Odd বাংলা ডেস্ক: বিড়াল দেখলেই কুকুর তাড়া করে কেন? এমন প্রশ্ন নিশ্চয় আপনার মনে কোনো না কোনো সময় উদয় হয়েছে। আসলে কুকুর-বিড়াল একে অপরকে অপছন্দ করে। এমন ঘটনা সচরাচর অনেক দেখা যায়। তবে এটা কী কুকুরের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে? কেননা বাড়িতে পোষা কুকুর-বিড়াল একসঙ্গে বন্ধুর মতো থাকছে, এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে। তাহলে এর মূল রহস্যটা আসলে কী?
নিশ্চিতভাবেই এটি প্রবৃত্তি বলে জানান চিউ ডটকমের সিনিয়র পশুচিকিৎসক ডা. যিশু আরামেন্দী। তিনি বলেন, কিছু কুকুরের সহজাত আচরণের অংশ হিসেবে বিড়ালদের তাড়া করার প্রবণতা থাকতে পারে। অনেক কুকুরের পূর্বপুরুষ নেকড়ে যাদের জন্মগতভাবেই শিকার প্রবৃত্তি রয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এটি কুকুরের মধ্যে প্রকাশ পায়, ফলে ছোট এবং গতিযুক্ত জিনিসগুলোকে তাড়া করে থাকে।
ডা. আরামেন্দীর মতে, অন্যান্য কুকুরের তুলনায় কিছু নির্দিষ্ট জাতের কুকুরের এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যেমন- শেফার্ড, ক্যাটল ডগ, রিট্রিভার, পয়েন্টার কুকুর। এসব পোষা কুকুরের তাড়া করার প্রবণতা বেশি থাকতে পারে। তবে এই সহজাত আচরণের মানে এই নয় যে, কুকুরগুলো বিড়ালদের খুবই অপছন্দ করে থাকে। কাঠবিড়ালি এবং খরগোশের মতো ছোট প্রাণীগুলোও কুকুরকে তাড়া করার প্রবৃত্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি খেলার বল বা অন্যান্য নির্জীব কিছুরও এক্ষেত্রে ভূমিকা থাকতে পারে।
মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে কুকুরের খ্যাতি জগত জোড়া হলেও বিড়ালের পরিচিতি কিন্তু অনেকটাই এর উল্টো। দেখতে আদুরে ও শৌখিন স্বভাব হবার কারণে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে বিড়ালের চাহিদা অনেক। তবুও মানুষের কাছে ততটা প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি কুকুর, যতটা পেরেছে কুকুর। নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করা এই পশুটি অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর হিসেবেও পরিচিত।
এবার জেনে নিন বিড়াল ও কুকুরের অদ্ভুত সব আচরণের কারণগুলো-
> বিড়ালের পানি ভীতি রয়েছে। বিড়াল কেন পানিকে ভয় পায় এ বিষয়টি অনেকেরই প্রশ্ন। মূলত এ বিষয়টি বহুকাল আগে থেকেই বিড়ালের আচরণে রয়ে গেছে। বিড়ালের পশম ভিজে গেলে কুকুরের মতো সহজে শুকায় না। এ কারণে বিড়ালকে বাড়তি সময় নিয়ে পানি শুকাতে হয়। ফলে এ বিষয়টি বিড়ালের স্বভাবের অন্তর্গত হয়ে গেছে। কিছু বিশেষজ্ঞ অবশ্য বলেন, বিড়াল শক্ত স্থানের ওপর দাঁড়াতে পছন্দ করে এবং পানির মতো জিনিসকে তারা এড়িয়ে চলতে চায়। কিছু কুকুরও বিড়ালের মতো পানিকে ভয় পায়।
> অনেকেই বিড়ালকে ঘন ঘন স্ট্রেচ করতে দেখেন। তবে এর কারণ জানেন কি? মানুষ যে কারণে স্ট্রেচ করে বিড়ালও সে কারণে স্ট্রেচ করে। এটি রক্তচলাচল বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিড়াল দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়। আর ঘুমানোর সময় বিড়ালের রক্তচাপ কমে যায়। ফলে স্ট্রেচ করলে তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসে।
