১৯ শতকের রমরমা ব্যবসা নকল দাঁত, চাহিদা মেটাতে চুরি হত মৃতদেহ

Odd বাংলা ডেস্ক: কথায় বলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম নাকি বোঝা যায় না। আসলেই তো দাঁত থাকতে নানান অবহেলা আর অযত্নের কারণে দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় দাঁতের সমস্যা থেকে বাঁচতে দাঁত উঠিয়ে ফেলেন অনেকে। সেই জায়গায় নকল দাঁত লাগিয়ে নেন। এই দাঁত আবার সোনা রুপা দিয়েও তৈরি করা হয়। তবে ট্রেন্ড মানতে ভালো দাঁত উঠিয়ে নকল দাঁত লাগানোর কথা শুনেছেন কি?

ট্রেন্ড বা হালের ফ্যাশন মানতে গিয়ে আমাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস কিংবা আচরনে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে নিজের ভালো দাঁত ফেলে দিয়ে নকল দাঁত লাগানোর ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়িই বটে!  ১৮১৫ সালের দিকে এমনই ঘটনা ঘটত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এছাড়াও ১৯ শতকের দিকে ব্রিটিশরা তাদের ক্যারিবিয়ান উপনিবেশ থেকে নিয়মিত চিনি অধিগ্রহণ করতে থাকে। এর ফলে ব্রিটিশ সমাজে দাঁত ক্ষয়ের সমস্যা বহুগুণে বেড়ে যায়। এই কারণে নকল দাঁতের চাহিদাও হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায় । অবশ্য চিনি ব্যবহার এবং নকল দাঁতের চাহিদা এই দুটি বিষয়ই উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

দাঁতের চাহিদা মেটাতে চুরি করা হত মৃতদের দাঁত। দিনে দুপুরে ডাকাতির মতোই ছিল ব্যাপারটা। সবার সামনেই যে যেভাবে পারত বিভিন্ন কবরস্থান কিংবা সমাধিস্থল থেকে মৃতদেহের দাঁত খুলে আন্ত। এরপর সেগুলোকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিস্থাপন করা হয় জীবিত মানুষদের মুখে। বর্তমান যুগে নকল দাঁত তৈরি হয় মূলত অ্যাক্রিলিক রেসিন প্লাস্টিক ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেটাল দিয়ে বয়স্ক মানুষদের জন্য বা দাঁতের সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য নকল দাঁত অপরিহার্য।

আর সে যুগে নকল দাঁতের চাহিদা মেটানো হয় এভাবেই। এটি একেবারে রমরমা ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ব্রিটিশ ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানানো হয় - ব্রিটেনে সেই সময় আলাদা করে দাঁতের চিকিৎসক বলে কিছু ছিল না। যার ইচ্ছা সেই দাঁতের চিকিৎসক হয়ে বসতো। নকল দাঁত সেই আমলে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হত। 


তবে মূলত যে দুটি উপাদান ব্যবহৃত হত , তা ছিল- হাতির দাঁত এবংপোর্সেলিন। কিন্তু সবচেয়ে ভালো নকল দাঁত তৈরি করা যেত মানুষের আসল দাঁত থেকে। স্বাভাবিক কারণেই নকল দাঁতের চাহিদা যত বাড়তে থাকল , তত চাহিদা বাড়তে থাকল আসল দাঁতেরও । কিন্তু একটি পুরো সেট আসল দাঁত পেতে হলে এমন কাউকে প্রয়োজন যে তার সমস্ত দাঁত ত্যাগ করবে। তবে এতটা উদার মনের মানুষ বোধ হয় পাওয়া যাবে না কোথাও। তাই বেছে নেয়া হয় মৃত মানুষের তো আর দাঁতের প্রয়োজন নেই। তাই এটিই ভরসা। 

ঠিক সেই সময়েই , ব্রিটিশদের সঙ্গে নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিখ্যাত ওয়াটারলুর যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। ওয়াটারলুর যুদ্ধ ব্রিটিশ দন্ত চিকিৎসকদের মাথায় এক নতুন সম্ভাবনার কথা এনে দেয়। এই যুদ্ধ তাদের দাঁতের এক অদ্ভুত বিশাল উৎস দিয়েছে যার মালিকদের আর দাঁতের প্রয়োজন নেই। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল।

যুদ্ধে যেসব সৈন্যরা মারা গিয়েছে তারাই যোগান দিয়েছে এই দাঁতের। জীবিত সৈন্য থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ এবং সাফাইকর্মীরা সবাই মৃত সৈন্যদের দাঁত টেনে খুলে বাড়ি নিয়ে যেত। চাহিদাও ছিল প্রচুর পরিমাণে। তবে তারা সব দাঁত নিত না। মাড়ির দাঁত নেয়া হত না কারণ তাদের বের করা খুব কঠিন ছিল। তারপর দাঁতগুলো জমা দেয়া হত ব্যবসায়ীদের কাছে। 

ব্রিটেনে এসেএগুলোর নাম হয়ে যেত ওয়াটারলু দাঁত। এই নামে অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি করা হত দাঁতগুলো। কারণ চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। সেই অনুপাতে দাঁত পাওয়া যেত না। আবার শুধু দাঁত পেলেই তো হবে না। সেগুলো মানও ভালো হতে হবে। তবে যারা কিনতেন এবং ব্যবহার করতেন এই নকল দাঁত , তাদের ধারণাই ছিল না এই দাঁত তৈরি হয়েছে ওয়াটারলু যুদ্ধের নিহত সৈনিকদের দাঁত দিয়ে। তারা শুধু জানতেন , এখন থেকে আবার তারা নিশ্চিন্তে সমস্ত খাবার খেতে পারবেন। এটাই তাদের কাছে যথেষ্ট ছিল ।

তারপর থেকে , যে কোনো দাঁত যা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত সৈনিকদের মুখ থেকে খুলে নেয়া হত নকল দাঁত বানানোর জন্য। যার নাম ছিল ওয়াটারলু দাঁত। নামে যেমন একটা ভাব আছে তেমনি দামেও বেশি ছিল ওয়াটারলু দাঁত। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। সেই আমলে কোথাও যুদ্ধ হলেই, স্থানীয় সাফাইকর্মীরা দাঁত তোলার প্লয়ার্স নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যেত। ভাবা যায়, এক সময় মানুষের জীবিকার উৎসই ছিল মৃত মানুষের দাঁত সংগ্রহ করা। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.