বার্ড ফ্লুর ভয়াবহতা ও আপনার সতর্কতা
Odd বাংলা ডেস্ক: পুরো বিশ্ব মহামারি এক ভাইরাসের তাণ্ডবে দিশেহারা। এরই মধ্যে দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন রোগব্যাধি। আমাদের দেশে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা না দিলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে এই সমস্যা। এখন পর্যন্ত ভারতের ৯টি রাজ্য আক্রান্ত হয়েছে বার্ড ফ্লুতে।
এটি খুবই মারাত্মক এক সংক্রমক রোগ। বার্ড ফ্লুতে নির্বিচারে মারা যাচ্ছে কাক, মুরগি, হাঁস, ময়ূর। তবে শুধু পাখিদের জন্য নয়, মানুষের জন্যও বিপজ্জনক বার্ড ফ্লু। এর কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। তাই সামান্য জ্বর-সর্দি হলেও সচেতন থাকুন। কারণ বার্ড ফ্লু হলেও জ্বর-সর্দির মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।
জেনে নিন বার্ড ফ্লু কী
বার্ড ফ্লু একটি ভাইরাল ইনফেকশন, যেটা শুধু পাখিদের মধ্যে নয় অন্যান্য পশু এমনকি মানুষের মধ্যেও হতে পারে। এটি একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগ। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে বার্ড ফ্লু মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে। বার্ড ফ্লুর মধ্যে এইচ৫এন১ সাধারণ ফর্ম। সবচেয়ে বেশি পাখি এই ভাইরাসে মারা যায়, মানুষের শরীরেও দ্রুত ঢুকে পড়তে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্ত পাখিরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজেই চলে যায় বলে রোগটিও দ্রুত ছড়ায়। বার্ড ফ্লু বায়ুবাহিত রোগ হিসেবে বিবেচিত।
১৯৯৭ সালে প্রথম এইচ৫এন১ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল মানব শরীরে। ২০১১ সালে বার্ড ফ্লু-র এইচ৫এন১ ভাইরাস ধরা পড়েছিল। ২০১৩ সালে বার্ড ফ্লু-র নয়া স্ট্রেন এইচ৭এন৯ দেখা দেয় চীনে।
বার্ড ফ্লুর লক্ষণ
> অন্যান্য ফ্লুর মতোই বার্ড ফ্লুতে সংক্রমণের পর রোগীর দেহে প্রাথমিকভাবে জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
> জ্বরের পাশাপাশি শরীর ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, মাথা ব্যথা, মাংসপেশী ব্যথা, বমি, পেট খারাপ- এ ধরনের উপসর্গ থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ খুব বেশি দেখা যায়। মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকতে পারে।
> অনেক সময় ফুসফুসে সংক্রমণ হয়ে মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রচণ্ড কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং এআরডিএস অর্থাৎ অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেসের ঝুঁকি থাকে।
> এর থেকে এনসেফেলাইটিস, হৃদপিণ্ডের সংক্রমণ, মায়োসাইটিস হয়। বার্ড ফ্লুর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ রয়েছে।
মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু যেভাবে ছড়ায়
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আক্রান্ত পাখির মল, নাক, মুখ বা চোখ থেকে নিঃসৃত নোংরা থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস। গবেষকরা বলছেন, বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হাঁস, মুরগির ডিম, মাংস থেকে এই রোগ ছড়ায় না। তবে হাফ বয়েল ডিম, বা আধসিদ্ধ মাংস খেলে বার্ড ফ্লু মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই ভালো করে ডিম সিদ্ধ করে খেতে হবে, মাংস রান্না করলে অবশ্যই ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রান্না করুন।
এটি ভাইরাসজনিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত পাখির ডিম বা মাংস সঠিকভাবে সিদ্ধ করে না খেলে বার্ড ফ্লু হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে অন্য ব্যক্তির মাঝে বার্ড ফ্লু ছড়াতে পারে।
বার্ড ফ্লু শনাক্ত করার উপায়
দ্য সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তরফে, বার্ড ফ্লু চিহ্নিত করতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ/এইচ ৫ টেস্টটির নাম। চার ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে কেউ বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত কিনা। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ/এইচ ৫ টেস্ট ছাড়াও আরও কিছু টেস্ট করাতে পারেন চিকিৎসকরা। সেগুলো হল- অসকালটেশন, হোয়াইট ব্লাড সেল ডিফারেনশিয়াল, বুকের এক্স-রে। এছাড়া হার্ট, কিডনি এবং লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা দেখার জন্য চিকিৎসক আরও কিছু টেস্ট করাতে পারেন।
বার্ড ফ্লু প্রতিরোধের উপায়
> খোলা জায়গায় বাজারহাট করা থেকে বিরত থাকুন।
> স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, হাত পরিষ্কার রাখুন, মাস্ক পরুন।
> যেকোনো ফ্লুর মতোই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার বিকল্প নেই।
> মাস্ক পরার অভ্যাসকে জীবনের অঙ্গ করে নিতে পারলে যেকোনো ফ্লু-র সংক্রমণ প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
> খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ ধুয়ে নেয়ার অভ্যাস করা জরুরি।
> মাংস বা ডিম খুব ভালো করে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। কাঁচা মাংস খুব ভালো করে ধুয়ে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করবেন।
> মাংস ধোয়ার সময় কাছাকাছি যেন কোনো ধরনের খাবার না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।
বার্ড ফ্লুর চিকিৎসা
বার্ড ফ্লুর বেশ কয়েকটি ভাইরাস আছে, তার চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। তবে সব ক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখা দেয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্তের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রথমে রোগীকে সবার থেকে আলাদা রাখতে হবে। যাতে তার থেকে আর কারুর শরীরে না ছড়ায় ভাইরাস।
আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসক তাকে অ্যান্টি-ভাইরাল, প্রয়োজন পড়লে অক্সিজেনও দেয়া হতে পারে। তবে শরীরে বার্ড ফ্লু-র ভাইরাস ঢুকলে দেহ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে। রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়বে আক্রান্তের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা। বার্ড ফ্লু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দেশে। এই অবস্থায় কীভাবে বার্ড ফ্লু-র হাত থেকে বাঁচবেন, সেটা জানা দরকার।
এর ভ্যাকসিন
২০০৭ সালে আমেরিকা একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তবে এই মুহূর্তে আমেরিকায় বার্ড ফ্লু-র প্রকোপ না থাকায় তারা এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে না। তাই কোনো দেশের বাজারে মিলছে না এই ভ্যাকসিন।
Post a Comment