মাত্র ৪ বছর বয়সে গর্ভবতী!

Odd বাংলা ডেস্ক: একজন নারীর জীবনে মা হওয়া সবথেকে বড় সুখের ঘটনা। কিন্তু যে মেয়েটা নিজেই এখনও মায়ের কোলে ঘুরে বেড়ায় তার কাছে মা হওয়ার মত ঘটনা ঠিক কেমন হতে পারে? 

অবাস্তব মনে হলেও বিশ্বের বিরলতম ঘটনা হিসেবে মাত্র পাঁচ বছরেই মা হয়েছিলেন পেরুর লিনা মেদিনা। ১৯৩৯ সালে লিনা যখন তার প্রথম সন্তানের জন্ম দেন তখন তার বয়স কাঁটায় কাঁটায় ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন ছিল।

টিবুরেলো মেদিনা এবং ভিক্টোরিয়া লোসিয়ার নয় সন্তানের মধ্যে ছোট থেকেই লিনা অন্যদের তুলনায় একটু বাড়ন্ত ছিল। তবে সবাই হঠাৎ চিন্তায় পড়ে যায়, লিনার ক্রমশ বড় হতে থাকা পেট দেখে। চার বছর বয়স থেকেই দ্রুত ফুলে উঠছিল লিনার পেট। স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশঙ্কা করেছিল টিউমার রয়েছে তার পেটে। 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পিসকো হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন টিউমার নয় লিনার গর্ভে রয়েছে সাত মাসের সন্তান। অথচ লিনার নিজের বয়সই তখন ৫ বছর ৭ মাস। অর্থাৎ ৫ বছর হবার আগেই গর্ভবতী হয়েছিলেন লিনা।

এ ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তুললেও সবার নজরে আসে লিনার ওপরে হওয়া যৌন নির্যাতনের বিষয়টি। ছোট্ট লিনা এ ধরনের কোনো কিছু বলা বা বোঝার মত অবস্থাতেই ছিল না। তাই পুলিশ তদন্ত করে এ ঘটনার দায়ী হিসেবে লিনার বাবাকে গ্রেফতার করে৷ অবশ্য পরবর্তীতে লিনার বাবার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ার তাকে ছেড়ে দেয় তারা।

হাসপাতালের নথি থেকে জানা যায়, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিনার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যে চিকিৎসক লিনার অস্ত্রোপচার করেছিলেন তার নামানুসারে ছেলের নাম গেরার্ডো রাখা হয়। গেরার্ডো সম্পুর্ণ সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই আর দশটা শিশুর মতই জন্ম নিয়েছিল। জন্মের সময় গেরার্ডোর ওজন ছিল ২ কেজি ৭০০ গ্রাম।

লিনা আর গেরার্ডো ভাই-বোনের পরিচয়েই একসাথে বড় হতে থাকে। লিনার সাথেই সারাদিন খেলতো ছোট্ট গেরার্ডো। তবে ১০ বছর বয়সেই গেরার্ডোকে জানানো হয় লিনার প্রকৃত পরিচয়।

লিনা মেদিনার এই বিরল ঘটনা নিয়ে চিকিৎসকেরাও বিভিন্ন গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। তথ্যানুযায়ী জানা যায়, মাত্র ৮ মাস বয়সেই ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল লিনার। এর মানে তখন থেকেই লিনার শরীর প্রজননক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে উঠেছিল।

বিরল এই শারিরীক পরিবর্তনের নাম চিকিৎসা শাস্ত্রে "প্রিকসিয়াস পিউবার্টি" হিসেবে পরিচিত। আর এমনটি ঘটার কারণ সময়েই আগেই মস্তিষ্কের একটি অংশ থেকে যৌন হরমোন নিঃসৃত হওয়া। 

পরবর্তীকালে তার চিকিৎসক গেরার্ডো লোজাডার ক্লিনিকেই তিনি সেক্রেটারির কাজ করতেন। উপার্জনের টাকায় ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড়ও করেন লিনা। কিন্তু নিজের পরিস্থিতি নিয়ে ঘনিষ্ঠ বৃত্ত ছাড়া কারও সঙ্গেই আলোচনা করেননি তিনি।

চিকিৎসক গেরার্ডোর হাসপাতালেই কাজ শুরু করেন লিনা। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে বিয়ে হয় লিনার আর ১৯৭২ সালে দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেন তিনি। তবে লিনার প্রথম সন্তান গেরার্ডো অস্থিমজ্জা সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪০ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে মারা যান।

বর্তমানে ৮৭ বছর বয়সী লিনা মেদিনা পেরুতেই নিভৃতে বসবাস করছেন। তবে নিজের জীবনের এই আশ্চর্য ঘটনার বিষয়টি লিনা সর্বদাই এড়িয়ে চলেছেন। কখনো কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার বা মন্তব্য করেননি তিনি। তাই তার জীবনের অজানা এই অধ্যায়টি আজও অজানাই রয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.