একটা গানের জন্য ৫ জনের মৃত্যু

Odd বাংলা ডেস্ক: হলিউড—এই শহরকে লস অ্যাঞ্জেলসের মধ্যমণি বলা যায়। রাত কী দিন, সবসময়ই ঝলমলে থাকে হলিউড। যুক্তরাষ্ট্র যখন চাঁদে সফল অবতরণ করলো, তখনই ঘটে গেল নরককাণ্ড! এক গানের জন্য প্রাণ হারালেন পাঁচজন।

১৯৬৯ সালের ৯ আগস্ট। ১০০৫০ সিয়েলো ড্রাইভের নির্জন বাংলোটি ব্যক্তিগত পার্টির জন্য বেশ চমৎকার জায়গা ছিল। কিছুটা বিপজ্জনকও। হলিউড আর বেভারলি হিলসকে ঘিরে রাখা ক্যানিয়নে শব্দের অদ্ভুত খেলা চলে। সেখানকার বাতাস হালকা, আর এদিক সেদিক প্রতিধ্বনিও হয়। বহুদূরে পাথর গড়িয়ে যাওয়ার শব্দকে মনে হবে পাশের ঘরের শব্দ। তাই আশেপাশের বাড়ির শব্দকে বহুদূরের বলেও ভ্রম হয়।

সেমুর তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন রাস্তার উল্টোপাশের বাড়িতে। ভোরের আলো ফোটার আগেই শুনেছিলেন গুলির শব্দ। পাহাড়ে গড়িয়ে পড়া পাথরের আওয়াজ ভেবে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের বাড়িতে কী নরককাণ্ড চলছে, তা যদি ঘুণাক্ষরেও জানতেন তারা!

সেমুর বাড়ির সোয়া মাইল দূরে ৩৫টি শিশুর গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ছিল। সেখানকার কাউন্সিলর আয়ারল্যান্ড শুনেছিলেন এক পুরুষকণ্ঠের চিৎকার, ‘না! না! ওহ্ গড! প্লিজ, না!’ তিনি চমকে গিয়ে তড়িঘড়ি করে বেনেডিক্ট রোড টহল দিয়ে আসলেন। ওটা গিয়ে শেষ হয়েছে সানসেট বুলভার্দে। সন্দেহজনক কিছু পেলেন না অবশ্য। রবার্ট বালিংটন নামের আরেক প্রতিবেশী অবশ্য ব্যাপারটিকে উড়িয়ে দিতে পারলেন না। তিনি চিৎকারের আওয়াজ পেয়েছিলেন ভোর ৩টার দিকে। ফোন করলেন লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে। যে অফিসার অভিযোগটি নিয়েছিলেন, তিনি আপনমনেই বলেছিলেন, এক মহিলার চিৎকার শুনেছে কেবল। আশা করি কোনো খুনোখুনি হয়নি।

ভোর ৭টায় হকার এসে দেখলো, টেলিফোন লাইনের তারটি বেখাপ্পাভাবে বাড়ির ওপর ঝুলছে। গ্যারেজের ওপরের হলুদ আলোটিও জ্বালানো। সেলিব্রেটিদের আজব খেয়াল ভেবেই হয়তো কাগজটা মেইলবক্সে রেখে বিদায় নিলেন তিনি। গৃহকর্মী মিসেস চ্যাপম্যানের ওইদিন আসতে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। ঝকঝকে লন, সুইমিং পুল ওয়ালা বাড়িটি কেমন যেন থমথমে হয়ে আছে। বাড়ির কাছাকাছি এসে টেলিফোন লাইনের পাশাপাশি বিদ্যুতের লাইনটিও পড়ে থাকতে দেখলেন তিনি। কলিং বেল বাজবে না ভেবে সদর দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল সেটা।

