বেহুলা-লক্ষিন্দরের বাসঘর এখনও সাজানো রয়েছে এখানে!
Odd বাংলা ডেস্ক: আমরা অনেকেই জানি না বেহুলা ও লক্ষিন্দরের বাসর ঘর বাংলাদেশের বগুড়া সদরের গোকুল গ্রামে অবস্থিত।
বগুড়া সদরের উত্তরে মহাস্থান গড় থেকে মাত্র দুই কিঃমিঃ দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত বেহুলা-লক্ষিন্দরের বাসরঘর। এই স্থানকে অনেকে গোকুল মেধ বা লক্ষিন্দরের মেধ বলেও জানে।
বেহুলা ও লক্ষিন্দরের প্রেম কাহিনী সর্বপ্রথম মনসা-মঙ্গল কাব্যে উল্লেখ পাওয়া যায়। বেহুলা ও লক্ষিন্দরের ভালোবাসার গল্প গ্রাম-বাংলার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। বেহুলা ও লখিন্দরের প্রেমগাঁথা অমর এক লোককাহিনী।
ধারনা করা হয় খ্রিস্টাব্দ সপ্তম শতাব্দী থেকে ১ হাজার ২০০ শতাব্দীর মধ্যে এটা নির্মান করা হয়। আনুমানিক ১৭২টি কক্ষ আছে এখানে। বেহুলার বাসর ঘর একটি অত্যান্ত সুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। গবেষকদের মতে, এ মনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এ স্তূপটি বাসর ঘর নয়। এ স্তূপটির পশ্চিমাংশে আছে বাসর ঘরের স্মৃতিচিহ্ন। পূর্বাংশে রয়েছে চৌবাচ্চাসদৃশ একটি স্নান ঘর।
ব্রিটিশরা ১৯৩৪-৩৬ সালের দিকে প্রথম এখানে খনন কাজ চালায়। এরপর এই স্থানটি অখননকৃত অবস্থায়ই থেকে যায়। ফলে এটা যে আসলে কি ছিল তা এখনও অজানা। তবে বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসরঘরের ইতিহাসটাই প্রচলিত হয়ে গেছে।
বেহুলার বা লক্ষিন্দরের বাসরঘর নিয়ে অনেক রূপকথার প্রচলন আছে। চম্পাই নগরে চাঁদ সওদাগর নামে এক ব্যবসায়ী ছিল। মনসাদেবী বরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন চাঁদ সওদাগর যদি মনসা পূজা দেন তাহলে ত্রিলোকে মনসার পূজা প্রচলিত হবে। চাঁদ সওদাগর ছিল মনসা বিদ্বেষী। তাই সে রাজি হোল না। চাঁদ সিংহল বাণিজ্য শেষ করে ফেরার পথে কালিদাহ সাগরে মনসাদেবী ঝড় সৃষ্টি করে। সবগুলো জাহাজ পানিতে তলিয়ে গেলেও প্রাণে বেঁচে যান চাঁদ সওদাগর। ঐ সময়ে চাঁদ সওদাগরের এক পুত্র জন্ম হয় যার নাম লক্ষিন্দর।
কিন্তু গণক ভবিষ্যৎবাণী করেন বাসর ঘরে লক্ষিন্দরকে সাপ কামড় দিবে। লক্ষিন্দর প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বেহুলার সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। তাদের জন্য তৈরি করা হয় লোহার বাসর ঘর। বাসর রাতে অনেক নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও মনসাদেবী সুতার আকার ধারন করে ঘরে প্রবেশ করে লক্ষিন্দরকে দংশন করে।
সে যুগের রীতি ছিল সাপের কামড়ে কেউ মারা গেলে দাহ না করে ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হত। লখিন্দরের সঙ্গে ভাসিয়ে দেওয়া হলো বেহুলাকে। ছয় মাস ধরে জলে ভাসতে ভাসতে এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম গেল। পচন ধরা শুরু হলো লক্ষিন্দরের দেহে।
বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়ে। এক সময় ভেলাটি এসে ঠেকে একটি গ্রামের ঘাটে। সে গ্রামে বাস করতো মনসার পালক মাতা নিতা। নিতা ঘাটে বসে দেখতে লাগলো মনসার কাছে ভক্ত বেহুলার প্রার্থনা। তার মন গলে গেল। অবশেষে নিতা অলৌকিক ক্ষমতাবলে বেহুলা ও মৃত লক্ষিন্দরকে স্বর্গে উপস্থিত করেন।
চোখ খুলে বেহুলা দেখতে পেল মনসা কে। মনসা বলে উঠলেন, তুমি তোমার স্বামীকে ফিরে পাবা। তবে শর্ত হচ্ছে তোমার শশুড় কে আমার পূজারী করতে হবে। বেহুলা উত্তর দিল আমি পারবো মা। সাথে চোখ মেলে তাকায় লক্ষিন্দর। নিতার সাহায্যে আবার মর্ত্যে ফিরে এল বেহুলা। তার শশুড় কে সব ঘটনা খুলে বললো। এরপর চাঁদ সওদাগরের পক্ষে মনসার পূজায় না বলা আর সম্ভব হল না।
বাংলাদেশের ঢাকা শহর থেকে সড়ক পথে খুব সহজেই বগুড়া যাওয়া যায়। বগুড়া শহর থেকে অটোরিকশা ও সিএনজি করে খুব সহজেই বেহুলা-লক্ষিন্দরের বাসরঘর দেখে আসা যায়।
Post a Comment