শুধু বাঙালিই নয়, কান লাল করা ঝাল মশলা খাবার প্রিয় বিশ্বের অনেক দেশে

Odd বাংলা ডেস্ক: খাবারের স্বাদ, গন্ধ বাড়াতে মশলার বিকল্প কিছুই নেই। বাঙালি খাবার তো মশলা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। এলাচ,দারুচিনি, হলুদ, জিরা, ধনিয়া, মরিচ, আদা, রসুন ও লবঙ্গের ব্যবহার সব খাবারেই। হাজার হাজার বছর আগেও খাবারে এসব মশলা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। শুধু যে খাবারের স্বাদ বাড়ায় তাই ই নয়, এসব মশলার রয়েছে নানান ওষুধি গুণ। 

হার্ভার্ড ও চায়নিজ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ২০১৫ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন বের করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা সপ্তাহে সাত বা অন্তত একদিনের জন্য হলেও মশলাযুক্ত খাবার খায়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৪ শতাংশ হ্রাস পায়।

তবে মশলার সঙ্গে বাঙালির রয়েছে আবেগের সম্পর্ক। মশলাদার ঝাল খাবার বলতে বাঙালির জিভে জল। সে ভর্তা হোক বা মাংস ভুনা সবেতেই একটু ঝাল দিয়ে রান্না করা। তবে শুধু বাঙালিই নয়, কান লাল করা ঝাল মশলা খাবার প্রিয় বিশ্বের অনেক দেশে। চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের কোন কোন দেশের খাবারে এই মশলার আবেগ জড়িয়ে আছে।   

চীন

প্রথমেই আসা যাক চীনাদের কথায়। আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো তাদের জন্য আজ বেশ সহজ হয়েছে। সেজন্য আগেই তাদের মনে পড়ার কথা সবারই। ভাত-মাছ আর বিরিয়ানির প্রেমে বাঙালি যতই হাবুডুবু খাক না কেন, সবচেয়ে পছন্দের ডিশের মধ্যে রয়েছে চাইনিজ। সেই ১৮ শতক থেকে বাঙালি আর চীনারা একসঙ্গে ওঠা-বসা করছেন। তাই চীনা খাবারের প্রতি বাঙালির ঝোঁক থাকাটা স্বাভাবিক। চীনের কিছু অংশ মশলাদার খাবার পছন্দ করে। আপনি যদি চীনের আসল মশলার স্বাদ নিতে চান তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পারেন। সেখানকার শুকনো কাঁচা মরিচ এবং সিচুয়ান মরিচ ব্যবহার করে দেখুন। আসল ঝালখোরদের মন জয় করবে নিমিষেই। 

থাইল্যান্ড

থাই কুজিন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কুজিন। প্রায় সব দেশেই থাই খাবারের জনপ্রিয়তা রয়েছে। স্টার ফ্রাই, স্যুপ, কারি। এ ধরনের খাবার তৈরি করতেই অনেক বেশি পাতা বা হার্ব এবং কাঁচা মরিচের ব্যবহার করে। এর মধ্যে লাল মরিচের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।

এ ছাড়া খাবারকে স্পাইসি করতে রান্নায় প্রচুর পেঁয়াজ, রসুন, আদা, লেমনগ্রাস, পুদিনাপাতা ব্যবহার করে এরা। 'কায়েং তাই প্লা' নামের সবজি ও শুঁটকি দিয়ে বানানো তরকারিকে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি ঝাল খাবার বলে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া লাল মরিচের পেস্ট দিয়ে তৈরি মাছ, মাংস বা সবজির বিভিন্ন রেড কারিও বেশ ঝাল হয়ে থাকে।