অবাক হয়ে দেখলেন, ড্রাইভওয়েতে একটা অপরিচিত গাড়ি অদ্ভুতভাবে পার্ক করা। গভীর রাতের মেহমান আসা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু না। ঘরে ঢুকে প্রথমেই ফোন চেক করলেন, ডেড। একটু সামনে এগোতেই তার বুক কাঁপিয়ে দিলো রক্ত মাখা লিভিং রুম। বাইরে বারান্দাতেও রক্ত জমাট বেঁধে আছে। অবশেষে লনে পড়ে থাকা লাশটা চোখে পড়লো তার। চিৎকার করতে করতে বাইরে বেরিয়ে এসে এবার চোখে পড়লো, অপরিচিত সাদা গাড়িটা থেকেও একটা লাশের পা বেরিয়ে আছে। বাড়িটা পুলিশে ছেয়ে যেতে একটু সময় নিয়েছিল অবশ্য। তবে একটু পরেই তোলপাড় পড়ে গেল; শুধু হলিউডে নয়, গোটা বিশ্বেই।

বলছিলাম হলিউডের ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যার কথা। এই ঘটনায় খুন হয়েছিলেন খ্যাতনামা চিত্রপরিচালক রোমান পোলানস্কির আট মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী, হলিউড নায়িকা শ্যারন টেট। খুন হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় আরো ছিলেন হেয়ার স্টাইলিস্ট জে সেবরিং, চিত্রনাট্যকার ওয়াশিচ ফ্রাইকোভস্কি, তার স্ত্রী অ্যাবিগেইল ফোলজার আর ১৮ বছর বয়সী স্টিভেন প্যারেন্ট। যিনি ওই কালরাতে বাড়ির কেয়ারটেকারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কেয়ারটেকার উইলিয়াম গ্যারেটসনের বেঁচে যাওয়াটা ছিল এক মিরাকল। 

আরেক ভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক কুইন্সি জোনস। ওই বাংলোয় রাত কাটানোর কথা থাকলেও সময়ের অভাবে আসতে পারেননি তিনি। রোমান পোলানস্কি সে সময় ‘দ্য ডে অফ দ্য ডলফিন (১৯৭৩)’ মুভির কাজের জন্য লন্ডনে ছিলেন। এ ঘটনায় এত বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন যে মুভিটির কাজ আর পরে শেষ করতে পারেননি তিনি। সিনেমাজগতে অপঘাতে মৃত্যু কিংবা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হয়তো খুব বিরল কিছু নয়। রাজনৈতিক কারণে, মাফিয়া জগতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে, মাদক কিংবা ব্যক্তিগত রেষারেষিতেও নির্মমভাবে খুন হয়েছেন কেউ কেউ। এসব ঘটনার বেশিরভাগই রহস্যের আড়ালে ঘেরা। কিন্তু টেট মার্ডারের মোটিভ ছিল একদমই ভিন্ন।

যুক্তরাষ্ট্রে ষাট এবং সত্তরের দশকে তরুণদের মধ্যে হিপ্পি জীবনযাত্রা দারুণভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক, কথাবার্তা, জীবন দর্শন কিংবা রক অ্যান্ড রোল সঙ্গীতের চর্চা; সবই ছিল বৈপ্লবিক। কিন্তু অবাধ যৌনস্বাধীনতা আর মাদকাসক্তি! বিশেষ করে সাইকেডেলিক ড্রাগের প্রভাবে অনেক তরুণই বিপ্লবের নামে বিপথগামী হয়ে পড়ে। এরকমই একদল তরুণের (বলা ভালো তরুণীদের) মধ্যমণি ছিল চার্লস ম্যানসন। টিনএজ বয়সে সন্তানের বাবা হওয়া ম্যানসন ছোটখাট বিভিন্ন অপরাধে জেল খাটেন কয়েকবার। সে নিজের হাতে খুন করেছে এমন কোনো প্রমাণ কিন্তু মেলেনি কখনো। তারপরেও সে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের একজন।


