জাহাজ ভরে পাত্রী আসত বাংলায়, সেজেগুজে প্রস্তুত থাকত সাহেবরা
Odd বাংলা ডেস্ক: বিয়ে নিয়ে সারাবিশ্বেই অনেক রীতিনীতি রয়েছে। তবে পাত্রী বা পাত্র দেখে পছন্দ করা এই ব্যাপারটির চল সবখানেই। এখনকার মতো অনলাইনে পাত্রপাত্রী খোঁজার সুযোগ শত বছর আগে না থাকলেও ছিল বিজ্ঞাপনের মাধ্যম। তারও আগে ছিল ঘটক দিয়ে পাত্র পাত্রী খোঁজা। তবে আজ বলছি বাংলায় রাজত্ব করতে আসা সাহেবদের করুন বিবাহ অভিযানের কথা।
সাহেবরা বাংলায় খুঁটি গাড়তে এসেছিলেন। চেয়েছিলেন লেখাপড়া না জানা, সহজ সরল বাঙালিকে দমিয়ে নিজেদের রাজত্ব গড়ে তুলবেন। তবে ভারতে এসে কোনো দিন তারা যে ব্যাপারে অভ্যস্ত হতে পারেনি তা হলো এখানকার জলবায়ু। এখানকার রক্ত চোষা মশা, মশলাদার খাবার, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার প্রায় সব কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পেরেছিল। তবে শীতের দেশের এই মানুষগুলো গরমটাতে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি নিজেদের। তারপরও দমে যাওয়ার পাত্র নন তারা। শাসন আর শোষণে বাঙালিকে কোণঠাসা করে রেখেছে তারা।
নিজেদের সুবিধার্থে সাহেবি হালচাল শিখিয়েছেন বাঙালিকেও। তবে বিয়ের সময়ই তাদের ঘটত বিপত্তি। বাঙালিদের তো আর বিয়ে করা যায় না। তাই পাত্রী হিসেবে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে জাহাজে করে পাত্রী আসত ভারতে। কলকাতায় গির্জার সামনে লাইন দিয়ে বসে থাকতেন সাহেবরা। চলত অস্থির হয়ে পায়চারি।
গির্জার দিকেই এক এক করে হেঁটে আসছেন মেম সাহেবরা। তারপর আরেক হুড়োহুড়ি। ব্যস্ততা চলছে বিয়ের অনুষ্ঠানের। প্রাচীন কলকাতার সাহেবি বিয়ে। সময়টা তখন ১৮৫৮ সাল। এই শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশদের অধীনে চলে এসেছে দেশ। রাজধানী হিসেবে কলকাতাও নতুন রূপ পাচ্ছে একটু একটু করে। তৈরি হচ্ছে সরকারি কাজের জায়গা, সৌধ এবং অবশ্যই চার্চ। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, সেন্ট জেমস চার্চের মতো বিখ্যাত স্থাপত্যগুলোও রূপ পাচ্ছে। তবে ইংরেজ মানে তো কেবল রাজপুরুষ নয়। তাদের সঙ্গে হাজির হয়েছেন সাধারণ মানুষরাও। নতুন দেশে নতুন চাকরি করে যদি জীবন অতিবাহিত করা যায়। দলে দলে ইংরেজরা ভিড় জমাতে লাগলেন কলকাতায়।
তবে কালো বেটে আর চাষা ভুষা মানুষের দেশে এসে কাজ তো জুটল কিন্তু বিয়ের কন্যা পাওয়া যায় কোথায়। অনেকে অবশ্য বাংলায় ব্রিটিশদের বংশ তৈরি করতে বাঙালি বিয়ে করেছেন। তবে দেশিয় মেয়েদের প্রতি অনেকেরই ছিল অনীহা। যারা করলেন না, তাদের কী অবিবাহিতই থেকে যেতে হবে সারাজীবন? এখানে তো দরকার বিদেশি মেমসাহেবদের। ব্যস, এই শুরু হল পাত্রী যোগাড়ের বন্দোবস্ত।
একেবারে বিলেত থেকে কোনো জাহাজ এলেই খোঁজ পড়ত কোনো অবিবাহিতা মেয়ে আছে কিনা। যদি কোনো অবিবাহিত মেয়ে থাকত, তাহলেই শুরু হয়ে যেত বিয়ের তোড়জোড়! অনেক সময় শুধু বিয়ের জন্যই মেয়েরা জাহাজে করে আসতেন ভারতে। এরপর কলকাতায় পৌঁছলেই, গন্তব্য সেন্ট জন’স চার্চ। সাহেবরাও প্রস্তুত হয়ে যেতেন। আর এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেন্ট জন’স চার্চ। সেখানেই চলত ‘মহাযজ্ঞের’ আয়োজন। তবে অনেক সময় এমনও হয়েছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটির হাত ধরে পাদ্রির কাছে উপস্থিত হতেন সাহেবরা।
প্রায় জোর করে বিয়ে করেই এই অদ্ভুত বিয়ের প্রথা শুরু হয় বাংলায়। রবিবার ছুটির সকালেই লাইন দিয়ে চার্চে হাজির হতেন সাহেবরা। আর পাদ্রিরাও লাইন দিয়ে বিয়ে দিতেন। সেন্ট জন’স চার্চ হয়ে উঠত সেকালের খ্রিস্টান সাহেবদের ‘কালীঘাট’। একবার ইংল্যান্ড থেকে এক নারী এসে কলকাতার এমন অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে সাবধানবাণী করেছিলেন পুরো ইংল্যান্ডজুড়ে। পোস্টার তৈরি করে সবাইকে সাবধান করেছিলেন তিনি। পোস্টারে লেখা ছিল ‘কলকাতা সম্পর্কে হুঁশিয়ার’!তবে এই সাবধানবাণী কতখানি ব্রিটিশ নারীদের বাংলা বিমুখ করেছিল তা জানা যায়নি। হয়তো কৌতূহলের বশেই আরো বেশি করে নারীরা এদেশে এসেছিল।
Post a Comment