মৃত্যুর সময় সঙ্গ দিত এই ‘বিস্ময়’ কুকুর!


Odd বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীতে মনিব ভক্তের তালিকার শীর্ষ প্রাণী কুকুর। মনিবের নিরাপত্তাসহ চমকপ্রদ সব কার্যে অনবদ্য পারদর্শী এ প্রাণীকূল। এক সময় মনিব ভক্ত কুকুর ব্যক্তি স্বার্থে বার্তা আদান-প্রদান ও ছোটখাটো যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু প্রথমবার বিশ্বযুদ্ধে অনন্য ইতিহাস গড়ে তুলেছিল ১০ হাজার ‘বিস্ময়’ কুকুর। ব্যক্তির স্বার্থের সীমা পেরিয়ে জনসেবায় নিয়োজিত হয় এসব কুকুর, যা আজও মানুষকে বিমোহিত করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সহায়তার ভূমিকা পালন করায় ১০ হাজার বিস্ময় কুকুর ‘সাহায্যকারী কুকুর’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছিল। 

১০ হাজার কুকুর প্রস্তুতের প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি

জাঁ বাঙ্গার্টজ ছিলেন একজন জার্মান পশুর চিত্রশিল্পী। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন অসংখ্য পশু সম্পর্কিত বইয়ের লেখক। ১৮৯০ সালে ‘জার্মান অ্যাসোসিয়েশন ফর মেডিকেল ডগস’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙ্গার্টজ। এ প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে মেডিকেল কুকুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।

যে উদ্দেশ্যে কুকুরকে প্রশিক্ষণ

জাঁ বাঙ্গার্টজ ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের (১৮৭০ সালের ১৯ জুলাই থেকে ১৮৭১ সালের ১০ মে পর্যন্ত স্থায়ী) সময় নিখোঁজ সৈন্যদের সংখ্যা দেখে বিস্মিত হন। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের খুঁজতে একটি উপায় সন্ধান করেন। পশু প্রাণী নিয়ে ছবি আঁকা ও বই লেখার কারণে প্রথমেই তার মাথায় কুকুরের কথা আসে। যেই ভাবনা সেই কাজ। এরপর থেকেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের খুঁজে বের করতে কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। মূলত উনিশ শতকের শেষ দিকে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের সন্ধানের উদ্দেশ্যে জার্মান সেনাবাহিনী প্রথম কুকুর প্রশিক্ষণ দেয়।

যেভাবে কাজ করতো ‘সাহায্যকারী’ কুকুর
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্দিষ্ট সমাজ ও দেশে সেবা দেয়ার জন্য কুকুরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল জাতীয় রেড ক্রস সোসাইটি। একটি প্রশিক্ষিত কুকুরের সঙ্গে স্যাডেল ব্যাগ দেয়া হতো। এ ব্যাগ পানি, অ্যালকোহল ও প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ দ্বারা সজ্জিত থাকতো। একজন আহত সৈনিক কুকুরের সঙ্গে থাকা স্যাডেল ব্যাগের উপকরণ দ্বারা নিজের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারতেন। 

যেসব জটিল প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত ছিল ‘সাহায্যকারী’ কুকুর

কুকুরগুলোকে নানাভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছিল। এরমধ্যে নির্জন স্থান দিয়ে নীরবে চলাফেরা করার দক্ষতা অর্জন করে সেসব কুকুর। এজন্য শত্রু পক্ষের লোকদের উপেক্ষা করে সাধারণত রাতের বেলা আহত সৈন্যদের জন্য সাহায্য সামগ্রী নিয়ে যেতো। এগুলো অল্প এবং মারাত্মক আহত সৈন্যদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতো। প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো যুদ্ধের ময়দানে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাযুক্ত আহত সৈন্যদের অবস্থান শিবিরের চিকিৎসকদের জানান দিতো।

যে রহস্যে পারদর্শী ছিল সাহায্যকারী কুকুর

একজন আহত সৈনিককে খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বহন করা স্যাডেল ব্যাগের চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করাই কুকুরগুলোর প্রধান দায়িত্ব ছিল। অনেক সময় আহত সৈন্যের অবস্থা খুবই গুরুতর থাকলে প্রশিক্ষিত কুকুর ওই সৈনিকের ইউনিফর্মের একটি অংশ ছিঁড়ে শিবিরে পৌঁছে দিতো। এর ফলে ওই গুরুতর সৈন্যকে উদ্ধার করা যেতো। কখনো কখনো প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো আহত সৈন্যদের নিরাপদ স্থানে টেনে আনতো। অনেক সময় তারা একজন মরণাপন্ন সৈনিককে অন্তিম সময়েও সঙ্গ দিতো।

১০ হাজার কুকুর বাঁচিয়েছে হাজারো প্রাণ
জামার্নির পাশাপাশি ফরাসিরাও প্রশিক্ষিত কুকুর যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে। ‍দুদেশের প্রায় ১০ হাজার প্রশিক্ষিত কুকুর যুদ্ধক্ষেত্রে হাজারো জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। কমপক্ষে দুই হাজার ফরাসি ও চার হাজার জার্মান সৈন্যসহ হাজারো জীবন বাঁচাতে কুকুরগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রয়েছে। 

‘ক্যাপ্টেন ও প্রুস্কোর’র রেকর্ড

ক্যাপ্টেন ও প্রুস্কোর নামের দুটি কুকুর বেশি সংখ্যক সৈন্যকে সেবার আওতায় আনতে সক্ষম হয়। ক্যাপ্টেন একদিনে ৩০ জন আহত সৈন্যকে খুঁজে আনার রেকর্ড গড়ে। আর প্রুস্কো পুরো যুদ্ধে ১০০ জনকে খুঁজে আনতে সক্ষম হয়। প্রুস্কো আহত সৈন্যদের টেনে নিরাপদ স্থানে রাখার জন্যও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কুকুরদের আত্মত্যাগ

জার্মান ও ফরাসির প্রশিক্ষিত কুকুরগুলোকে মেডিকেল বা আহতদের সেবার কুকুর বলা হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেবা দিতে গিয়ে অনেক সাহায্যকারী কুকুর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দেয়। কুকুরগুলোর আত্মত্যাগ জার্মান ও ফরাসি সৈন্যদের মাঝে বিস্ময় অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল। আধুনিক বিশ্বে যুদ্ধে কুকুরের ব্যবহার সীমিত হয়েছে। কিন্তু নানা উপায়ে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে সখ্য ভাব বজায় রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.