গ্রামে জনসংখ্যার ঘটতি মেটাতে বাড়িতে পুতুল রাখেন তারা

Odd বাংলা ডেস্ক: জনসংখ্যা বৃদ্ধির যেমন কিছু অসুবিধা আছে তেমনি জনসংখ্যা কমে যাওয়ারও আছে। তেমনই এক অসুবিধায় জীবন পার করছেন শিকোকু গ্রামের মানুষ। প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষের জন্ম যেমন হবে তেমন মৃত্যুও হবে। তবে এই গ্রামে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা জন্মের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। তাই ধীরে ধীরে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে গ্রামটিতে। বর্তমানে এই গ্রামের বাসিন্দা মাত্র ২৭ জন। 

তবে জাপানের নাগোরো গ্রামে ঘুরতে গেলে মানুষের বদলে দেখা মেলে পুতুলের। গ্রামের নানা জায়গায় মানুষের অভাব পূরণ করছে পুতুল। নিঃসঙ্গতা কাটানোর উপায় হিসেবে একটির পর একটি পুতুল তৈরি করতে করতে গ্রামটি হয়ে উঠেছে পুতুলের।  সবথেকে কম বসতিপূর্ণ অঞ্চল হল শিকোকু একটি দ্বীপ । এই দ্বীপে অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর একটি গ্রাম রয়েছে যার নাম নাগোরো। এখানে এক সময়ে নাকি ৩০০ জন গ্রামবাসী থাকতেন তবে এখন তা কমে কমে ৩০ এর থেকেও কম হয়েছে। সেখানে শেষ যে শিশুটি জন্মেছে তার নাম সুকিমি আয়ানো।

তবে গ্রামটি জনশূন্য হলেও সেখানে যে পুতুলগুলো করে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত বাড়ি গুলোতে তাদেরকে দেখলে গ্রামটি লোকারণ্যে ভরপুর মনে হবে। হ্যাঁ, এই সুন্দর গ্রামের নিঃসঙ্গতাকে ভোলাতে সুকিমি নিজেই একটি উদ্যোগ নেয়। সে সেখানকার মানুষগুলোর আদলে গড়ে তোলে কিছু পুতুল তারপর। গ্রামের বিভিন্ন বাগান, দোকান, বাড়ি এবং স্কুলের শিক্ষার্থীও পুতুল। শিক্ষার্থীর অভাবে একসময় সেখানকার স্কুলটিও বন্ধ হয়ে গেছিল। তবে এখন আবার চালু করা হয়েছে স্কুলটি। কিন্তু সেখানে কোনো মানুষের শিশু নয়, পড়াশোনা করে পুতুল।  

নিশ্চয় মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে জাপানের নাগোরো গ্রাম এমন মানবশূন্য কবে থেকে? জাপানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিস্ময় জাগানো স্থাপত্য, প্রাচীন সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধরে রাখার অদম্য চেষ্টা সবকিছুই জাপানকে করেছে মোহনীয়। পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান জাপান। জাপান মূলত যৌগিক আগ্নেয়গিরি দিয়ে তৈরি একটি দ্বীপমালা। এটি ৬ হাজার ৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। অসংখ্য দ্বীপের এ দেশটিতে হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু আর শিকোকু সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এই চারটি দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও কম বসতির দ্বীপ শিকোকু। দ্বীপটির আয়তন ১৮ হাজার ৮০০ বর্গ কিলোমিটার। শিকোকুর ছোট্ট উপত্যকা লিয়ার পাশ দিয়ে শিকোকুর প্রধান নদী য়োশিনো বয়ে চলেছে। এই উপত্যকারই একটি অংশে অবস্থিত গ্রামের নাম ‘নাগোরো’। গ্রামটি দেখতে অপরূপ, ছবির মতো সুন্দর। অথচ ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামে সৌন্দর্য অবলোকন করার মানুষ নেই। গ্রামের অধিবাসীর সংখ্যা একসময় ৩০০-এর মতো থাকলেও এখন প্রায় জনমানবহীন একটি গ্রাম নাগোরো।

দিন দিন জনসংখ্যা কমছে জাপানে। এর প্রভাব পড়েছে নাগোরোতেও। কয়েক বছর আগের এক তথ্য থেকে জানা গিয়েছিল, ২০১৫ সালে নাগোরো গ্রামে বাস করতেন মাত্র ৩৫ জন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০-এ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। নাগোরো গ্রামে সর্বশেষ কোনো শিশুর জন্ম হয়েছিল প্রায় ১৯ বছর আগে। এখন মাত্র ২৭ জনের মতো মানুষ বেঁচে আছেন এ গ্রামে। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই মধ্যবয়সী বা তার চেয়ে বেশি বয়সী। 