ম্যানসনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সঙ্গীত ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়া। নিজের ভক্তদের নিয়ে ব্যান্ড গঠন করেছিল সে। ‘দ্য বিচ বয়েজ’ ব্যান্ডের ডেনিস উইলসনের সঙ্গেও ভালো খাতির ছিল তার। ম্যানসন তার অনুসারীদের মাঝে প্রচারণা করত গিটারে সুর তোলার মাধ্যমেই। কখনো বিটলসের, কখনো নিজের লেখা গান গেয়ে সে আশ্চর্য দক্ষতায় ব্রেনওয়াশ করত। তার কাল্টের অধিকাংশ সদস্যই ছিল নারী। মুক্ত জীবনের আশা দেখিয়ে নিজের বিকৃত সংস্কারের জালে ম্যানসন তাদেরকে আবদ্ধ করে ফেলেছিল।

কিন্তু তরুণীদের হাত করতে পারলেও সঙ্গীত পরিচালকদের মুগ্ধ করতে পারেনি ম্যানসন। টেরি মেলচার নামের একজন সঙ্গীত পরিচালক বহু পীড়াপীড়ির পরেও ফিরিয়ে দেন তাকে। ফলে বিটলস তো বহুদূর, সাধারণ একজন গায়ক হওয়াও হয়ে ওঠেনি তার। ম্যানসন ফ্যামিলি ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে অবশেষে স্পান র‍্যাঞ্চে ঘাঁটি গাড়ে। সেসময়েই ম্যানসন পুরোদমে কাল্ট লিডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নিজের কথার জাদুতেই হোক, কিংবা ড্রাগের প্রভাবেই হোক, নিজের অনুসারীদেরকে পুরোপুরি বোধবুদ্ধিহীন পুতুলে পরিণত করে সে। 

তারা ম্যানসনের নির্দেশে অবাধে যৌনাচার করত। কোনো টাকা-পয়সা বহন করত না এবং অবলীলায় যেকোনো অপরাধ ঘটাত। র‍্যাঞ্চের বুড়ো মালিক অবশ্য এ ব্যাপারে তেমন কিছু বুঝতে পারেননি। সায়েন্টোলজি এবং স্যাটানিজমে বিশ্বাসী ম্যানসনের ধারণা ছিল, অচিরেই সাদা এবং কালোদের মধ্যে মহাযুদ্ধ হবে আর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশেষে জয় হবে সাদাদেরই। তারপর তারা বিশ্বকে দখল করে নেবে। তার মতে, এই ঘটনার নামই হলো হেল্টার স্কেল্টার। নিজেকে আধ্যাত্মিক নেতা দাবি করে ভক্তদের মাথায়ও গানটির ভিন্ন ব্যাখ্যা ঢুকিয়ে দেয় সে। এরপরে সে পরিকল্পনা করে, নিজেরাই এই যুদ্ধ শুরু করবে তারা। তারই অংশ হিসেবে নৃশংস কিছু হত্যাকাণ্ড করে কালোদের ওপর দোষ চাপানোর ষড়যন্ত্র করে সে।

কিন্তু এসবের সঙ্গে শ্যারন টেট আর তার বন্ধুদের কী সম্পর্ক? দুর্ভাগ্য তাদের, তারা আসলে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিলেন। ১০০৫০ সিয়েলো ড্রাইভের যে বাড়িটিতে তারা ছিলেন, ওই বাড়িতে আগে থাকতেন টেরি মেলচার। আর নিজের সঙ্গীত ক্যারিয়ারে ইতি টেনে দেয়ার জন্য বরাবরেই তার প্রতি আক্রোশ ছিল ম্যানসনের। তাই ওই বাড়ির নিবাসীদেরকেই নিজের শিকার হিসেবে বেছে নেয় সে। সেসময়ে রোমান পোলানস্কি আর শ্যারন টেট ছিলেন হলিউডের সেরা পাওয়ার কাপলগুলোর একটি। হরর কমেডি ‘দ্য ফিয়ারলেস ভ্যাম্পায়ার হান্টারস (১৯৬৭)’ করার সময়ে তাদের মাঝে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। যা পরবর্তীতে প্রণয়ে রূপ নেয়। ওইদিন স্রেফ ভাগ্যের জোরেই বেঁচে যান পোলানস্কি।


