আজব সব পানীয়! রয়েছে কুমারীর থুতু, গোমূত্রসহ ব্যাঙের জুসও

Odd বাংলা ডেস্ক: চা, কফি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় আমাদের দেশের পানীয়গুলোর মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে বিশ্বজুড়ে এমন সব আজব পানীয় রয়েছে, যেগুলোর প্রস্তুত প্রণালী শুনলে বিস্ময়ে যে কারো চোখ গোল গোল হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। অনেকের এবার এর প্রস্তুত প্রণালী শুনলে গা গুলিয়ে আসবে। 

কারণ আমাদের মধ্যে হয়ত কেউই নেই যারা কুমারী নারীর থুতু দেয়া ড্রিংকস খেয়েছেন। আবার খুব কম মানুষই আছেন যারা এক চুমুকে ডায়মন্ডের চায়ের স্বাদ নিতে পেরেছেন। চলুন তবে এমনই আজব কয়েকটি ড্রিংকস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-  

আমাদের মা-বাবা আমাদের ছোটবেলায় শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে সেখানে থুথু ফেলা একদমই ভালো নয়। তবে মনে হয়, জাপানীরা এই কথাটা জানেন না। তাই তো জাপানে একটি জনপ্রিয় ড্রিংকস আছে। 

যা কুমারী নারীদের থুতু দিয়ে তৈরি করা হয়। যদিও প্রথমে এটি সাধারণভাবেই বানানো হয়। তবে শেষে এর সঙ্গে এই ড্রিংকসটি কুমারী মেয়েরা নিজেদের মুখে নিয়ে কুলি করে ফেলে দেয়। আর তখনই সেই ড্রিংকটি প্রস্তুত হয়ে যায়। 


পিজি টিপস ডায়মন্ড টি

এই চা পান করতে হলে আপনাকে দিতে হবে ১৫০০০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশের হিসাবে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। দুইটি কারণে এই চায়ের এত বেশি দাম। প্রথমত, এটা এক ধরনের বিরল প্রজাতির সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি টি ব্যাগে রয়েছে ২৮০ টুকরো হীরা।


যার পুরো কারুকার্য করেছেন বিখ্যাত গুডলেস জুয়েলার্স। পিজি টিপসের ৭৫ বছরের পূর্তি উপলক্ষে লিমিটেশন হিসেবে ২০০৫ সালে এটা ইংল্যান্ডের বাজারে আনা হয়েছিল। কেবল কোম্পানির ৭৫ বছরের পূর্তি উপলক্ষে নয়। বরং ইংল্যান্ডের শিশুদের জন্য একটি তহবিল গঠনের জন্য এই বিশেষ চাটি বিক্রি করা হয়েছিল। 


দাড়ির বিয়ার 

যুক্তরাষ্ট্রের অরিগান অঙ্গরাজ্যের রোগএলিস মদ জুলাইখানায় বিশেষ এক প্রকারের বিয়ার তৈরি করা হয়। যার নাম বিয়ার্ড বিয়ার। তবে এতে পুরুষের দাড়ি সরাসরি ব্যবহার করা না হলেও এর অবদান আছে ঠিকই। 

জুলাইখানার মালিক জন মেয়ার ১৯৭৮ সালে সর্বশেষ শেভিং করেছিলেন। এরপর থেকে ক্রমাগত বাড়তে থাকা দাড়ি দিয়ে তিনি এক ধরণের ছত্রাক চাষ করেন। এই ছত্রাকটি পরবর্তীতে বিয়ার গাঁজানোর জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। তাই এই কারণে এর এমন নামকরণ করা হয়েছিল।

অণ্ডকোষের বিয়ার 

বিয়ারের অনেক ধরনের ফ্লেভার থাকে। আর তার মধ্যে অনেক অদ্ভুত সব জিনিস মেশানো হয়। আর তাই বলে অণ্ডকোষ, তাও আবার ষাঁড়ের। ভাবলেই কেমন যেন গা গুলিয়ে আসে। তবে এটি অনেকের কাছেই বেশ মজার বিষয়। তাই তো এই বিয়ারটি এত জনপ্রিয়। 