১৯৫০-৬০ সালের দিকে নাগোরো গ্রামে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধ বানানোর পর পানির অভাব দেখা দিলে অনেকেই চলে গেল। যারা গ্রামে রয়ে গিয়েছিল, তারা নিজেদের সবজি চাষের জন্য নিজস্ব পানির পাম্প ব্যবহার করত। এখন গ্রামে একটি দোকানও নেই। সবচেয়ে কাছের দোকান অথবা হাসপাতালে যেতে গ্রামের বাসিন্দাদের আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হয়ে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। গ্রামের মধ্য দিয়ে কখনো দু-একটি বাসের আনাগোনা দেখা যায়, তবে বেশির ভাগ সময়ই বাস এ অঞ্চলে আসে না। নাগোরো গ্রামের সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশনে যেতেও সময় লাগে এক ঘণ্টার বেশি। যাতায়াতের ঝামেলার জন্যও গ্রামটি থেকে দূরে থাকেন অনেকেই। যারা গ্রাম থেকে শহরে চলে গেছেন, তাদের কারোরই নাগোরোতে ফিরে আসার ইচ্ছা নেই। অনেকেই হয়তো বছরে একবার আসেন অথবা কেউ কেউ একদমই আসেন না। কে জানে গ্রামের এই বয়স্ক মানুষগুলোর মৃত্যু হলে হয়তো একসময় আর কোনো মানুষের পদচারণাও হবে না এখানে। 

তবে যে কজন বাসিন্দা গ্রামে রয়ে গেছেন, তারা বয়স্ক বলে তেমন কোনো কাজও এখানে কেউ করেন না। এমন একটি দৃশ্য দেখে ভীষণ মন খারাপ হচ্ছিল সুকিমি আইয়ানোর। এখন তার বয়স ৬৮ বছরের মতো। শৈশবে তিনি যখন গ্রামে ছিলেন, তখন এখানে ৩০০ জনের মতো বাসিন্দা ছিলেন। পড়াশোনার জন্য নিকটবর্তী শহর ওসাকায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরে এসে গ্রামের দৃশ্য তাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। ওসাকা থেকে সুকিমি ফিরে আসেন ২০০২ সালে। বাবার অসুস্থতার জন্য তাকে দেখাশোনা করতে তার ফিরে আসা। কিন্তু এখানে এসে তিনি এক রকম স্তব্ধ হয়ে যান। মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক কমে গেছে গ্রামে। পরিচিত যাদের জীবিত রেখে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন। প্রতিবেশীদের অনেকেই জাপানের বড় শহরগুলোতে চলে গেছেন অর্থনৈতিক উন্নতির আশায়। পুরো গ্রাম ঘুরেও সবগুলো প্রিয় মুখ খুঁজে পেলেন না সুকিমি।

মন খারাপের নিঃসঙ্গ দিনগুলো এক রকম একাই কাটানো শুরু করলেন সুকিমি। অসুস্থ বাবা নিজ বাগানে বুনেছিলেন মুলা আর মটরশুঁটির বীজ। কিন্তু চারা বের হলেই পাখি সেগুলো খেয়ে ফেলত। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এক দিন নিজের বাগানের জন্য বাবার মুখের আদলে কাকতাড়–য়া বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন সুকিমি। ঠিক কাকতাড়–য়ার মতো নয় বলে পাখিরাও পুতুলকে মানুষ ভেবে ভুল করে বাগানে আর এলো না। ঠিক সে সময় সুকিমি চাইলেন গ্রামে মানুষ না থাকলেও সব জায়গা একেবারে মানুষবিহীন না থাকুক। এতে অন্তত মানুষের অভাবের দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে। সে আশা থেকেই তিনি শুরু করলেন পুতুল বানানোর কাজ। গ্রামের হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কথা স্মরণ করে একের পর এক পুতুল বানানোর কাজে হাত দিলেন সুকিমি। পুরনো সময়ের কথা সুকিমি সবচেয়ে বেশি মনে করতেন গ্রামে এসে। 

