স্বামীর দেওয়া আংটিতে জীবন বাঁচলো নারীর

Odd বাংলা ডেস্ক: যখন কারো বিয়ে ঠিক হয়ে যায় বা কেউ কাউকে খুব বেশি ভালোবাসে তার সঙ্গে সম্পর্ক করে জড়িয়ে পড়েন, তখন সে তার সঙ্গে সারা জীবন একসঙ্গে কাটানোর কল্পনা করে থাকেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত সবার ভাগ্য তা হয় না। বিশেষ করে কিছু মেয়েরা অনেক পরে বুঝতে পারে সে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি জীবনেসঙ্গী নির্বাচন করতে করে বসেছেন।

বিয়ের ছয় বছর পর একটি বাচ্চা হয়ে যাবার পর মিশেলিনা নামের এই নারী কঠিন এক সত্যের সম্মুখীন হয়। যা শোনার পর তিনি আর কখনো কারো উপর বিশ্বাস করতে পারেনি। যদি এটা খুবই স্বাভাবিক, এমনটা আর করো সঙ্গে হলে  সে আর কাউকে কখনো বিশ্বাস করতে পারবে না। এমনকি আমিও পারতাম না। আজকে আমি আপনাদেরকে এমন একটি সাহসী নারীর কাহিনী জানাবো যার নাম ছিল মিশেলিনা লেয়ানডোস্কা।

সে সময় তার বয়স ছিল ২৭ বছর। তিনি ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের হাডার্সফিল্ডের বাসিন্দা। তিনি ভালোবাসার নামে চরম ধোঁকার সম্মুখীন হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর মুখ থেকে তিনি বেঁচে ফিরেছেন। মিশেলিনা লেয়ানডোস্কা ও মার্কিন ক্যাসপরজ্যাক অন্যান্য কাঁপলদের মতো পরস্পরের ভালোবাসায় পাগল একটি জটিল ছিল। তাদের একটি বাচ্চাও ছিল। যার নাম রাখা হয়েছিল জ্যাকুব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের বাচ্চা হওয়ার পর পরই তাদের সম্পর্কের ফাটল ধরা শুরু করে। 

কেননা ক্যাসপরজ্যাক তার স্ত্রীর চেয়ে বডিবিল্ডারের জন্য ব্যবহৃত তার স্টেরয়েড ভালোবাসতেন। তার প্রতি সপ্তাহে কম করে হলেও আটবার জিমে যেতে হতো। কিন্তু মিশেলিনার এই সবয়ে কোনো সমস্যাই ছিল না। এমন কাহিনী তিন বছর ধরে চলে আসছিল। আর দিনকে দিন তাদের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। যা অন্যদের নজরেও পড়ছিল। এই সম্পর্কের আসল কাহিনী হলো। ছয় বছর আগে পোল্যান্ডে মিশেলিনার সঙ্গে মার্কিন ক্যাসপরজ্যাক দেখা হয়।

কিন্তু মিশেলিনার বাবা-মা তাকে মার্কিন ক্যাসপরজ্যাকের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে দেন। কারণ তাদেরকে মার্কিন ক্যাসপরজ্যাকে একদমই পছন্দ ছিল না। যখন মার্কিন ক্যাসপরজ্যাক মিশেলিনা বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যায়, তখন সে তাদের সঙ্গে ভালো মতো কথা বলা তো দূরে থাক তাদের চোখের দিকে তাকিয়েও দেখেন নি। কারণ মার্কিন ক্যাসপরজ্যাক কোনো ছেলে বা লোকের উপস্থিতি পছন্দ করতেন না। মার্কিন ক্যাসপরজ্যাক একটি মাংসের ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে। 

