বিলাসিতায় মগ্ন রাজার গলায় ২৯৩০টি হিরার কণ্ঠহার, সঙ্গী ৩৩২ জন যৌনদাসী!
Odd বাংলা ডেস্ক: চকচকে বাংলার অতীত কিন্তু এতটা ঝকঝকে ছিল না। একটু পেছন ফিরে তাকালেই দেখতে পাবেন শাসকদের নিষ্ঠুর শোষণ, অত্যাচারে জর্জরিত কিছু মানুষের হাহাকার। তবে বিভিন্ন সময় এমনও কিছু শাসক এসেছেন। যারা ছিলেন এই অভাগা মানুষগুলোর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাচীন ভারতে যৌনতা কতটা গুরুত্ব পেত। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই প্রাচীনত্ব লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কামবাসনাও সমাজ থেকে দূর হয়েছিল। বেশি অতীতে যেতে হবে না। ব্রিটিশ ভারতবর্ষেও বিভিন্ন নেটিভ স্টেটের রাজা বাদশাহদের কীর্তিকলাপ জানলে চমকে উঠতে হয়।
এরকমই একজন ছিলেন পাতিয়ালার মহারাজা ভূপিন্দর সিং। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাতিয়ালার মতি বাগ রাজপ্রাসাদে ১৮৯১ সালে জন্ম তার। ১৯০০ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সাবালক হওয়ার পরে তাকে দেওয়া হয় ব্রিটিশ শাসনের অধীনে পাতিয়ালা স্টেটের পূর্ণ শাসনভার। পাতিয়ালার মহারাজা নামেই পরিচিতি পান। তবে অমিতব্যয়িতা ও ক্রিকেটের প্রতি একনিষ্ঠতাই অধিক পরিচিতি এনে দিয়েছে তাকে। কেননা তিনি ছিলেন প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটার।
কর্মজীবনে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ইতালিতে জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কর্নেলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৮ সালে সম্মানসূচক মেজর জেনারেল ও ১৯৩১ সালে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উপনীত হন। ১৯২৫ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। ভারতীয় প্রিন্সেস চেম্বারে ১৯২৬ থেকে ১৯৩৮ সময়কালে ১০ বছর চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইম্পেরিয়াল ওয়্যার কাউন্সিল এ তিনি ছিলেন ভারতীয় প্রতিনিধি। শিখদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন গোল টেবিল বৈঠকে। রনজি ট্রোফির জন্যেও বহু কিছু করেছেন। নিজে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলে খেলেওছেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাতিয়ালার। তার আমলে পাতিয়ালায় চলত মোনোরেলও।
বিলাসিতায় কার্পণ্য করতেন না কখনো। মহারাজার শখ ছিলও আকাশচুম্বী। পাতিয়ালার মতি বাগ রাজপ্রাসাদে ভুপিন্দর সিংয়ের জন্ম। আইচিসন কলেজে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন। ৯ বছর বয়সে স্বীয় পিতা মহারাজা রাজিন্দর সিংয়ের দেহাবসানের ফলে ৯ নভেম্বর, ১৯০০ তারিখে পাতিয়ালার মহারাজার উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত হন। নাবালক থাকায় আঠারো বছর বয়স হবার পূর্ব-পর্যন্ত রাজপ্রতিনিধিত্বকারী সংঘ তার পরিবর্তে দায়িত্ব পরিচালনা করে। ১ অক্টোবর, ১৯০৯ তারিখে আংশিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। অতঃপর ৩ নভেম্বর, ১৯১০ তারিখে ভারতের ভাইসরয় চতুর্থ আর্ল মিন্টো পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতাভার প্রদান করেন।
