১০৬ বছরে মাত্র একবারই থেমেছিল এই ঘড়ির কাঁটা

Odd বাংলা ডেস্ক: ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা বন্দর ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রধান বন্দর। শুধু ইংরেজরাই নয়, এখানে ওলন্দাজ, পর্তুগীজদের মতো জাতি উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। আর এই হুগলী জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল চুঁচুড়া। এখনো হুগলী জেলায় চুঁচুড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা শহর। দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এই শহরের বুকে আজও বিদ্যমান। 

গঙ্গা দিয়ে বহু পানি গড়িয়ে গেলেও সেসব সাক্ষীকে একেবারেই ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। চুঁচুড়ার দীর্ঘ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাক্ষী হয়ে থেকে এই শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘড়ির মোড়ের ঘড়ি। ১০৬ বছর ধরে থাকা এই ঘড়িটি আজও জানান দেয় সঠিক সময়। জানান দেয় বাকি সমস্ত কিছু অতীত হয়ে গেলেও সে আজও বর্তমান, আজও প্রাসঙ্গিক সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। 

জীবনে একবারই শুধু মাত্র থেমে ছিল সময়ের সঙ্গে দৌড়তে গিয়ে। তবে ওই একবার তারপর আর তার গতিরোধ হয়নি। আজ সেই ঘড়ির ইতিহাসেই একবার সফর করে নেয়া যাক। চুঁচুড়া শহরের কেন্দ্রস্থলে চারমাথা মোড়ে রয়েছে 'এডওয়ার্ডিয়ান ক্লক টাওয়ার' যার স্থানীয় নাম ঘড়ির মোড়। চুঁচুড়ার শতাব্দী প্রাচীন এই স্তম্ভঘড়ি টি ব্রিটিশরা ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের স্মৃতিতে ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে এসে চুঁচুড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড বা অ্যালবার্ট এডওয়ার্ড ছিলেন ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১৯০১ এ রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। ১৯১০ সালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়৷ তার মৃত্যুর পর ১৯১৪ সালে এই সুসজ্জিত স্তম্ভঘড়িটি চুঁচুড়ার চার্চের সামনের চার মাথার মোড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় তার স্মৃতিতে৷ 

স্তম্ভঘড়িটির চারদিকে রয়েছে চারটি ঘড়ি। উপরে রয়েছে একটি ধাতব ঘন্টা। এছাড়া স্তম্ভটির গায়ে একটু নীচে উত্তর মুখে রয়েছে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের অবয়বের একটি ধাতব পার্শ্বমূর্তি। বাকি তিন দিকে রয়েছে তিনটি কারুকার্যখচিত স্মৃতিফলক। সেই সময় এই জায়গার নাম ছিল টাউন গার্ড রোড৷ এখনও খুঁজলে পুরোনো দোকানের ঠিকানা সেই চিহ্নবহন করে৷ 

ঘড়ির চারপাশের রাস্তা দিতে যাতায়াত করতে করতে এক সময় নাম হয়ে যায় ঘড়ির মোড়৷ চার মাথার মোড়ে ৩০ ফুট উঁচু এই ঘড়ি দণ্ডায়মান ১৬ স্কোয়ারফুট জায়গা নিয়ে৷ চারদিকে ঘড়ির চারটে ডায়াল। পিতল ও ইস্পাতের তৈরি যন্ত্রাংশ৷ ৩০ মিনিট পর পর ঘড়িতে ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজে। আর এই ঘণ্টার শব্দ শুনে পথ চলতি মানুষ মিলিয়ে নেয় সময়৷ 

ব্রিটিশ আমলে ঘড়ি মেরামত করত কুক অ্যান্ড কেলভি নামক একটি সংস্থা৷ ১৯৫৪ থেকে কলকাতার বিবি দত্ত কোম্পানি ঘড়ির দেখভালের দায়িত্ব পালন করে ১৯৬৩ পর্যন্ত৷ এরপর চুঁচুড়ার এম এস হোসেন অ্যান্ড কোম্পানি দায়িত্ব পায় ঘড়ির দেখভালের৷ প্রতি চার বছর অন্তর ঘড়ির সার্বিক মেরামতি হয়। আনুমানিক খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। 

প্রাচীন এই ঘড়িতে চারদিন অন্তর দম দিতে হয়। ইতিহাসপ্রাচীন এই ঘড়ি এতবছরে মাত্র একবার থেমে গিয়েছিল। ২০০৯ সালে আয়লার সময় প্রকৃতির ধ্বংসলীলার সম্মুখে তাল রাখতে পারেনি এই ঘড়ি। ইতিহাসের সাক্ষ্য বজায় রেখে ঢং ঢং ঘন্টা বাজিয়ে আজও সময় জানান দেয় ঘড়ি৷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.