কোরিয়া

সবার পছন্দের রামেন নুডুলসের জন্য কোরিয়ানদের ঝাল খাওয়ার ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই কারো। বিশ্বায়নের ফলে কোরিয়ান খাদ্য সংস্কৃতি আজ আমাদের অনেকেরই জানা। কোরীয়দের ঝাল খাওয়া দেখলে যে কেউই অবাক হতে পারে। সব খাবারেই তারা গচুজাং নামের একধরনের লাল মরিচের পেস্ট ব্যবহার করে। গচুজাং পেস্ট ছাড়া কোনো কোরিয়ান খাবার কল্পনাই করা যায় না।

মেক্সিকো

মেক্সিকোতেই জন্মায় ১৪০ জাতের লঙ্কা! উত্তর আমেরিকার এ দেশের কোনো খাবারই লঙ্কা ছাড়া হয় না। এমনকি অ্যালকোহলেও অনেক মেক্সিকান মরিচ মিশিয়ে খান। এ দেশেই বিখ্যাত হালেপিনো, পবলানো, সেররানো, আঞ্চো আর কুখ্যাত হাবানেরো মরিচের জন্মস্থান। মেক্সিকোতে অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়া আর এর ঝাল সহ্য করাকে শৌর্যবীর্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। মোলে, সালসা, চিলেস রেয়েনো, সোপা দে কামারোন, আগুয়াচিলে, চিলাতে দে পইয়ো ইত্যাদি এ দেশের সবচেয়ে ঝাল খাবারগুলোর মধ্যের অন্যতম।

মালয়েশিয়া

মালয় কুজিন চাইনিজ আর ভারতীয় কুজিনের এক দারুণ সংমিশ্রণ। এ দেশের বিভিন্ন রান্নায় প্রচুর পরিমাণে ঝাল এবং বিভিন্ন রকমের মশলা ব্যবহার করা হয়। ওটাক ওটাককে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে ঝাল খাবার বলা হয়। এটি খানিকটা বাংলাদেশের বিন্নি চালের পিঠের মতো। মাছের কিমার সঙ্গে অনেক প্রজাতির মরিচ গুঁড়া আর মশলা মিশিয়ে কলার পাতায় মুড়িয়েই ওটাক ওটাক তৈরি করা হয়।

আফ্রিকা

আফ্রিকার প্রায় সব দেশের রান্নায় ঝাল আর মশলার ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ইথিওপিয়ান কুজিনে বিভিন্ন মসলার সঙ্গে 'বেরবেরে' নামের লাল মরিচের গুঁড়া দেয়া হয়। আবার ঘানা, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়াতে রান্নায় 'শিটো' নামের পেস্ট দিতে দেখা যায় যা, কালো গোলমরিচ, পাম তেল, প্রায় গোলমরিচের মতো দেখতে এনিস পেপার দিয়ে বানানো হয়।

জ্যামাইকা

জ্যামাইকার অধিকাংশ মানুষ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত হওয়ায় ঝালের সঙ্গে আছে এদের দারুণ সখ্যতা। এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত জার্ক চিকেন বানাতে লাগে বেশি পরিমানের মরিচ আর মশলা। যা দিয়ে ম্যারিনেট করা হয়। তবে এ দেশের সবচেয়ে ঝাল খাবারটি বানানো হয় পাঠার মাংস দিয়ে। জ্যামাইকান গোট কারি বানাতে লাগে স্কচ বনেট মরিচ, যা বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচগুলোর মধ্যে একটি। এর স্কোভিল হিট ইউনিট (ঝালের মাত্রা পরিমাপের একক) এক মিলিয়নের বেশি।

তবে এই অতিরিক্ত ঝাল মশলা খাবারের যেমন খারাপ দিক আছে তেমন ভালো দিকও আছে। মসলা ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।  সব রকমের মসলায় একের অধিক অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে ভরপুর। হলুদে বিদ্যমান একটি শক্তিশালী উপাদান, যা কুরকুমিন নামে পরিচিত—শরীরের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে আদা, রসুন, হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, বমিভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদির উপশমে কাজ করে মসলা। ঠাণ্ডা জ্বর সারাতে খুবই কার্যকরী আদা। ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে মরিচ। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.