সিনেমার বাইরে সত্যিই একজন জমিদার ছিলেন ছবি

Odd বাংলা ডেস্ক: ১৯০০ সালে জন্ম নেওয়া মানুষটি বাংলা ছবিকে হাত ধরে পৌঁছে দিয়েছেন আধুনিকতার আঙিনায়, বললে ভুল হবে কি? আর মঞ্চের ছবি বিশ্বাসও তো শুধু পটে নয়, ইতিহাসেও লেখা। বাঙালিরা শিল্প নিয়ে কথা কইতে গেলে ‘যুগ’ শব্দটি বলতে বড় ভালবাসেন। রবীন্দ্র যুগ, অহীন্দ্র যুগ। সে কালের থিয়েটার-ভক্তরা বলেন, অহীন্দ্র চৌধুরী-শিশিরকুমার ভাদুড়ীর পর বাংলার মঞ্চে ছিল ছবি বিশ্বাস যুগ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুই পুরুষ’, মনোজ বসুর কাহিনি-আধারিত ‘ডাকবাংলো’, দেবনারায়ণ গুপ্ত-র ‘শ্রেয়সী’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, কত ঐতিহাসিক নাটক! শিশির ভাদুড়ীর ভাই ছিলেন ছবি বিশ্বাসের সহপাঠী, তাই শিশিরবাবুকে ‘বড়দা’ বলতেন। কাছ থেকে অভিনয় দেখেছেন, শিখেছেন, তার পর পালটেছেন সেই অভিনয়কে। ম্যানারিজম-হীন সেই অভিনয়ের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ত চরিত্রের আভিজাত্য, দাপট, কারুণ্য, ভাঙচুর। ফিল্ম-কেরিয়ারের তুঙ্গ পর্যায়ে ন’বছর বাদ পড়েছিল মঞ্চাভিনয়, শরীরও ভাল যাচ্ছিল না। ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে যে দিন স্টার থিয়েটারে ফিরলেন, বুকিং অফিস খুলতেই লম্বা লাইন, প্রতিটা শো হাউসফুল। বক্স অফিস টানেন নায়ক-নায়িকারা আর ছবি বিশ্বাস— এ ছিল অমোঘ সত্য।

শুরুটা সতু সেনের রঙমহল-এ, নাটক দিয়ে। ১৯৩৬ সালে অভিনেতা-পরিচালক তিনকড়ি চক্রবর্তী ছবি বিশ্বাসকে মুখ্য ভূমিকায় নিলেন ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’ (পরে উত্তমকুমার যে ছবি করবেন আবারও) ছবিতে। লম্বা, সুদর্শন নায়কটিকে কিন্তু দর্শক নিলেন না। 

ছবি বিশ্বাস এখানে-ওখানে ঘোরেন নতুন কাজের আশায়। এক দিন শুনলেন, কমেডিয়ান-চরিত্রে অভিনয় করা এক অভিনেতা নাম নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, নাকি বদনাম করে বেড়াচ্ছেন তাঁর নামে। এক দিন পাকড়াও করলেন তাঁকে। গম্ভীর হয়ে নৃপতি বললেন, ‘‘বদনাম করার মতো কাজ করেছেন, তাই বদনাম করে বেড়াচ্ছি।’’ সে আবার কী! ওখানে দাঁড়িয়েই বোঝানো শুরু করলেন তাঁর অভিনয়ের ভুলচুক, খামতিগুলো। কেমন হবে হাঁটা, তাকানো, ডায়ালগ থ্রো, টাইমিং— সব। সে দিন থেকেই নৃপতি চট্টোপাধ্যায় ছবি বিশ্বাসের ফ্রেন্ড, ফিলজফার অ্যান্ড গাইড। ভালবাসা, বন্ধুতা অটুট ছিল আজীবন।

১৮ জানুয়ারি ১৯৪১। চিত্রা-য় মুক্তি পেল দেবকী বসুর ‘নর্তকী’। ৪১ বছরের ছবি বিশ্বাস সে ছবিতে অশীতিপর এক সন্ন্যাসী! কেউ বিশ্বাসই করতে পারেননি, ইনি আসলে বৃদ্ধ নন! অনেক পরে তপন সিংহের ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ একই বিপ্লব ঘটাবেন বছর চল্লিশের মনোজ মিত্র। ‘নর্তকী’-র মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র পেয়ে গেল তাঁর শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতাকে। একটু বেশি বয়সেই ছবির জগতে এসে, ২৬২ খানা মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিকে হাতে ধরে পার করে দিয়েছেন চরিত্রাভিনয়ের বৈতরণী। খানদানি জমিদার, অভিজাত বাঙালি বা ইঙ্গবঙ্গ চরিত্রে ভাবতেই দেননি আর কাউকে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.