> ঘুমানোর আগে কুকুর এক চক্কর ঘুরে নেয়। কুকুরের এ আচরণের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, প্রাচীনকাল থেকেই কুকুরের এ অভ্যাস রয়েছে। কুকুর যখন জঙ্গলে ঘুমাতো তখন ঘাস ও জঙ্গলগুলোকে নিচু করে নিয়ে তার ওপর ঘুমাতে হত। আর এজন্য এক চক্কর ঘুরে নিত তারা। এখনো সে অভ্যাস রয়ে গেছে কুকুরের।
> বিড়াল তাদের মল লুকিয়ে রাখে। অনেকেই বিড়ালের এ আচরণটির সঙ্গে পরিচিত। বিড়াল মাটিতে বা বালুতে গর্ত করে সেখানে মল ত্যাগ করে। এরপর তা ঢেকে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিড়াল তার পদচারণার চিহ্ন লুকাতে চায়। শত্রুরা যেন তার অবস্থানের জায়গা সম্পর্কে জানতে না পারে সেজন্য তারা এ পদক্ষেপ নেয়। এছাড়া উন্মুক্ত মল থেকে গন্ধ ছড়ায় এবং তা তার শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে উপস্থিতি জানিয়ে দিতে পারে।
> অনেক পোষা বিড়ালই মৃত ইঁদুর ও অন্যান্য প্রাণী বাড়িতে নিয়ে আসে। আর এর কারণ হিসেবে জানা যায়, বিড়ালের জন্মগত শিকারী স্বভাবের কথা। তারা ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি ছোট প্রাণী শিকার করে এবং তা বাড়িতে এনে খায় বা তার ছানাদের খাওয়ায়। এখন বিড়াল যদি সে প্রাণীগুলো নাও খায় তার পরেও তা বাড়িতে নিয়ে আসে।
> কুকুর কখনো চকলেট খায় না। চকলেটে থিব্রোমাইন ও ক্যাফেইন রয়েছে। এগুলো কুকুরের জন্য বিপজ্জনক। কুকুর চকলেট খেলে তার বমি ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
> বাড়িতে বিড়াল থাকলে একটি বাক্স নিয়ে দেখতে পারেন। বিড়াল এটিকে বাড়ি হিসেবে বানাবে কিংবা এটি নিয়ে খেলবে। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিড়াল প্রাচীনকাল থেকেই ছোট ছোট স্থানে বসবাস করে অভ্যস্ত। আর এ ধরনের স্থানে তার পক্ষে শত্রুর চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে থাকা সহজ। এ কারণেই বিড়াল বাক্স পছন্দ করে।
> আমরা অনেকেই কুকুরকে ঘামতে দেখি না। যদিও কুকুর ঘামে। তবে মানুষের চেয়ে কম ঘামে তারা। ঘাম মূলত তাদের ত্বকে জমা থাকে এবং সেখান থেকে বাষ্প হয়ে যায়। মানুষের মতো গড়িয়ে পড়ে না।
> কুকুর কেন গন্ধ শুকে? প্রায়ই কুকুরকে একে অন্যের গন্ধ নিতে দেখা যায়। অনেক কুকুর আবার একে অন্যের পশ্চাতদেশের গন্ধ শুকতে খুবই পারদর্শী। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। কিন্তু কী কারণে এ আচরণ? এ প্রসঙ্গে গবেষকরা বেশ কিছু কুকুরকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এতে তারা জানতে পেরেছেন, কুকুরেরা একে অন্যের গন্ধ শুকে তথ্য সংগ্রহ করে। আর এটি তাদের পারস্পরিক যোগাযোগেরও একটি মাধ্যম।
> বিভিন্ন কুকুরকে মানুষের বা প্রাণীর মল খেতে দেখা যায়। আর এর কারণ হিসেবে জানা যায় কুকুরের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে।