ওয়াইনকুপ ব্রিউইং কোম্পানি বিয়ার বানানোর জন্য বেছে নিয়েছে ষাঁড়কে। আরও ভালো করে বলতে গেলে, ষাঁড়ের অণ্ডকোষকে। এজন্য ষাঁড়ের অণ্ডকোষ ভালো করে ভেজে এর উপর টুকরো টুকরো করে যোগ করা হয় সেই বিয়ারের সঙ্গে। 

চিচা

আজ যতগুলো পানীয়ের কথা আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে এই পানীয়ের প্রস্তুত প্রণালী জেনে পাঠকদের গা সবচেয়ে বেশি ঘিনঘিন করে উঠবে। এটিও এক ধরনের বিয়ার। যার প্রস্তুতিতে ভুট্টার সাহায্য নেয়া হয়। গাঁজানো এবং অগাঁজানো উভয়ই অবস্থাতেই বিয়ারটি দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার মানুষজন পান করে থাকে। 

চিচার বিভিন্ন প্রকারভেদের মাঝে একটি আইটেম হলো চিচা ডিম মিউকো। এটি প্রস্তুত করার আগে প্রস্তুতকারক ভুট্টার দানাগুলো দাঁত দিয়ে চিবিয়ে ছোট ছোট বলের মতো বানিয়ে ফেলতো। তারপরে পিষে ফেলা হয়। প্রস্তুতকারকডের লালাতে থাকা এনজাইম ভুট্টার শর্করাকে ভিজজিত হতে সাহায্য করে। এভাবে প্রাপ্ত জুসকে পরবর্তীতে একটি পাত্রে গাঁজানোর জন্য রেখে দেয়া হয়।

ব্যাঙের জুস

প্রায় ৫০ সে.মি. লম্বা ও এক কেজি ওজনের এক ব্যাঙ। নাম তার টিটিকাকা ওয়াটার ফ্রগ। সেখানকার বাসিন্দাদের তৈরি বিশেষ এক ধরনের জুসের পাল্লায় পড়ে বিশাল আকৃতির এই ব্যাঙের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। তার টিটিকাকা ওয়াটার ফ্রগ দিয়ে যেই জুসটিকে তৈরি করা হয়, তাকে বলা হয়ে থাকে পেরুলিয়ান ভায়াগ্রা। এর প্রস্তুতপ্রণালীটাও বেশ অদ্ভুত। এজন্য অ্যাকুরিয়াম থেকে একটি ব্যাঙ নিয়ে প্রথমে এটিকে আছাড় মারতে থাকা হয় যতক্ষণ না সেটি মারা যায় কিংবা অজ্ঞান হয়ে যায়। 

এরপর ব্যাঙটির পেটের কাছের দুটো জায়গা কেটে তুলে ফেলা হয় পুরো চামড়া। চামড়াবিহীন সেই ব্যাঙ সিম, মধু, অ্যালোভেরা ও মাকা যা কিনা আন্দিজে পাওয়া এক প্রকার মূল যা শারীরিক শক্তি ও যৌনক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এসব কিছুকে একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করা হয়। এরপরে তৈরি হয় ঝাঁঝালো জুস। যা পানের লোভে দক্ষিণ আমেরিকায় ভিড় জমায় অনেক অনেক পর্যটক। কারণ এটি পান করলে কিছুটা মাদকতা অনুভব করা যায়। 

হাবুসু

একবার শুধু ভাবুন, আপনার সামনে বোতল ভর্তি পানীয় এবং সেই পানীয়ের মধ্যে কুণ্ডলী পাকানো সাপ দেখা যাচ্ছে। হাবুস হচ্ছে সেই পানীয় যার বোতলের মধ্যে আস্ত বিষাক্ত ভাইপার সাপ ছেড়ে দেয়া হয়। বিষের ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত হবেন না। পানীয়ের অ্যালকোহল সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করে দেয়। 

