অদ্ভুত প্রাণী অ্যাক্সোলটল: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীরের কাটা অংশ গজাতে পারে

Odd বাংলা ডেস্ক: রহস্য আর বিচিত্রতার জালে জড়িয়ে আছে পৃথিবী। যার রহস্যময়তার শেষ নেই। সমুদ্রের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য বরাবরই মানুষকে হতবাক করেছে। তবে প্রাণীর ড্রাগন খ্যাত সামুদ্রিক প্রাণীর বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য আপনাকে হতবাক করবেই। গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণীটির নাম অ্যাক্সোলটল সালামদার। এটি এমন এক প্রাণী যাদের শরীরের কোনো অংশ কেটে বাদ দিলে টা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। 

একদল বিজ্ঞানী একবার ল্যাবে প্রাণীটির চোখদুটি কেটে বাদ দিয়ে ছিলেন পরবর্তীতে সেটা ৪৮ ঘণ্টায় পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাণীটির উপর গবেষণা চলছে যাতে ওই প্রাণীটির হরমোনকে ব্যবহার করে বিকলাঙ্গ মানুষদের নতুন জীবন দান করা যায়। জলের ড্রাগন বা মেক্সিকান চলন্ত মাছ নামে পরিচিত গিরগিটিসদৃশ উভচর প্রাণী অ্যাক্সোলটল। জলের তলায় সাচ্ছন্দ্য এই অদ্ভুত প্রাণীটি মাথার পাশে থাকা পাখনার মতো দেখতে কিছু ফুলকার সাহায্যে শ্বাস নেয়। এদের অসাধারণ একটি ক্ষমতা হচ্ছে-- কেটে যাওয়া অংশ নিজ থেকেই জন্ম নেবে।

সাদা, কালো, সোনালি-- হরেক প্রজাতির অ্যাক্সোলটল আছে। অধিকাংশ অ্যাক্সোলটলের রয়েছে গ্রিন ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন। যার জন্য অন্ধকারেও এদের শরীর থেকে সবুজ আভা বের হয়। এ সময় প্রাণীটিকে দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগলেও, অতিরিক্ত সময় ধরে অন্ধকারে থাকাটা অ্যাক্সোলটলের জন্য ক্ষতিকর। সর্বোচ্চ ১৮ ইঞ্চি উচ্চতার মাছটি পনের বছরেরও বেশি সময় বাঁচে। সাধারণত এর লম্বায় ১০-১১ ইঞ্চি হলেও পোষার ক্ষেত্রে সামনের দুটো পা-সহ ৩ ইঞ্চির অ্যাক্সোলটল কেনাই ভালো।

পোষাপ্রাণী হিসেবেও অ্যাক্সোলটলের তুলনা নেই। দারুণ জনপ্রিয়ও। দুটো বয়স্ক অ্যাক্সোলটলের জন্য নকল লতাপাতা, ঝোপ, বালু আর লুকানোর জায়গাসহ ২০-২৯ গ্যালন অ্যাকুয়ারিয়ামই যথেষ্ট। বাচ্চা একটা অ্যাক্সোলটলের জন্য ১০ গ্যালনের একটি অ্যাকুয়ারিয়াম যথেষ্ট হলেও বয়স্ক অ্যাক্সোলটলের জন্য সেটা একটু অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে। ঠাণ্ডা ও কালো জলেতে অভ্যস্ত এই মাছকে খুব ঠাণ্ডা বা গরম কোনো জলেই রাখা উচিত না। সেক্ষেত্রে অ্যাকুয়ারিয়ামের উষ্ণতা হতে হবে ৫০ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফানেহাইটের মাঝামাঝি। ৭২ ডিগ্রির উপরের তাপমাত্রা অ্যাক্সোলটলকে মেরেও ফেলতে পারে। 

অ্যাক্সোলটলের লাফ দেয়ার খ্যাতি আছে। তাই এটি পোষার ক্ষেত্রে অ্যাকুয়ারিয়ামের উপরে একটি প্লাস্টিকের শিট লাগিয়ে দেয়া ভালো। অ্যাক্সোলটলের অ্যাকুয়ারিয়ামের জলে সবসময়েই অর্ধেক রাখতে হবে। একটি সুস্থ অ্যাক্সোলটলের থাকার জায়গায় থাকতে হবে অ্যাকুরিয়াম বালু। কখনও সেখানে পাথর বা নুড়ি রাখা যাবে না। নাহলে সেসব নুড়ি মাছের পেটে আটকে গিয়ে ব্যথার সৃষ্টি করবে। অ্যাকুয়ারিয়ামে লুকানোর যথেষ্ট জায়গা, যেমন-- কমলা রংয়ের ছোট ফুলের পট, পিভিসি পাইপ, সবুজ গাছ, নকল গুহা ইত্যাদি থাকতে হবে।

অ্যাক্সোলটলের পক্ষে উজ্জ্বল আলো ক্ষতিকর। এ জন্য কম আলোর বাল্বের পাশাপাশি নকল ঝোপ দিতে হবে অ্যাকুয়ারিয়ামে। মাঝেমধ্যে অন্ধকারে রাখলেও কখনও ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি রাখা যাবে না। অ্যাক্সোলটলের সঙ্গে অন্য প্রজাতির কোনো মাছ রাখা যাবে না। অ্যাকুয়ারিয়ামে সবসময় একই বয়সের দুটি অ্যাক্সোলটল রাখতে হয়। না হলে বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলবে।

অ্যাক্সোলটল পরিষ্কার আর শান্ত জল পছন্দ করে। বাবল বা ঢেউ, কোনোটাই এদের জন্য ভালো নয়। তাই ঢাকনাযুক্ত পাত্রই এদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। পরিষ্কার জলের জন্য ওদের থাকার জায়গাও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। কেবল অ্যাকুয়ারিয়ামে জলভর্তি করে রেখে দিলেই এই প্রজাতির উভচর পোষা সম্ভব নয়। এটি পুষতে দরকার আলাদা কিছু ব্যাপার জানা। এদের খাবার ব্যাপারে সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে। ব্লাডওয়ার্ম আর ছোট চিংড়িমাছই অ্যাক্সোলটলের জন্য উপযুক্ত খাবার। বয়স্ক মাছকে ২-৩ দিন পরপর খাবার দিলেও ছোট অ্যাক্সোলটলকে প্রতিদিনই খাওয়াতে হবে।

৬ থেকে ৯ ইঞ্চি হওয়ার আগ পর্যন্ত অ্যাক্সোলটল বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে না। বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম মাছের পায়ের পাতা ময়লা হয়ে যায়। ঠোঁট লাল রং ধারণ করে। একবারে একটি মেয়ে অ্যাক্সোলটল এক হাজার ডিম দেয়। পোষাপ্রাণী হিসেবে অ্যাক্সোলটল খুবই বন্ধুপ্রবণ। তারা কাছের মানুষগুলোকে চিনতে ও তাদের খুব সহজেই ভালোবাসতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.