তিনিই প্রথম ভারতবাসী যিনি কিনেছিলেন আস্ত এয়ারলাইন্স। মালিক হয়েছিলেন ব্রিটিশ ওই উড়ান সংস্থার। ১৯২৬ সালে এক ট্রাঙ্ক ভর্তি মণি মাণিক্য তিনি পঠিয়েছিলেন ফরাসি অলঙ্কার নির্মাতা কার্তিয়ের-কে। পেটিকায় অন্য দামী পাথরের সঙ্গে ছিল বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম হিরে। সেসব দিয়ে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত পাতিয়ালা নেকলেস। তখনই এর দাম ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলার।
নেকলেসে ওই বড় হিরা সহ ছিল মোট ২৯৩০টি হিরে এবং অন্যান্য দুর্মূল্য পাথর। এই কণ্ঠহার রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যায় তার মৃত্যুর পরে। ব্রিটিশ সরকার দাবি করেছিল, প্রয়াত মহারাজ ভূপিন্দর সিং-এর প্রথমা স্ত্রী সেটা উপহার দিয়েছিলেন রানি মেরিকে। দিল্লি দরবারে‚ রানির প্রথমবার ভারত সফর উপলক্ষে। এই ঐতিহাসিক নেকলেস পরে নানা হাত ঘুরে আংশিক পাওয়া যায়।
গাড়ির বিলাসিতার কথা আপনাকে অবাক করবেই। অগাধ সম্পত্তির মধ্যে ভূপিন্দর সিং-এর গাড়িশালে ছিল ২০টিরও বেশি রোলস রয়েস। ছিল মার্সিডিজ মেব্যাক। সেটা নাকি তাকে উপহার দিয়েছিলেন স্বয়ং হিটলার! ইংল্যান্ডের রাজাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন বলে এই মহারাজা বানিয়েছিলেন ১৪০০ বাসনের ডিনার সেট। সম্পূর্ণ রুপার। কয়েক বছর আগে তা আকাশছোঁয়া দামে তা নীলাম হয়েছে।
শুধু জড় পদার্থ নয়। তীব্র আসক্তি ছিল নারীসঙ্গে। তার ৫ জন ( বা কোথাও দাবি‚ ১০ জন ) স্ত্রীর সন্তান ছিল ৮৮ জন। আর ছিল বিশাল হারেম। সেই অন্তঃপুরে তার যৌনদাসী থাকতেন অন্তত ৩৩২ জন। দিনের যে কোনও সময়ে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে যত জনের সঙ্গে যেভাবে খুশি যৌনতায় মেতে উঠতেন মহারাজ ভূপিন্দর সিং। সেই বর্ণনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে দেওয়ান জারমানি দাসের বই ‘ দ্য মহারাজা ‘এ। যেখানে ভূপিন্দর সিং ছড়াও আছে অন্য ভারতীয় স্টেটের কামাসক্ত রাজা মহারাজাদের যৌন জীবন।
সেই বইয়ে দাবি করা হয়েছে ভূপিন্দর সিং-এর এমন এক মহল ছিল যেখানে প্রবেশ করতে পারতেন শুধু নগ্ন পুরুষ ও নারী। গ্রীষ্মকালীন বিনোদনের সেই প্রাসাদে ছিল সুইমিং পুল। তার চারপাশে বসে থাকতেন নগ্নিকারা। সাঁতারের মাঝে যৌনতায় মেতে উঠতেন কামুক মহারাজা। কখনো চলত জলকেলি। ফূর্তি করতে আসতেন সাহেবরাও। ব্যক্তিগত জীবনে পাঁচবার পাণিগ্রহণ করেছেন ভুপিন্দর সিং। এছাড়াও অগণিত উপ-পত্নী ছিল তার।
সব থেকে ভয়ঙ্কর অধ্যায় হল তান্ত্রিক যৌনতার। সেটা উপভোগ করবার জন্য মহারাজাকে সাহায্য করতেন এক তান্ত্রিক। নাম তার প্রকাশনন্দ ঝা। জারমানি দাসের বইয়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, দেবীমূর্তির সামনে ডাকা হতো ১৫০ থেকে ৪০০ জন মেয়েকে। বেশিরভাগই কুমারী। মহিষবলির পরে গভীর রাত পর্যন্ত পূজা করতেন বাঘছাল পরিহিত প্রকাশ তান্ত্রিক। সেখানে মহারাজার ঘনিষ্ঠ জন ছাড়া আর কারও প্রবেশাধিকার ছিল না।
পূজার পরে দেবীমূর্তির সামনে বিবস্ত্র হতে বলা হতো ওই মেয়েদের। তারপর তান্ত্রিকের নির্দেশে কয়েকজন মদমত্ত যুবক এসে মেয়েদের দেহে সুরা ঢালত। এরপর রাতভর কী চলত সহজেই অনুমেয়। বলি দেয়া পশুরক্তের সঙ্গে মিশে যেত হতভাগ্য তরুণীদের রক্ত। সদ্য কুমারীত্ব হারানো হতভাগ্য তরুণীদের আর্তচিৎকার মিশে যেত অন্ধকারে।
জীবনভর এই উচ্ছৃঙ্খলতার মাশুল দিতে হয়েছিল মহারাজা ভূপিন্দর সিংকে। ১৯৩৮ সালের ২৩ মার্চ তিনি প্রয়াত হন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। পাতিয়ালার সিংহাসনে বসেন তার বড় ছেলে যাদবেন্দ্র সিং। তার আমলেই স্বাধীন ভারতবর্ষের অংশ হয় পাতিয়ালা স্টেট।
Post a Comment