> বিড়াল কী কুকুরের তুলনায় স্মার্ট? বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন নাই। কারণ কুকুর ও বিড়াল দুটি ভিন্ন প্রাণী। এদের মধ্যে বিড়ালের দেহের ওজনের ০.৯ শতাংশ মস্তিষ্ক হলেও কুকুরের দেহের ওজনের ১.২ শতাংশ মস্তিষ্ক।
> কুকুরকে আমরা সবাই লেজ নাড়তে দেখি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কিছু কুকুর ইতিবাচক অনুভূতি হলে বাম বা ডান একটি নির্দিষ্ট দিকে লেজ নাড়ে। আবার নেতিবাচক অনুভূতি হলে তারা অন্য দিকে লেজ নাড়ে। এটি নির্ভর করে কুকুরটির স্বভাবের ওপর।
> প্রায়ই কুকুরকে দেখা যায় লেজ তাড়া করতে। এজন্য অনেক সময় একদিকে ঘুরতে থাকে কুকুর। এটি মূলত কুকুরের সময় কাটানোর একটি উপায়। কুকুর খেলাধুলা করতেও এমনটা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
> বিড়ালকে প্রায়ই খাওয়ায় অনিহা দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, বিড়ালের সুস্থ থাকার জন্য খাবারের নির্দিষ্ট অনুপাত ঠিক রাখতে হয়। অর্থাৎ এক থেকে ০.৪ অনুপাতে বিড়ালের প্রোটিন ও ফ্যাট গ্রহণ করতে হয়। এ কারণে বিড়ালের প্রায়ই খাবারে অনিহা কিংবা বেছে খেতে দেখা যায়।
> ঘুমের সময় কুকুরের নড়াচড়া ও অন্যান্য আচরণ দেখে গবেষকরা অনুমান করেছেন, কুকুর স্বপ্ন দেখে। এছাড়া কুকুরের ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ও রয়েছে।
> অনেক আদুরে বিড়াল মানুষের গায়ে মাথা ও দেহ ঘষে। আর এটি তারা করে কারো সঙ্গে যদি একাত্ম হয় তখন। এক্ষেত্রে বিড়ালের নিজের দেহের গন্ধ আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ারও একটি উদ্দেশ্য থাকে। বিড়ালের গন্ধ গ্রন্থি থাকে চোখের ওপরে কানের ভেতর।
> কুকুরের মতো বিড়ালও মানুষের সঙ্গে অনেক ধরনের যোগাযোগ করে, তবে সেটা শব্দ ব্যবহার না করে শুধুমাত্র শরীরী ভাষার মাধ্যমে। বিড়ালের আচরণ নিয়ে পিএইচডি করা গবেষক ক্রিস্টিন ভিটালে বলেন, মানুষের পক্ষে কুকুরের তুলনায় বিড়ালের শরীরী ভাষা বোঝা অনেক কঠিন।
বিড়ালকে তাড়া করা থেকে আপনার কুকুরকে কীভাবে নিবৃত্ত রাখবেন?
সহজাত আচরণের বিরুদ্ধে যাওয়া কোনো সহজ ব্যাপার নয়। তবে এটি করা যেতে পারে। বিড়ালকে তাড়া করার অভ্যাস সত্যিকার অর্থেই এটা নয় যে, আপনার কুকুরটি খারাপ। ডা. আরামেন্দীর মতে, আপনার কুকুরের বিড়াল বা অন্য কোনো প্রাণীকে তাড়া করার সময় যে অনুভূতি হয় তার ওপর খুব কম নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। তবে আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখবেন এবং এমন অভ্যাস প্রশ্রয় দেবেন, তা উচিত হবে না।
যদি বিড়াল, কাঠবিড়ালি বা খরগোশকে আপনার কুকুর ঘন ঘন তাড়া করে এবং এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আপনার কুকুরের প্রশিক্ষণের জন্য কোনো প্রাণী আচরণ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। এটি এমন একটি সমস্যা যা আপনার নিজের পক্ষে সামলানো কঠিন হতে পারে।
Post a Comment