এই অদ্ভুত পানীয়ের জনপ্রিয়তা জাপান ছাড়িয়ে চীন, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইপার সাপ দীর্ঘদিন অর্থাৎ প্রায় এক বছর পর্যন্ত না খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সক্ষম। এদের সংগমকাল সুদীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়। 

হাবুসু পান করলে শারীরিক শক্তি ও যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হাবুসু প্রস্তুতকারীরা অনেক সময় বাজারজাত করার আগে বোতল থেকে সাপ বের করে ফেলেন। আবার কোনো দুঃসাহসী শূরা প্রস্তুতকারী সাপ বোতলে রেখে দেন, যেন সবাই দেখতে পারে। হাবুসু প্রস্তুতকারীরা এই ভাইপার সাপকে বোতলে প্রায় এক মাস বা এক বছর রেখে দেন। পরবর্তীতে এতে আরও উপাদান যোগ করা হয়।

হরিণের পুংজননেন্দ্রিয়ের ওয়াইন

প্রাণীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ ব্যবহারের ইতিহাস চাইনিজদের মধ্যে বহু পুরাতন। গত শতকের ৯০ দশকের তাদের ড্রাগ পোচ মারজান ব্রেনের এক কথাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কিছু অ্যাথলেটের ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের পেছনে কারিগরি হিসেবে তিনি একটি পানীয়ের কথা বলেছিল, যা কচ্ছপের রক্ত এবং শুঁয়ো পোকার মিশ্রণ দিয়ে বানানো হয়েছিল। 

রোগ নিরাময়ের জন্য চাইনিজদের প্রস্তুতকৃত ওষুধের মাঝে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পুরুষ হরিণের লিঙ্গ। হরিণের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রোডাকশন মেশিনটি তা জীবিত অবস্থায়ই দেহ থেকে অপসারণ করা হয়। তা না হলে নাকি সেটির ওষুধি গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর সেটি চাইনিজ নারীরা ছোট ছোট করে কেটে রোস্ট করে রোদে শুকাতে দেন। 

তাইওয়ানের নাগান জেলায় গর্ভবতী নারীরা নিজেদের এবং অনাগত সন্তানদের সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি এখনো খেয়ে থাকেন। তাছাড়া চাইনিজরা অ্যালকোহলে হরিণের এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ডুবিয়ে রেখে বিশেষ এক প্রকার পানীয় তৈরি করে। যা ডিয়ার পেনিস ওয়াইন নামে পরিচিত। হরিণের পুংজননেন্দ্রিয় দিয়ে তৈরি এই পানীয়ের মূল্য ১২ ইউএস ডলার। আর যদি পুরো দুই লিটারের বোতল কিনতে চান, তবে দাম পড়বে ৪৫৫ ইউএস ডলার। 


কাউ সোডা

অনেকেই গরুর উপাসনা করেন, তারা একে গোমাতা বলেন। তবে অনেকেই আছেন, গো-মূত্রও খেয়ে থাকে। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্যের জন্য এটি বেশ উপকারী। এখন তো বেশ কিছু কোম্পানিও আছে যারা গরুর মূত্র থেকে ড্রিংকস বানিয়ে থাকেন। এর বেশিরভাগই ভারতে দেখা যায়। 

তারা বেশ মজা করে এটি পানও করে থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন, সূর্যোদয়ের আগে সংগ্রহ করা গরুর মূত্র পান করাই শ্রেষ্ঠ। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, গর্ভবতী গরুর মূত্র সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর। কারণ এতে হরমোন রয়েছে। আরও বিশ্বাস করা হয়, গোমূত্রের ব্যবহারে ৪০ রকমের অনারোগ্য সমস্যার নিরাময় করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.