হিটলারের অবৈধ সন্তান! জন্ম দিয়েছিলেন একাধিক নারী!

Odd বাংলা ডেস্ক: তরুণ-তরুণীদের মাঝে নাৎসি বাহিনীর মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে যে সংগঠনটি কাজ করত, তার নাম 'হিটলার ইয়ুথ'। এই হিটলার ইয়ুথেরই নারী শাখার নাম ছিলো  জার্মান নারীদের সংগঠন।

বিশুদ্ধ জার্মানদের নিজেদের মাঝে মিলনের মাধ্যমে সোনালী রঙের চুল ও নীল চোখ সম্পন্ন আর্য শিশুদের জন্মহার বাড়ানোই ছিলো সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য। এজন্য বাছাইকৃত বিশুদ্ধ জার্মান নারীরা শয্যাসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতেন যিনি নিজেও তথাকথিত বিশুদ্ধ। এরপর সেই নারীর গর্ভে আসা সন্তানকেও তাই বিশুদ্ধ বলেই মনে করা হতো।  

উল্লেখ্য, নাৎসি জার্মানিতে কালো ইউনিফর্ম পরিহিত হিটলার বাহিনীর সবচেয়ে বড় প্যারামিলিটারি সংগঠন এসএস বাহিনী। ওই প্রোগ্রামে সিলেক্ট হতে তরুণীদের প্রথমেই তাকে একগাদা মেডিকেল টেস্টের ভেতর দিয়ে যেতে হতো। সেই সঙ্গে তার জীবনের অতীত ইতিহাস সম্পর্কেও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালানো হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো প্রার্থীর শরীরে কোনোভাবেই ইহুদিদের রক্ত থাকা চলবে না। এতসব অনুসন্ধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার গন্ডি পার হতে পারলে তখনই কেবল সেই নারী প্রার্থী একদল এসএস অফিসার থেকে তার পছন্দের শয্যাসঙ্গী বেছে নিতে পারবেন।

সে প্রোগ্রামে নির্বাচিত সেই তরুণীদের জন্য সেখানে খেলাধুলা, লাইব্রেরি, মিউজিক রুম, এমনকি সিনেমা হল পর্যন্ত ছিলো। সেখানে তাদের কোনো কাজ করতে হতো না, অনেক চাকরবাকরই ছিলো সেখানে। এভাবে রাজকন্যার মতোই কাটছিলো তাদের দিনগুলো।  

পুরো প্রোগ্রামটি নিয়ন্ত্রণ করতেন একজন উচ্চপদস্থ এসএস ডাক্তার। মেয়েরা সেখানে আসার পরপরই তিনি তাদেরকে ভালোমতো পরীক্ষা করেছিলেন। তাদেরকে জানাতে হয়েছিলো বংশগতভাবে তারা কোনো রোগ পেয়েছে কিনা, তাদের পরিবারে কেউ মাত্রাতিরিক্ত পানাসক্ত কিনা এবং পরিবারে কখনো কোনো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিয়েছে কিনা। তিনি তাদেরকে এটা বলেও সতর্ক করে দেন যে, তাদের গর্ভে আসা সন্তানকে কোনোভাবেই নিজের কাছে রাখা যাবে না। কিছুদিন পরই সেই সন্তানকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হবে। তাকে বড় করা হবে আলাদা পরিচর্যা কেন্দ্রে। তাকে নাৎসি পরিবেশে, নাৎসি আদর্শ শিখিয়ে একজন নাৎসি সদস্য হিসেবেই গড়ে তোলা হবে।

এরপর আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অর্থাৎ সঙ্গী বাছাইয়ের বিষয়টি। প্রাথমিক বিষয়াদি জানানোর পর সেই নারীদের সামনে হাজির করা হতো একদল এসএস অফিসারকে। সুঠাম দেহের অধিকারী, লম্বা সেই অফিসাররা সহজেই নারীদের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সম্পর্ক বিছানা পর্যন্ত গড়ানোর আগে একে অপরকে চিনে নেয়ার ব্যবস্থাও ছিলো। এজন্য তাদেরকে একসাথে খেলাধুলা করা, সিনেমা দেখা, সন্ধ্যায় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে একসাথে গল্পগুজব করার মতো বিষয়ের মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছিলো।

শয্যাসঙ্গী বেছে নেয়ার জন্য দেয়া হয়েছিলো সাতদিন সময়। তাদের বিশেষভাবে বলে দেয়া হয়েছিলো যেন তাদের চুল ও চোখের রঙের সাথে শয্যাসঙ্গীর চুল ও চোখের রঙ সর্বোচ্চ পরিমাণে মিলে যায়। সেই অফিসারদের কারো নামই তাদেরকে জানানো হয় নি। সবই ছিলো কঠোর গোপনীয়তার অংশ।

একসময় সঙ্গী পছন্দ করা হয়ে গেলে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয় তাদের। তখন সেই নারীদের আরো কিছু মেডিকেল টেস্টের ভেতর দিয়ে যাওয়া লাগে। এরপরই একদিন জানিয়ে দেয়া হয় সেদিনই তাদেরকে শয্যাসঙ্গীর সাথে রাত কাটাতে হবে।

মানুষের মাঝে বর্ণপ্রথার বীজ ছড়িয়ে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো ওই প্রোগ্রাম থেকে আনুমানিক ২০,০০০ শিশুর জন্ম হয়েছিলো। ১২ বছর ধরে চলা এ প্রোগ্রামের অধিকাংশ শিশুর জন্মই হয় জার্মানি আর নরওয়েতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের অনেককেই দত্তক নেয়া হয়েছিলো, ধ্বংস করে ফেলা হয় তাদের যাবতীয় জন্মপরিচয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.