বিশ্বের প্রথম মানবদেহ জাদুঘর, হদিস পাবেন পুরো দৈহিক কার্যকলাপের

Odd বাংলা ডেস্ক: মানবদেহের ভেতরটা দেখতে কেমন তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে অনেকের। এই গবেষণায় জীবন পার করে দিয়েছেন বিশ্বের অনেক গবেষক। বই পত্রে সামান্য কিছু ধারণা পেলেও বিস্তারিত জানা জায় না তেমন একটা।

তবে নেদারল্যান্ডসের লেইডেন শহরের রয়েছে মানবদেহ জাদুঘর। ১১৫ ফুট লম্বা এক দীর্ঘ কমলা রঙের মানবমূর্তি। আর তার দেহের লম্বচ্ছেদের অর্ধেক অংশ ঢুকে রয়েছে স্বচ্ছ কাচের তৈরি এগারো তলার একটি বিশাল বাড়ির মধ্যে। বাকি অংশ বাইরে।

নেদারল্যান্ডসের লেইডেন শহরের রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে মানুষের চোখে পড়তে বাধ্য এই স্থাপত্য। তবে এই বিশাল মানব-মূর্তি কোনো সাধারণ স্ট্যাচু নয়। এটি আসল একটি আস্ত মিউজিয়াম। এটি পৃথিবীর প্রথম সংগ্রহশালা, যা উপস্থাপন করে গোটা মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকেই। ২০০৮ সালে নির্মিত হয়েছিল লেইডেনের এই বিস্ময় সংগ্রহশালা। সেদেশের রানি এর উদ্বোধন করেন।   

নাম রাখা হয় কর্পাস মিউজিয়াম। বাস্তবে পুরো মিউজিয়ামটিই একটি মানবদেহ। অবিকল মানবদেহের কায়দায় শুধু দৈহিক তন্ত্রের গঠন নয়, বরং শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলিকেও দেখানো হয়েছে সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে। আর এই দৈহিক কার্যকলাপের পুরো হদিশ পেতে গেলে পা থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত ঘুরে দেখতে হবে কয়েক ঘণ্টা।


এর আগে আমস্টারডামে বডি ওয়ার্ল্ড নামে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল ২০০৪ সালে। তবে তা ছিল মানুষের ডোনেট করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফরমালিনে ভিজিয়ে প্রদর্শন। ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন আয়োজকরা। প্রদর্শনীটির উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ছিল মানব দেহ সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষা দেয়া এবং সচেতন করা। কেননা মানবদেহে কোন রোগ কীভাবে ছড়ায়, কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কীভাবে নষ্ট করে তা দেখানো যাবে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই নিজের শরীর প্রতি যত্নবান হবেন।  

কর্পাস মিউজিয়ামে মানব অবয়বটির পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে হাঁটু পর্যন্ত প্রথমে পৌঁছতে হবে এসক্যালেটরে। সেখানে দেখা মিলবে একটি ক্ষতের। সেই ক্ষতের মধ্যেই প্রবেশ করতে হবে দর্শকদের। তারপর হেঁটে পৌঁছতে হবে কোমর পর্যন্ত। সেখানে পুরুষ এবং নারী উভয় জননতন্ত্রেরই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। সুযোগ মিলবে থ্রিডি চশমায় ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াকেও চাক্ষুষ করার। 

সেখান থেকে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকলে কিডনি, পৌষ্টিকতন্ত্র, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড সবকিছুই ঘুরিয়ে পথ নিয়ে যাবে মুখের মধ্যে। সেখানে রয়েছে শিশুদের জন্য ছোট্ট একটি ‘পার্ক’। জিভের ওপরে লাফালেই স্পিকারে বেজে উঠবে আর্তনাদ। স্ক্রিনে দেখা যাবে বিভিন্ন স্বাদ কোরকের নাম। তাছাড়াও প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিকে নিউরোনের স্পন্দন, বার্তাবহনের প্রক্রিয়াও হয়ে উঠেছে বাস্তবিক। দেয়ালে স্বচ্ছ কাচের তৈরি শিরা, ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্তের প্রবাহ, বিভিন্ন রক্তকণার উপস্থিতিও একেবারেই নজরকাড়া।

পুরো মিউজিয়াম-জুড়ে মানবদেহের উপস্থাপনা এতটাই বাস্তবিক হয়ে উঠেছে যে তা রূপকথাও মনে হতে পারে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এইভাবে মানুষের দেহের যান্ত্রিক রহস্যো উদঘাটন অবাক করে বইকি! তবে জনপ্রিয়তা পেতে এই বিস্ময়-মিউজিয়ামকেও অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘসময়। দর্শকের অভাব সত্ত্বেও চালিয়ে যেতে হয়েছে ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। সেই মেঘ কেটে গিয়ে আজ নেদারল্যান্ডসের কর্পাস মিউজিয়ামই আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.