শুরুতেই তিনি একটি পুতুল বানিয়েছিলেন একজন মৃত প্রতিবেশীর আদলে, যার সঙ্গে সুকিমি রোজ কথা বলতেন। যেই মানুষগুলো হারিয়ে গেছে তাদের আদলে একের পর এক পুতুল বানানো শুরু করলেন তিনি। এই পুতুলগুলো বানানোর আগে গ্রামটি নিতান্তই সাধারণ এক গ্রাম ছিল। কেউ গ্রামটি নিয়ে ভাবত না। ২০১৪ সালে জার্মান ফিল্ম মেকার ফ্রিটজ স্কুম্যান ২০১৪ সালে সুকিমির পুতুলের কাজ নিয়ে ‘ভ্যালি অব ডলস’ অর্থাৎ ‘পুতুলের উপত্যকা’ নামে একটি ছোট ডকুমেন্টারি বানান। এরপর থেকেই বিশ্ববাসীর কাছে নাগোরো গ্রামটি নতুনরূপে পরিচিত হয়ে ওঠে।

২০০৩ সালে সুকিমি প্রথম পুতুলটি তৈরি করেন তার কৃষিজমির জন্য। এরপর প্রতিবেশীদের মুখের আদলে বানান আরও কটি পুতুল। বানানো শেষে পুতুলগুলো এমনভাবে প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনে রাখেন, দেখে মনে হয় সেগুলো একে অন্যের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠেছে সেই পুরনো দিনের মতো। হারানো মানুষগুলোর আদলে সুকিমি একের পর এক পুতুল বানিয়ে যেতে লাগলেন। শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার মতো করেই পুতুল বানিয়ে সাজিয়ে ফেললেন পুরো গ্রাম।  কোনো পর্যটক যদি নাগোরো গ্রামে ঘুরতে যান, হুট করে গ্রাম দেখে তারা বিস্মিত হয়ে যান। মাঠে কৃষিকাজ করতে থাকা কোনো কৃষক, নদীর পাড়ে গাছের ছায়ায় বসে থাকা সদ্য বিবাহিত জুটি, ছোট্ট মেয়েকে পাশে বসিয়ে কোনো বাবা হয়তো বড়শি হাতে মাছ ধরছেন, গায়ে কোট আর মাথায় টুপি পরে কয়েকজন মিলে হয়তো বাগানের কাজ নিয়ে আলোচনা করছেন এমন দৃশ্য নাগোরো গ্রামে এখন একদম সাধারণ। প্রতিটি দৃশ্যই একদম বাস্তব মনে হয় এখানে। পার্থক্য শুধু একটাই, এদের কারও মধ্যে প্রাণ নেই সবগুলোই পুতুল।

গ্রামে ফিরে এসে কোনো শিশুকেও দেখতে পাননি সুকিমি। এ নিয়েও তার আফসোস ছিল অনেক। যদি কোনো শিশু বা কিশোরের দেখাও তিনি পেতেন, তবে হয়তো তার সময়টা আরও ভালো কাটত। শিশুদের কোলাহল সবচেয়ে বেশি শোনা যায় স্কুলে। কিন্তু নাগোরো গ্রামের স্কুলে ছিল না কোনো শিশুর কোলাহল, দুরন্ত ছোটাছুটি। কোলাহলবিহীন, ধুলোমাখা, মাকড়সা আর পোকামাকড়ে ভরা স্কুলের জন্য সুকিমি ভাবতে লাগলেন কীভাবে প্রাণবিহীন স্কুলেও প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়। সেই ভাবনা থেকেই স্কুলভবনগুলোতেও সুকিমি ছাত্রছাত্রীদের আদলে বেশ কটি পুতুল বানিয়েছেন। বানানোর সময় পুতুলগুলোর মধ্যে দুষ্টুমি ভরা চেহারা দিয়েছেন। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, সেখানে আছে শিক্ষক, বাবা-মাসহ প্রয়োজনীয় সব চরিত্র। স্কুলের ১২টি ক্লাসরুমের প্রতিটিতে ঘুরতে গেলে দেখা যায়, শিক্ষক টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়া বোঝাচ্ছেন আর শিক্ষার্থীরাও বেশ মনোযোগের সঙ্গে তার কথা শুনছে। প্রতিটি ক্লাসরুমের বেঞ্চে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে মানুষরূপী পুতুলশিক্ষার্থী। তাদের সামনে বই, খাতা রাখা আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ হয়তো খাতায় দাগ কাটছে, কেউ বই পড়ছে, কেউবা পাশেরজনের সঙ্গে গল্প করছে। সুকিমির বানানো পুতুলগুলো দেখে যে কেউ এক মুহূর্তের জন্য হলেও এগুলোকে বাস্তব বলে ভুল করবেন। সাজানো স্কুলে প্রাণের স্পন্দন ছাড়া সবকিছুই আছে।