ম্যানসন ফ্যামিলির চার সদস্য ঠিক মধ্যরাতে এসে হাজির হয় তাদের বাংলোর সামনে। গাড়ি থেকে বের হয় সুজান অ্যাটকিন্স, প্যাট্রিসিয়া ক্রেনউইনকেল আর ম্যানসনের ডানহাত, চার্লস টেক্স ওয়াটসন। লিন্ডা কাসাবিয়ানকে গাড়িতে রেখে যাওয়া হয় নজর রাখার জন্য। প্রথমেই ওয়াটসনের হাতে খুন হয় হতভাগা স্টিভেন প্যারেন্ট। ফ্রাইকোভস্কি ঘুমাচ্ছিলেন লিভিং রুমের কাউচে। ঘরে ঢুকে ওয়াটসন তার মাথায় লাথি দেয়। ফ্রাইকোভস্কি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, আমি শয়তান, নরক থেকে উঠে এসেছি।


টেট, সেবরিং, ফ্রাইকোভস্কি আর ফোলজারকে একত্র করে তারা। সেবরিং আর টেটকে সিলিং এর সঙ্গে দড়ি দিয়ে ঝোলানোর সময়ে সেবরিং অন্তঃসত্তা টেটকে ছেড়ে দিতে বলেন। সে কারণে ততক্ষণাৎ সেবরিংকে গুলি করে দেয় ওয়াটসন। ফোলজার নিজের পার্স থেকে ৭০ ডলার বের করে দিলেও ওয়াটসন তার পেটে ৭ বার ছুরিকাঘাত করে। ফ্রাইকোভস্কি নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়ে বারান্দায় চলে গেলে পিস্তলের বাঁট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে ওয়াটসন। তারপরেও তিনি সুইমিং পুল পর্যন্ত পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াটসন তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন করে।


তাদের চিৎকারে দরজায় উঁকি দেয় কাসাবিয়ান। অন্যদের মত অতোটা নির্মম ছিল না, তাই দৃশ্যটি পুরোপুরি হজম করতে পারেনি সে। তাদেরকে থামানোর জন্য সে মিথ্যা বলে, কেউ একজন আসছে। তারপরেও থামেনি উন্মাদ কাল্ট সদস্যরা। নিজের অনাগত সন্তানের জন্য তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েও বাঁচতে পারেননি টেট। তাকে ষোলবার ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে সুজান। তারপর তার রক্ত দিয়ে সামনের দরজায় লিখে দেয় ‘পিগ’, সম্ভবত বিটলসের ‘পিগিস’ গানটির থেকেই এই শব্দটি নিয়েছিল সে।


পরেরদিন সন্ধ্যায়, যখন অজানা আশঙ্কায় পুরো হলিউড কেঁপে উঠছিল বারবার, তখনই আরেক দফা আঘাত হানে ম্যানসন ফ্যামিলি। তাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন লেনো এবং রোজমেরি বিয়াংকা। এবারো লিন্ডাকে নজর রাখার দায়িত্ব দিয়ে তাদের বাড়িতে ঢোকে ওয়াটসন, অ্যাটকিন্স, ক্রেনউইনকেল, লেসলি ভন হুটেন এবং চার্লস ম্যানসন স্বয়ং। তাদের দু’জনকে একত্রে বাঁধার কাজটি করলেও খুনের দায়িত্বটি সাগরেদদের হাতেই ছেড়ে দেয় ম্যানসন। লেনোর বাড়ির লিভিং রুমের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা ছিল- ‘ডেথ টু পিগস’ এবং ‘রাইজ’। আর তার রেফ্রিজারেটরের গায়ে লেখা ছিল বিটলসের সেই গান ‘হেল্টার স্কেল্টার’। বিটলস ব্যান্ডের ‘হোয়াইট’ অ্যালবামের জন্য সরল মনে ‘হেল্টার স্কেলটার’ গানটি লেখার সময়ে স্যার পল ম্যাককার্টনি নিশ্চয়ই কুক্ষণেও ভাবেননি যে, এর ফলে ভয়ানক এক বর্ণবাদী যুদ্ধ আর হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হবে।