আর মিশেলিনা ছিলেন একজন টেইলার। দিনকে দিন তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। দুজন দুজনকে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলে। যার কারণে তারা বিয়ে করে ফেলেন। বিয়ের তিন বছর পর তাদের ছেলে সন্তান হয়। যার নাম রাখা হয় জ্যাকুব। আর এই সন্তান মার্কিন ক্যাসপরজ্যাকের পছন্দ ছিল না। তিনি সবসময় বলতে যে তাদের বাসায় নতুন মানুষ কেন আসলো? যা তার একদমই সহ্য হতো না। হোক সে নিজের সন্তান। তিনি কোনো ছেলে বা পুরুষ মানুষকে একদমই সহ্য করতে পারতো না।

তাই তিনি বার বার মিশেলিনা বলতেন, যেন সে তার ছেলেকে নিজের বাবার বাড়ি রেখে আসে। আর যখন স্টেরয়েড নিয়ে বাসায় আসতেন, তখন তাকে বোঝানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে যেত। কারণ এই ওষুধ তাকে আরো বেশি রাগী করে ফেলতো। যার কারণে সে তার মাকে ফোন দিয়ে বলে, যেন মিশেলিনাকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দেয়। আর তাদের ছেলেকে তার কাছে নিয়ে রাখে। এরপর সে একটি অনেক বড় অপরাধ করে বসে।

একদিন ক্যাসপরজ্যাক মিশেলিনাকে বলে যে তার সঙ্গে শপিং এ যেতে। এই কথা শুনে মিশেলিনা তো অনেক বেশি খুশি হয়ে যান। তিনি ভেবেছিলেন এইবার হয়তো তাদের সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যাবে। তাই মিশেলিনা লিস্ট বানাতে থাকেন, যে তার কি কি প্রয়োজন? আর তিনি কি কি কিনবেন? কিন্তু মিশেলিনা তো জানতেন না যে ক্যাসপরজ্যাক তার জন্য কবর খুঁড়ে রেখেছেন।

যেখানে সে মিশেলিনাকে কবর দেবেন। না না, আমি ভাবার্থে বলছি না, আক্ষরিক অর্থে বলছি। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ক্যাসপরজ্যাক দুইটি স্টানগান পকেটে করে নিয়ে যান। যা দিয়ে মিশেলিনাকে দুইবার শক দেন তিনি। এরপর মিশেলিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এই সুযোগে ক্যাসপরজ্যাক মিশেলিনার মুখ কসটেপের সাহায্যে বন্ধ করে দেয়। আর ক্যাসপরজ্যাকের বন্ধুর সাহায্যে ম্যাকলিনাকে একটি কার্ডবোর্ডের মধ্যে রাখে। 

এরপর সে হাডার্সফিল্ডের জঙ্গলে তাকে নিয়ে যান। সেখানে একটি কবরে তাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে আসেন। কবরটি ক্যাসপরজ্যাক আগে থেকেই খুঁড়ে রেখেছিল। কবর দেয়ার সময় ক্যাসপরজ্যাক মিশেলিনাকে একটি জিনিস উপহার দিয়ে আসেন। আর এই জিনিসটি মিশেলিনার বাঁচার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মিশেলিনাকে জীবিত কবর দিয়ে এমনভাবে চলে আসে, যেন কিছুই হয়নি।

আর এদিকে মিশেলিনা মাটির নিচে দম আটকে মৃতপ্রায় অবস্থা। একটি মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় কবর দেয়া হয়েছে। আবার তার উপর প্রায় ১০০ কেজি মাটি। তাছাড়া পুলিশ যখন তদন্ত করতে আসে, তখন জানতে পারেন মাটির উপর ৫০ কেজির একটি গাছও ছিল। যখন মিশেলিনার জ্ঞান ফেরে তখন শুধু তার ছেলে জ্যাকুবের কথা মনে আসছিল। 

ক্যাসপরজ্যাক মিশেলিনাকে যেই কার্ডবোর্ডে বন্দি করে রেখে কবর দিয়ে এসেছিলেন, সেখানে সে তাদের বিয়ের আংটিও রেখে এসেছিলেন মিশেলিনার জন্য। আর এই আংটিটি মিশেলিনা নিজের বাঁচার হাতিয়ার বানিয়ে ছিল। আংটিটি দিয়ে সে কার্ডবোর্ডটি কাটে। সেই সময় মিশেলিনা অনেক আস্তে আস্তে শ্বাস নিচ্ছিল। যেন সে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে। আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর মিশেলিনা কবর থেকে অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসে।

