জোন অফ ডেথ! এখানে খুন করলেও নেই কোন শাস্তি!
Odd বাংলা ডেস্ক: অপরাধ করে ছাড় পাওয়া যায় না এমন কোন জায়গা পাওয়া যাবে না। কিন্তু জেনে অবাক হবেন; এই পৃথিবীতে এমনও একটি জায়গা আছে যেখানে চুরি, ডাকাতি তো মামুলি ব্যপার, খুন করলেও কোন সাজা হয় না।
আক্ষরিক অর্থেই সেটি ‘জোন অব ডেথ’ নামে পরিচিত। আমেরিকার ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্যের ৫০ বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে এই ‘জোন অব ডেথ’। জায়গাটি দেশটির ইদাহো জেলার অধীনে।
আমেরিকার সংবিধানে আইনের এমন ফাঁক থেকে গিয়েছে যে এই ৫০ বর্গ মিটার এলাকায় কেউ খুন করেও তার সাজাও হবে না। আমেরিকার ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্য আসলে ইউমিং জেলা আদালতের অধীন। আবার ওই অরণ্যের মাত্র ওই ৫০ বর্গ মিটার এলাকা ছাড়া পুরোটাই ইউমিং জেলায় অন্তর্গত। শুধু ওই অংশটুকুই ইদাহো জেলার অন্তর্গত।
ষষ্ঠবার সংশোধিত আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, কোনো অপরাধমূলক অভিযোগের বিচার করার জন্য নির্বাচিত জুরিদের ওই রাজ্য এবং ওই জেলার নাগরিক হতে হবে। এতেই ঝামেলা বাধে। এখানেই বিচারব্যবস্থাকে ফাঁকি দেয়ার কৌশল লুকিয়ে রয়েছে। পার্কের ওই ৫০ বর্গ মিটার অঞ্চল যা ইদাহোর অধীন কোনো মানুষের বসতিই নেই। আসলে পার্কের মধ্যে ইদাহো জেলার যেটুকু অংশ আমেরিকার ইউমিং জেলা আদালতের আওতায় রয়েছে সেটি ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, এই অঞ্চলে কোনো অপরাধ হলে তার বিচার করবেন ইদাহো জেলার ওই অঞ্চলের মধ্যে বাস করা জুরিরা। এখন যেহেতু পার্কের অন্তর্গত ইদাহো জেলার অংশে কোনো বসতিই নেই, তাই সংবিধান অনুযায়ী এই অংশের অপরাধের বিচার করারও কেউ নেই। ফলে একজন খুন করেও পার পেয়ে যেতে পারে অবলীলায়।
এই অঞ্চলের বিচারব্যবস্থার ফাঁক প্রথম চোখে পড়ে মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রায়ান সি কাল্টের। তিনি দেখেন ওই অঞ্চলে জুরি গঠন করার জন্য কোনো নাগরিকই থাকেন না। ফলে যেকোনো ব্যক্তি মারাত্মক অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাবেন। এমনকি খুন করলেও সাজা দেয়ার কোনো উপায় নেই।
প্রশাসনের নজর কাড়ার জন্য এই অঞ্চলকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেন কাল্ট। উপন্যাসের নাম দেন ‘দ্য পারফেক্ট ক্রাইম’। ২০০৫ সালে সেটি প্রকাশিত হয়। কাল্টের আশঙ্কা ছিল তার উপন্যাস পড়ার পর বিচারব্যবস্থার এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে অনেকেই অপরাধ করার জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিতে পারেন।
ওই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর কাল্ট ভেবেছিলেন প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে। আইনের এই ফাঁক ভরাট করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। কাল্ট নিজেই আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্যের ওই অংশটুকু ইউমিংয়ের অধীন থেকে মুক্ত করে তা ইদাহো জেলা আদালতের অধীন করার আবেদন করেন তিনি। আইনজীবীও পাত্তা দেননি কাল্টকে।
২০০৭ সালে এই অঞ্চল নিয়ে আরো উপন্যাস প্রকাশিত হয়। লেখক সি জে বক্স সেটি লিখেছিলেন। নাম দেন ‘ফ্রি ফায়ার’। প্রশাসনের নজর কাড়তে সফল হয় এই উপন্যাসটি। উইমিংয়ের সেনেটর মাইক এনজি এই ফাঁক বন্ধ করতে সচেষ্টও হয়েছিলেন। কিন্তু তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনিও।
তবে আইনের ফাঁকফোকর সামনে আসার পরও তেমন কোনো অপরাধ ঘটেনি এই অঞ্চলে। ২০০৭ সালে বক্সের উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর এক চোরাশিকারি জেনেবুঝেই এখানে ইক প্রজাতির একটি হরিণ শিকার করেন।
এই মামলার শুনানি চলে উইমিং জেলা আদালতে। কিন্তু আইন অনুযায়ী তা হওয়ার কথা ছিল না। এরপর অভিযুক্ত শিকারি লেখক কাল্টের উপন্যাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এর বিরোধিতা করেন। যদিও তাতে কাজ হয়নি। বিচারকেরা তার যুক্তিকে গুরুত্ব দেননি। তবে জামিন পেতে তার কোনো অসুবিধাও হয়নি।
সেই আইনের ফাঁক আজও একইভাবে থেকে গিয়েছে। তবে এই ফাঁক কাজে লাগিয়ে নিরন্তর অপরাধের কথা সামনে আসে না।
Post a Comment