এর আগেও মহামারীতে 'লকডাউন' দেখেছিল বাংলা! তখন বেলুড় মঠ বিক্রি করতে চেয়েছিলেন স্বামীজী!
বিশেষ প্রতিবেদন: ১৮৯৮ সালের এপ্রিল মাস। বাংলায় হানা দিল প্লেগ। এর ঠিক তিন মাস আগে বিবেকানন্দের অনুরোধে ভারতে আসেন নিবেদিতা। এসেই যেন ঝড়ের সামনে পড়লেন তিনি।
বাড়ল প্লেগের দাপট। ১৭ এপ্রিল কলকাতায় প্রথম মৃত্যু হল প্লেগে। তারপর ঝড়ের বেগে সংক্রমণ ছড়াল বেনিয়াপুকুর, বড়বাজার, কুমারটুলি, শ্যামপুকুরে। ৩০ এপ্রিল প্রশাসনের তরফে জানানো হল কলকাতায় প্লেগ ‘মহামারী’র আকার ধারণ করেছে।
প্লেগের দাপটে কলকাতার যখন শ্মশানের চেহারা, ভাঙা শরীরে বিবেকানন্দ তখন দার্জিলিংয়ে। মহামারীর খবর পেতেই নিজেকে আর সামলাতে পারলেন। জীর্ণ শরীরেই শহরে ফিরলেন স্বামীজী।
করোনায় যেমন লকডাউন দেখেছে বাংলা। তেমনই প্লেগের চোখরাঙানিতেও লকডাউন দেখেছিল কলকাতা। সাল ১৮৯৮-এ।
টিকা দেওয়া নিয়েও ছড়াল গুজব। ব্রিটিশ সরকার টিকা দিতে গেলেই একশ্রেণীর মানুষ লাঠি নিয়ে তাড়া শুরু করল। ব্রিটিশদের ‘বাধ্যতা’ তারা মানতে নারাজ।
আর এই গুজব রুখতে, সকলের কাছে স্বাস্থবিধি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন বিবেকানন্দ। তাইতো তিনি নিবেদিতাকে একটি প্রচারপত্র তৈরির দায়িত্ব দেন। সেই ম্যানুয়াল রাতারাতি দুই ভাষায় অনুদিতও হয় রাতারাতি।
এই হ্যান্ডবিল বিলিবন্টন নিয়ে সেদিন মঠের সন্ন্যাসীদের কম বিপদে পড়তে হয়নি। অনেকে তাদের ব্রিটিশ চর ভেবে সন্দেহ করে। রাস্তায় বেরোলে তাড়াও করা হয় তাদের।
যেভাবেই হোক মহামারি রুখতে চেয়েছিলেন বিবেকানন্দ। তৈরি করতে চেয়েছিলেন প্লেগ হাসপাতাল। তার জন্য বেলুড়ের জমি বিক্রি করতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি।
প্লেগ ছাড়লেও মহামারীর সঙ্গে লড়াই এখনও জারি। শতাব্দী পেরিয়ে আজ আবার করোনার সঙ্গে লড়াই করছি আমরা। মারণ ভাইরাসের এই দাপট দেখে, স্বামীজীর পরিশ্রমের কথাই মনে পড়ে। মনে পড়ে নিবেদিতার নীরব সেবাদর্শের বিলুপ্ত শক্তিকে।
Post a Comment