কিন্তু এখানে মাত্র তার যুদ্ধের শুরু ছিল। এরপর মিশেলিনা ক্যাসপরজ্যাক নামে মামলা করেন। আর ক্যাসপরজ্যাক বলেন, সে আসলে তার স্ত্রীকে সঙ্গে মজা করছিল। কিছুক্ষণ পর নাকি ম্যাকলিনাকে সে নিজেই বের করে নিয়ে আসতেন। কিন্তু মিশেলিনা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, তাকে স্টানগানের দিয়ে যে শক দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র একটি শক লেগেছিল। আর তাই সে বেঁচে গেছেন। 

এছাড়াও মিশেলিনাকে জীবিত কবর দেয়ার পর ক্যাসপরজ্যাক তার ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকাও তুলে নেন। মিশেলিনা বলেন যে, কবর থেকে বেরিয়ে আসার পরও তার দুই সপ্তাহ লেগেছে ঠিক মতো শ্বাস নিতে। এমনকি কবরে থাকার ভয় তার আজ পর্যন্ত কাটেনি। ক্যাসপরজ্যাকের সঙ্গে তার বন্ধুও যে এতে যুক্ত ছিল এই কথাটিও সে জানায়। তবে তার কোনো সাজা হয়নি। কারণ কবর দেয়ার সময় সে সেখানে ছিল না।

ক্যাসপরজ্যাক বলেন, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তার মা তার উপর অনেক অত্যাচার করেছেন। তাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখতেন, ঠিক মতো খাবার দিতেন না। যার কারণে সে জিম করে বডি বানিয়ে ছিলেন। যাতে কেউ তাকে রোগা পাতলা বলতে না পারে। তবে এতে করে তার সাজা একটুও কমেনি। কারণ একটি মানুষের বুঝতে হবে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। 

২৫ বছর ক্যাসপরজ্যাক যে শুধু মিশেলিনার সঙ্গে এমনটা করেছিল তা কিন্তু নয়। তার রুম যখন তল্লাশি করা হয়েছিল তখন সেখান থেকে অনেক হাতিয়ার ও বোম পাওয়া গিয়েছিল। অ্যাটেম্পট টু মার্ডারের জন্য তাকে ২০ বছরের সাজা দেয়া হয়। আর অবৈধভাবে এসব হাতিয়ার রাখার জন্য আরো ৩২ বছরের সাজা হয় তার। অর্থাৎ মোট ৫২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। মিশেলিনার তো ক্যাসপরজ্যাকের চেহারা দেখলেও এখন ভয় লাগে।

কোনো সম্পর্ক কখনো জোর করে টেকানো যায় না। যদি মনে হয়, সম্পর্কটা অনেক চেষ্টার পর ঠিক হচ্ছে না, তাহলে সেখান থেকে পিছু হাঁটাই ভালো। কেননা এটি জন্য পরে আপনাকে পস্তাতে হতে পারে। এখানে ক্যাসপরজ্যাকের বন্ধু তাকে সাহায্য করেছিল। বহু বছর হয়ে গেছে মার্কিন ক্যাসপরজ্যাক জেলে আছে। এখনও আরো ৪৫ বছর তাকে জেলেই থাকতে হবে।  

আর যখন সে জেল থেকে বের হবে তখন তার বয়স হবে ৭৭ বছর। তখন হয়তো সে আর কখনো মিশেলিনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এখন সময়টা এমন যে আমরা চাইলেও কাউকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি না। তার প্রতি আমাদের যতই ফিলিংস থাকুক না কেন। তাই আপনি যদি এই ভুলটি না করতে চান তাহলে আজ থেকেই সাবধান হন। কেননা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা আমাদের কখনোই উচিত না। ধোঁকা সাধারণত কাছের মানুষগুলোই দেয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.