওঠে। উত্তপ্ত লাভা আর ছাই ছড়িয়ে পড়তে লাগলো আশেপাশের অঞ্চলে। ফলে কাছাকাছি পর্বতচূড়া থেকে জমাট বাঁধা তুষার গলে যেতে থাকে। এদেরই একটির নাম মাউন্ট এমপাটো। এর প্রায় পাঁচ বছর পরের কথা। ৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ সালে নৃতত্ত্ববিদ জোহান রেইনহার্ড এবং তার সহকর্মী মিগুয়েল জেরাটে পেরুর আরেকিপায় অবস্থিত মাউন্ট এমপাটোর ২০ হাজার ৬৩০ ফুট চুড়ায় উঠেন। তাদের লক্ষ্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরিটাকে স্বচক্ষে অবলোকন করা। 

তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বরফে ঢাকা পর্বত চূড়ার দিকে। সেই সময়ে সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচুতে অদ্ভুত কিছু দেখতে পান তারা। নৃ-তত্ত্ববিদ রেইনহার্ড থমকে দাঁড়ালেন। বরফের মধ্যে কয়েকটি উজ্জ্বল পাখির পালকে তাদের দৃষ্টিগোচর হলো। কারণ সেগুলো আর পাঁচটি সাধারণ পাখির পালক মতো দেখতে ছিলো না। সেগুলো ছিলো মাথায় পরা মুকুটের অংশ। যা প্রাচীন ইনকাদের আনুষ্ঠানিক উৎসবের সময় মাথায় পরতো। এই মুকুট তৈরি করা হতো বিশেষ এক প্রকার পাখির পালক আর এক ধরনের ঝিনুকের খোলস দিয়ে। খুব তাড়াতাড়ি আরো অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেলেন তারা। ইনকারা আশেপাশে আরো অনুসন্ধান করতে থাকেন। অল্প সময়ের মধ্যে তারা একটি পাথরের কাঠামোর সামনে উপস্থিত হলেন। প্রফেসর রেইনহার্ড বুঝতে পারলেন, তারা প্রাচীন কোনো ইনকা মন্দির বা অনুষ্ঠান ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছেন। বহু বছর ধরে যা চাঁপা পড়ে ছিলো তুষার স্তরের নিচে। তা আগ্নেয়গিরির উত্তাপে বরফ গলে উন্মুক্ত হয়েছে তাদের সামনে।প্রফেসর রেইনহার্ড আরো কিছু নমুনা পাওয়ার আশায় আরো খোঁজ করলেন। খুঁজতে খুঁজতে তারা পাহাড়ের একটি খাঁজে জমাটবদ্ধ একটি কাপড়ের বান্ডিলের সন্ধান পেলেন। 

সেখানে যেতেই পর্বতারোহী চিৎকার করে উঠলেন! কারণ ততক্ষণে কাপড়ের বান্ডিলের ভেতরে থাকা একটি মৃতদেহ তার নজরে এসেছে। দ্রুততার সঙ্গে মৃতদেহটি উদ্ধার করেন তারা। মৃতদেহটি ছিল একটি মেয়ের। মেয়েটির গায়ের পোষাক-পরিচ্ছদ দেখে তাদের ভ্রু কুচকে গেলো। আলপাকার লোম দিয়ে তৈরি বহুমূল্য পোষাকে সজ্জিত মৃতদেহটিকে পর্যবেক্ষণ করতেই প্রফেসর রেইনহার্ড বুঝতে পারলেন। এক ইনকা কিশোরীর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছে সে। তবে কতদিন আগের তা জানা যায়নি। মেয়েটি মারা গিয়েছিলো আজ থেকে কমপক্ষে ৫০০ বছর পূর্বে, ১৪৪০-৮০ সালের মধ্যে কোনো এক সময়ে। শুধু ওই একটি মৃতদেহ নয়, সেই সঙ্গে আরো দুটি মৃতদেহ আবিষ্কৃত হলো। তিনটি দেহই অদ্ভুতভাবে সংরক্ষিত হয়ে মমিতে রুপান্তরিত হয়েছে! মৃতদেহের সঙ্গেই পাওয়া গেলো নানা রকম জিনিসপত্র। তার মধ্যে একটি হলো মাথায় দেয়ার বিশেষ ধরনের কাপড়ের মুকুট, যাতে রয়েছে পাখির পালকের কারুকার্য। এছাড়া পাওয়া গেলো মাটির তৈজসপত্র আর অনেক মূর্তি। কিসের তৈরি সেগুলো জানেন কি? নিখাদ সোনার! আছে রুপা আর কাপড়ের তৈরি মূর্তিও। তারা বুঝতে পারলেন, এভাবে উন্মুক্ত আবহাওয়ায় ফেলে রাখলে মৃতদেহগুলো সূর্যালোক এবং আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। 

আশেপাশে থাকা মূল্যবান সামগ্রীও চুরি হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া নৃতাত্ত্বিক হিসেবে এমন আকর্ষণীয় ব্যাপার আর হতে পারে না! তাই প্রত্নবস্তু সমেত মৃতদেহগুলোকে তারা পর্বতশিখর থেকে নামিয়ে নিয়ে এলেন। সেগুলোকে তারা পেরুর এরেকুইপাতে অবস্থিত দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব সান্তা মারিয়াতে শীতল রুমে রেখে দিলেন। প্রথম মৃতদেহকে নাম দেয়া হয় দ্য ইনকা লেডি। মাউন্ট এমপাটোতে পাওয়া যায় বলে একে দ্য লেডি অব এমপাটো কিংবা স্প্যানিশে মমি হুয়ানিতাও বলা হয়। ১৯৯৬ সালে মমিগুলোকে আমেরিকায় আনা হয়। সেখানে ইনকা লেডির উপর বিস্তারিত গবেষণা চালানো হয়। বিভিন্ন ধরনের ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হলো। অটোপসি বা ময়নাতদন্তের ফলে যাতে মমিটি ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। তাই কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে গবেষকেরা জানার চেষ্টা করেন। কী রহস্য লুকিয়ে আছে এই ইনকা লেডির মধ্যে?

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.