আলাদা একটি ঘটনায় হলিউডের স্টান্টম্যান ডোনাল্ড শিয়া এবং সঙ্গীতশিল্পী গ্যারি হিনম্যানও তাদের নৃশংসতার শিকার হন। এতগুলো হাই প্রোফাইল খুন করার পরেও ম্যানসন ফ্যামিলি ছিল পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই। কিছুদিনের মাথাতেই ম্যানসন আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা ধরা পড়েছিল গাড়ি চুরির অভিযোগে। কিন্তু প্রশাসন তাদের ভয়াবহ অপরাধগুলোর কথা টের না পেয়ে হালকা শাস্তি দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিল। তার কিছুদিন বাদে ডেথ ভ্যালির বার্কার র‍্যাঞ্চে আরো কিছু চোরাই গাড়ি পাওয়া যায়। সেসময়ে ম্যানসন ফ্যামিলির আরো কিছু সদস্য ধরা পড়ে। তবে তারাই যে টেট মার্ডারের সঙ্গে জড়িত, সেটা কিন্তু পুলিশ তখনো টের পায়নি। সুজান অ্যাটকিন্স জেলের অন্য আসামিদের কাছে গর্ব করতে গিয়ে ফাঁস করে দেয় সবকিছু।


১৯৭০ সালের ২৪ জুলাই ম্যানসন, অ্যাটকিন্স, ক্রেনউইনকেল এবং ভ্যান হুটেনকে আদালতে তোলা হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তাদেরকে ফাঁসি দেয়ার রায় হয়। পরে ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেলে সুপ্রিম কোর্ট তাদের যাবজ্জীবনের আদেশ দেয়। ২০১৭ সালে ৮৩ বছর বয়সে এক কারাগারের হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে ম্যানসন। মৃত্যুর আগে দেয়া সাক্ষাৎকারেও বিটলসের গানের প্রভাব নিয়ে নিজের যুক্তির স্বপক্ষে ছিল ম্যানসন। তার মতে, আমি তো এ গান লিখিনি, লিখেছে বিটলস। আর দশজন ব্যর্থ গায়কের মতো মাদকের নেশায় ডুবে না গিয়ে ম্যানসন ডুবেছে সবাইকে নিয়ে। বিটলসের মতো বিশ্বজোড়া সাফল্য আর সম্মান পাবার স্বপ্নকেই বিকৃত উপায়ে পূরণ করেছে সে।


এ ভয়াল হত্যাযজ্ঞের কথা বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে ছোট এবং বড়পর্দায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হেল্টার স্কেল্টার’। যেটি একই নামের বইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। ‘আমেরিকান হরর স্টোরি: কাল্ট’ সিরিজে দেখা গেছে তাকে। গেল বছরের থ্রিলার ‘ব্যাড টাইমস অ্যাট এল রয়্যাল’ মুভিতে ক্রিস হেমসওয়ার্থের চরিত্রটিও ম্যানসনের আদলে লেখা হয়েছে। কেবল ২০১৯ সালেই ম্যানসনের চরিত্রটি চারবার দেখা দিয়েছে দর্শকের সামনে। ‘চার্লি সেস’ কিংবা ‘দ্য হন্টিং অফ শ্যারন টেট’ খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি। 


তবে দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে কোয়েন্টিন টারান্টিনোর ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম... ইন হলিউড’ আর ডেভিড ফিঞ্চারের দুর্দান্ত ক্রাইম থ্রিলার ‘মাইন্ডহান্টার’ সিরিজ। এ দু’টিতে আবার ম্যানসনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন একই অভিনেতা, ড্যামন হেরিম্যান। টারান্টিনোর মুভিতে তার পাশাপাশি আছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, ব্র্যাড পিট, আল পাচিনো, মার্গো রবির মতো হলিউডের জনপ্রিয় তারকারা। তবে ‘ইনগ্লোরিয়াস বার্স্টার্ডস (২০০৯)’ এর মতো এই মুভিতেও মূল ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.