তিন হাজার বছর ধরে জাপানের ১২৬ শাসক ছিলেন একই পরিবারের

Odd বাংলা ডেস্ক: সুপ্রাচীন সভ্যতার এঅধিকারী জাপান। জাতি হিসেবেও তারা খুবই সাধারণ। জাপানের সরকার প্রধান এখনো রাজারাই হন। বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে এখনো রাজাদের শাসন টিকে আছে তাদের মধ্যে জাপান অন্যতম। তবে আরো বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এখানে ২,৭০০ বছর ধরে একটি রাজ পরিবার শাসন করছে। এমনকি আগামী আরো কয়েক শতাব্দী এই পরিবার জাপানের শাসনভারের দায়িত্ব পালন করবে। কেননা শান্তিপ্রিয় এই মানুষগুলো এখনো রাজ পরিবারকে সম্মানের জায়গায় রেখেছেন।  

এশিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের রাজপরিবার দীর্ঘ ২,৭০০ বছর ধরে সে দেশের শাসন কার্য চালিয়ে আসছে। এই রাজপরিবারের পোশাকি নাম হল ‘ইম্পিরিয়াল হাউস অফ জাপান’। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৬৬০ সালে সম্রাট জিম্মু জাপানের রাজ বংশের সূচনা করেন। তার নেতৃত্বেই আজকের জাপানের পথচলার শুরু হয়। জাপানের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় এটাই মূলত সে দেশের সুনির্দিষ্ট কোনো রাজবংশ।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই একই রাজবংশের ১২৬ জন সম্রাট হয়েছেন। বর্তমানে নারুহিতো ১২৬ নম্বর সম্রাট হিসেবে জাপানের আনুষ্ঠানিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী জাপানে আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্র বর্তমান। সে দেশের রাজার কোনোরকম প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকলেও তাকে সংবিধান এবং দেশের আনুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী রাজার কাছে শপথ নিয়েই শাসনকার্য শুরু করেন।

জাপানিরা মনে করে তাদের প্রাচীন সূর্য দেবতা এমেতেরাশু ওমিকামির বংশধর হলেন প্রথম সম্রাট জিম্মু। সূর্য দেবতার কাছ থেকে পাওয়া তিনটি পবিত্র জিনিস- একটি তলোয়ার, একটি আয়না ও একটি রত্ন জিম্মুর কাছে ছিল। তাই তিনি জাপানের সম্রাট হয়ে উঠতে পেরেছেন। জাপানিদের মতে এই তিনটি পবিত্র জিনিস যার কাছে থাকবে সেই সম্রাট হয়ে ওঠার গর্ব অনুভব করবে। প্রাচীনকালে জাপানিরা মনে করত তাদের সম্রাট সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। এই তিনটি পবিত্র জিনিসকে সেই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তারা বিবেচনা করত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই রাজপরিবারের সদস্য হিরোহিতো সম্রাট ছিলেন। কিন্তু দেশের শোচনীয় পরাজয়ের পর তিনি জাপান বাসীকে আহ্বান জানান যাতে তারা হতাশায় ভেঙে না পড়ে নতুন করে জাপানকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। সম্রাটের এই ডাক জাপানিরা ফেলতে পারেনি। সেই জন্যেই পরমাণু বিধ্বস্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিল। এটা কোনও রাজনৈতিক নেতার আহ্বানে সম্ভব হত না বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। একমাত্র জাপানের সম্রাটকে সেই সময় বিশ্বাস করত সে দেশের মানুষ।

আধুনিক জাপানের ইতিহাসে হিরোহিতো দীর্ঘ ৬৩ বছর দেশ শাসন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর তার পুত্র আকিহিতো ১৯৮৯ সালে সিংহাসনে বসেন। দীর্ঘ ৩০ বছর সম্রাটের দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালে রাজার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন। গত ২০০ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম জাপান সম্রাট যিনি মারা যাওয়ার আগেই রাজার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এরপর তার বড়ো ছেলে নারুহিতো জাপানের সম্রাট নির্বাচিত হয়েছেন।

জাপানের বর্তমান রাজপরিবার আইন অনুযায়ী সম্রাটের পুত্র সন্তান একমাত্র পরবর্তী সম্রাট হতে পারবে। এবং পুত্রদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় হবে তারই সম্রাট হওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু বর্তমান রাজা নারুহিতোর কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তার ভাই ফুমিহিতো এই মুহূর্তে যুবরাজ পদে আছেন। হিসেব মত জাপানের পরবর্তী সম্রাট হবেন ফুমিহিতো’র একমাত্র পুত্র হিসাহিতো। সত্যি বলতে জাপান রাজপরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে অবস্থান করছেন হিসাহিতো।

রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাওয়ায় সে দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও যথেষ্ট চিন্তিত। তারা রাজপরিবার আইনে আদল বদল করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। এদিকে জাপানের রাজপরিবারের কোনো কন্যা সন্তান যদি সাধারণ মানুষকে বিবাহ করেন তবে তিনি আর রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন না। এটিও জাপানের রাজপরিবারের উত্তরাধিকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.