পৃথিবীর আদিমতম ফুলের জন্ম একশো কোটি বছর পূর্বে!
Odd বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীতে উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে কবে? আর সেটি কী ছিল? পৃথিবীতে উদ্ভিদ জীবনের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায়, কয়েক কোষী এক ধরনের শেওলার মাধ্যমে। সেই শেওলা থেকে কোটি কোটি বছরের অভিযোজনে পাওয়া গেছে আজকের উদ্ভিদজগৎ। এই উদ্ভিদজগতে আবার সব উদ্ভিদে বা গাছে ফুল ফোটে না।
যেসব গাছে ফুল ফোটে সেগুলোকে আমরা বলি সপুষ্পক উদ্ভিদ বা ফুল ফোটানোর গাছ। সপুষ্পক উদ্ভিদ পেয়েছি প্রায় চৌদ্দ থেকে পঁচিশ কোটি বছর আগের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে। কবে সেই আদিমতম ফুলটি ফুটেছিল এই পৃথিবীর বুকে, কোটি কোটি বছরের সেই রহস্য কে ভেদ করে সঠিক উত্তর দিতে পারে?
সম্প্রতি, একদল গবেষক খুঁজে পেয়েছেন প্রায় ১৭ কোটি ৪০ লাখ বছরের আদিম এক ফুলের জীবাশ্ম। সে যুগে এ পৃথিবীর বুকে ডাইনোসররা দাঁপিয়ে বেড়াতো। পৃথিবীর সেই আদিমতম ফুলকে শনাক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন (Nanjinganthus dendrostyla)। এটাকেই এখন বলা হচ্ছে পৃথিবীর আদিমতম ফুল গাছ। এই আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত প্রায় ১৪ কোটি বছর আগের ক্রেটাসিয়াস যুগের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের জীবাশ্ম সবচেয়ে পুরনো ফুল গাছ হিসেবে স্বীকৃত ছিল।
গবেষকরা ঠিক এখনো নিশ্চিত নন, এর চেয়েও পুরানো কোনো ফুল পৃথিবীতে আদৌ ছিল কিনা। এমনকি জীবাশ্ম বিশ্লেষনের পরও ঠিক বুঝতে পারছেন না কোথায় এর বাস ছিল। চীনের নানঝিং ইনস্টিটিউট অব জিওলজি অ্যান্ড প্যালেন্টোলজির অধ্যাপক ও লেখক কুইয়াং ফু জানিয়েছেন এ কথা। তবে গবেষক দল সেখানে অনেকগুলো ফুলের জীবাশ্ম দেখতে পেয়েছেন।
২০১৮ সালে ফু ও তার সহযোগী গবেষকেরা ১৯৮টি ফুলের ২৬৪টি জীবাশ্ম পরীক্ষা করেন। তারা চীনের দক্ষিণ জিয়াংশানে এই জীবাশ্ম-পাথরখণ্ড খুঁজে পান। চীনের ‘নানজিং’ জুরাসিক আমলের পাথরে গঠিত একটি অঞ্চল। তাই সেখানে পাওয়া জীবাশ্মটি জুরাসিক কালের বলে তাদের বদ্ধমূল ধারণা। অবশ্য শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা এ সিদ্ধান্তে আসেননি।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে তারা সেই জীবাশ্মের বয়স নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন। জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে ফুলটি দেখতে কেমন ছিল তারও একটি ধারণা উপস্থাপন করেছেন তারা। কম্পিউটারের সাহায্যে এঁকেছেন ফুলের ত্রিমাত্রিক ছবিও। ফুলটির ছিল চামচের মত পাপড়ি ও ফুলের কেন্দ্র থেকে উঠে আসা ডাঁটির মতো একটি গর্ভদণ্ড।
গর্ভাশয়টি সম্পূর্ণরূপে আবৃত ছিল বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা। এসব লক্ষণই হল যেকোনো ফুল থেকে ফল ও বীজ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। গবেষক দলের অভিমত, ফুলটি হয়তো আবৃতবীজী সপুষ্পক উদ্ভিদের ছিল। তবে এ বিষয়ে এটাই যে প্রথম গবেষণা, তা কিন্তু নয়। এর আগেও পৃথিবীর প্রথম ফুল আবিষ্কারের নেশায় গবেষণা চালিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। কেউ কেউ সফলও হয়েছিলেন।
চার বছর আগে ২০১৫ সালে একদল গবেষক দাবি করেন, একটি জলজ গাছের ফুল হলো পৃথিবীর প্রথম ফুল। ধারণা করা হয়েছিল, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১২ থেকে ১৩ কোটি বছর আগে এই পৃথিবীতে সেই গাছ ছিল। সে ফুলের পরাগায়ন হতো পানির সাহায্যে। মধ্য স্পেনে সে জীবাশ্মের সন্ধান মেলে। একালের Coontail উদ্ভিদকে দাবি করা হচ্ছে তার উত্তরসূরি হিসেবে। এই গাছ অ্যাকুরিয়ামে রাখা হয়। যা আবার গভীর জলাশয় ও হ্রদে জন্মে।
২০১৫ সালে গবেষণার ফল প্রকাশিত হলেও একদল গবেষক প্রায় ছয় বছর ধরে সেই গবেষণাকার্য চালিয়েছিলেন। সেই গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস-সাউথের গবেষক হার্ভে সকেট। তিনি বলেন, আসলে আমাদের সেই আবিষ্কারের রোমাঞ্চটা ছিল অনেকটা বিগ ব্যাংয়ের মতো। ফুলের শুরু হলো কী করে, তা আবিষ্কার করাই ছিল মূল লক্ষ্য। পৃথিবীর প্রথম সেই ফুল ঠিক কত বড় ছিল সেটা হয়তো বলা যাবে না। তবে ধারণা করা যেতে পারে তার আকার হয়তো এক সেন্টিমিটারের বেশি ছিল না।
সত্যিই বিস্ময়কর ছিল পৃথিবীর সেই আদিমতম ফুলের আবিষ্কার। সেই আদিম ফুল থেকে সারা পৃথিবীতে এখন ছড়িয়ে রয়েছে সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রায় তিন লাখ প্রজাতি। নতুন এই ফুলই যদি হয় আদিমতম ফুল, তাহলে ২০১৫ সালের আবিষ্কৃত Montsechia vidalii ফুলটি তার আদিমত্বের গৌরব হারিয়ে ফেলবে, সেটি এখন নিশ্চিত।
Post a Comment