মানুষের মাংস ঝলসে খাওয়াই তার নেশা, একাই খেয়েছেন ৮০০ মানুষ!

Odd বাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর নরখাদক খলিলুল্লাহর কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। ১৯৭৫ সালের ৩ এপ্রিল। দৈনিক বাংলার একটি বক্স নিউজ পড়ে শিউরে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। ছবিতে দেখা যায় এক যুবক মরা একটি লাশের চেরা বুক থেকে কলিজা বের করে খাচ্ছে! সে মরা মানুষের কলজে মাংস খায়! শিরোনামে খবরটি ছাপা হওয়ার পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয় খলিলুল্লাহ নামের এই নরখাদককে। মানসিক চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে। ২০০৫ সালে মারা যায় সে।

এতো গেল বাংলাদেশের কথা, সারা পৃথিবী জুড়েই নরখাদকদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের পাওয়া গেছে ফিজি, আমাজন অববাহিকা, আফ্রিকার কঙ্গোতে। এমন কী নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মিলেছে নরখাদকের সন্ধান। ইউরোপের হল্যান্ডেও সন্ধান পাওয়া গেছে। শোনা যায় উগান্ডার স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক ইদি আমিনও নাকি নরখাদক ছিলেন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নরখাদকের খেতাবটি ফিজির সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রের দখলে।

প্রত্যেকটি মানুষকে খাওয়ার পর সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রে তার শিকারের স্মৃতিতে একটি করে পাথর সাজিয়ে রাখতো। তারপর খেয়ালখুশি মত গুনতে বসত, এ পর্যন্ত কটা মানুষ খেল সে! সে চাইত তার মৃত্যুর পর তাকে যেন এই পাথরগুলির পাশে কবর দেওয়া হয়। হয়েছিলও তাই। মৃত্যুর পর উদ্রে উদ্রেকে উত্তর ভিটিলেভুর রাকিরাকি এলাকার সেই পাথরের স্তূপের মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

১৮৪০ সালে  মিশনারি রিচার্ড লিথ আসেন ফিজিতে। তিনি উদ্রে উদ্রের সমাধির পাশ থেকে ৮৭২ টি এরকম পাথর  পেয়েছিলেন। লিথ মনে করেন আরও বেশি পাথর ছিলো সমাধির পাশে। পরবর্তীকালে, স্থানীয়রা নিজেদের প্রয়োজনে অনেক পাথর সরিয়ে নিয়েছিল। উদ্রের এক ছেলের সন্ধান পেয়েছিলেন লিথ সাহেব। তার নাম ছিল রাভাতু। সে তার বাবার মত নরখাদক ছিল না। সে লিথ সাহেবের কাছে স্বীকার করেছিল তার বাবা সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রে সত্যিই নরখাদক ছিল।

উদ্রে উদ্রের পেটে যাওয়া সমস্ত হতভাগ্যই ছিল, ফিজির আদিবাসী গোষ্ঠী সংঘর্ষে হেরে যাওয়া যুদ্ধবন্দী। এছাড়া, উদ্রে উদ্রের দলে থাকা রাকিরাকির অনান্য আদিবাসী সর্দাররা তাদের জীবিত বন্দী ও মৃত শত্রুর দেহ উদ্রে উদ্রের হাতে তুলে দিত। মৃতদেহগুলির সৎকারের জন্য নয়, স্রেফ খাওয়ার জন্য।

লিথকে উদ্রে উদ্রের ছেলে রাভাতু বলেছিল,  তার বাবা মানুষের মাংস ছাড়া আর কিছু খেত না। এবং  তার নরখাদক বাবা হতভাগ্য মানুষদের পুরো শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আগুনে ঝলসে খেত। একেবারে একটা দেহের সব মাংস খেতে না পারলে অর্ধভুক্ত দেহ্টি একটা বাক্সে তুলে রাখত। কিন্তু পরে পুরোটা খেয়ে নিত।

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর লরেন্স গোল্ডম্যান নরখাদক মানুষদের নিয়ে লিখেছিলেন একটি বই। সেই বইটিতে উদ্রে উদ্রে সম্পর্কে বিশদে লিখেছিলেন গোল্ডম্যান। অ্যানথ্রোপোলজি অফ ক্যানিবলিজম নামক বইটির শেষ লাইনে করেছিলেন একটি ভয়ানক মন্তব্য-নরখাদক মানুষগুলোকে আমরা সবাই ভয় পাই। কিন্তু আমি একই সঙ্গে তাদের প্রশংসা করব , কারণ ওরা শক্তির প্রতীক। নিজেদের বীরত্ব ওরা এভাবেই প্রমাণ করতে চেয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে। নরখাদকদের প্রশংসা করা নিয়ে ঝড় উঠেছিল পৃথিবীতে।

যাই হোক, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম নরখাদক মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি  দিয়েছে উদ্রে উদ্রেকে। জানলে খুশি হত উদ্রে উদ্রে। মানুষ খাওয়ার স্কোর হয়ত আরও বাড়ত। তবে এটা নিশ্চিত, গিনেস পুরস্কার গ্রহণের দিন, সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রে মঞ্চে উঠলে মঞ্চ-সহ স্টেডিয়াম খালি হয়ে যেত। কারণ সেধে  সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রের স্তূপের পাথর হতে কে চায়!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.