গ্রামে কমিউনিটি সেন্টারও রয়েছে পুতুলের জন্য। বিয়ে মানেই উৎসবের আয়োজন। অনেক মানুষ, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা আর দুজন নতুন মানুষকে ঘিরে সবার আগ্রহ। নাগোরো গ্রামে মানুষ না থাকলেও কমিউনিটি সেন্টারটি এখনো আছে। আর সেটি পুতুল দিয়ে সাজিয়েছেন সুকিমি। স্টেজে ওয়েস্টার্ন আর জাপানিজ পোশাকের নকশায় কাপড় পরানো হয়েছে বধূ আর বরকে। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ছয়জন ছোট বালক। পর্যটকরা এলে সত্যি বিয়ে না হোক, পুতুলের বিয়ে দেখে যেতে পারেন।

সুকিমি কীভাবে পুতুল বানান সেই কাজ যদি সরাসরি কেউ দেখতে চান, তবে সেই সুযোগও আছে। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসের চতুর্থ বুধবার সবাইকে কাজ শেখানোর জন্য সময় দেন সুকিমি। সঙ্গে করে অবশ্যই নিজস্ব সেলাই করার সরঞ্জাম এবং কাপড় নিয়ে আসতে হবে। এ কাজ শেখানোর সময় সুকিমি জানান পুতুল বানাতে কী কী জিনিস ব্যবহার করেছেন তিনি। যেমন পুতুলের প্রথম স্তরের জন্য কেমন কাঠ, মাথার জন্য কী ধরনের তুলা, চামড়ার জন্য কেমন নমনীয় কাপড়, চোখের জন্য কেমন বোতাম, প্রতি পুতুলের দেহ বানাতে কতগুলো তার ও কী ধরনের ৮০ রোল কাগজ লাগে এসবের ব্যবহার সুকিমি দেখান হাতে-কলমে। পুতুলের গায়ে যে কাপড় জড়ানো হয়, সেগুলো সাধারণত পুরনো হয়। এই কাপড়গুলো সুকিমি জোগাড় করেন জাপানের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া দান করা কাপড় থেকে। এ ছাড়া যারা আগে গ্রামে বাস করতেন, তাদের ব্যবহার করা কাপড়গুলোও ব্যবহার করা হয়। নাগোরো গ্রামের প্রতি বাড়ির অন্তত একজনের করে হলেও পুতুল বানিয়েছেন সুকিমি।

প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম রবিবার পুতুল নিয়ে বার্ষিক একটি আয়োজনও করা হয়। সাত বছর ধরে এ আয়োজন করা হচ্ছে। নানা দেশের পর্যটকের কাছে এই আয়োজনটি বেশ পছন্দের। এ ছাড়া সুকিমির বাড়িতে কেউ যদি বেড়াতে যেতে চান, কখনোই নিষেধ করেন না তিনি। সুকিমির বাড়িতে গেলে দেখা মিলবে তার মায়ের। উজ্জ্বল দৃষ্টি নিয়ে তিনি বসারঘরে বসে থাকেন সব সময়। সুকিমি রোজ তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। শুধু পার্থক্য, সুকিমির কথার কোনো জবাব মা দেন না।

চার ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন সুকিমি। জাপানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওসাকায় যখন তার বাবার একটি খাবারের কোম্পানিতে চাকরি হয়, তখন তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে সেখানে চলে যান। ওসাকাতেই তার বিয়ে হয় এবং দুই সন্তানকে সেখানেই বড় করে তোলেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর, তার বাবা নাগোরোতে ফিরে আসেন শ্বশুর এবং কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া স্ত্রীর যত্ন নেয়ার জন্য। ১৬ বছর পর, বাবা অসুস্থ হলে সুকিমি ফিরে আসেন নিজের বাবার যত্ন নিতে। তার বাবার বয়স ৯০। তিনি বর্তমানে নাগোরোর সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।

নিজের গ্রামের কথা বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দিতে ২০১৪ সালে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে সুকিমি। এরপরই তা একটি পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠে। নাগোরো গ্রামটি পরিচিতি পাওয়ার পর, অনেক পর্যটক সুকিমির সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। তার কাছে সবার প্রশ্ন ছিল, তিনি কি কখনো নাগোরো ছেড়ে ওসাকায় ফিরে যেতে চান? সুকিমির জবাব ছিল, ‘বাবার অসুস্থতায় তার সেবা করার জন্যই গ্রামে ফিরে এসেছিলাম আমি। যদি আমি অসুস্থ বা বয়স্ক হয়ে যাই, তখন হয়তো ওসাকায় সন্তান বা আত্মীয়দের কাছে যাব। কিন্তু যত দিন আমি সুস্থ আছি, তত দিন নাগোরোতেই থাকতে চাই, পুতুল বানিয়ে যেতে চাই।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.