পাথরের মধ্যে বসবাস, গাধায় চড়ে যাতায়াত করে এই গ্রামবাসীরা

Odd বাংলা ডেস্ক: বাইরে থেকে তো দেখা যাচ্ছে বিশালাকার এক পাথর, সেকি ভেতরে তো বসত ঘর। এমন ঘর শুধু একটি নয়, পুরো এক গ্রাম জুড়েই রয়েছে এমন পাথরের ঘর। শুধু তাই নয়, এই গ্রামবাসীরা যাতায়াতে সাইকেল, ভ্যান, অটো কিংবা মোটরসাইকেল নয় ব্যবহার করে গাধা। 

পর্তুগালের কথা ভাবলেই প্রথমেই লিসবন কিংবা পোর্তোর মতো দৃষ্টিনন্দন শহরগুলোর কথা মনে হয়। তবে দেশটিতে আকর্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। পর্তুগালের পূর্বাঞ্চলের স্পেনীয় সীমান্তের নিকট মনসন্তোয় একটি অদ্ভুত প্রকৃতির গ্রাম আছে। 

গ্রামটির প্রতিটি বসত বাড়ি পাথরকেন্দ্রিক। বিশালাকার সব পাথরের উপরে, মধ্যে এবং নিচে নির্মিত হয়েছে গ্রামবাসীর ঘরগুলো। গ্রামটি পর্তুগালের ইদানাহা-নোভা পৌরসভার অংশ। পাহাড়ের প্রায় ৪০০ ফুট উঁচুতে এই গ্রামের অবস্থান। এই অঞ্চলটি পর্তুগিজ নেচারজো জিওপার্কের অংশ এবং ইউনেস্কোর সংরক্ষিত অঞ্চল। 

মনসন্তোর গ্রামবাসীরা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেই বিশালাকার পাহাড় ঘিরে তাদের বসতি স্থাপন করেছে। অবাক করা বিষয় হলো এই গ্রামবাসীরা এখনো বাহনের ক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় রীতি অনুসরণ করে। তারা বাহন হিসেবে গাধা ব্যবহার করে। 

ধারণা করা হয়, এই অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপিত হয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক প্রস্তর যুগে। তবে বর্তমানের মনসান্তোর গ্রামটি ১২ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। গ্রামটির বাড়ি, রাস্তা সব কিছুই বিশালাকার পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। মনসন্তোর বাড়িগুলোর চারপাশই পাথরের। 

পাহাড়ের পাদদেশে লুসিটানীয় দুর্গের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। লুসিটানিয়ানরা খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রথম এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। বর্তমানে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দুর্গের স্থানে তারা একটি সুরক্ষিত বসতি স্থাপন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। রাজা আলফোনসো ১১৬৫ সালে টেম্পলার নাইটদের মনসন্তোর গ্রামটি দিয়েছিলেন। তারাই এখানে একটি দুর্গ তৈরি করেছিলেন। 

১১৭১ সালে দুর্গ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়। দুর্গের দেয়ালের মধ্যে একটি চ্যাপেল এবং রোমান স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। দুর্গের চারপাশে চারটি টাওয়ার নির্মিত হয়েছিল যেগুলো সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হত। 

১৪ শতকে দুর্গটিতে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। ১৪৭৬ সালে সম্রাট ডি জন এটি পুনর্গঠন করেন। 

এর কয়েক বছরের মধ্যে মনসন্তো কয়েকবার অবোরধ করার চেষ্টা করেছিল শত্রুরা, তবে কেউই সফল হয়নি। প্রতি বছরের মে মাসের ৩ তারিখে ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামটিতে অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবস উদযাপিত হয়। 

১৮১৩ এবং ১৮৩১ সালে দু’বার দুর্গটি বিস্ফোরণে আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। ১৯৮৯ সালে দুর্গটি সম্পূর্ণভাবে মেরামত করা হয়। এটি বর্তমানে একটি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। 

এই গ্রামের রাস্তাগুলো খুব সরু এবং খাঁড়া প্রকৃতির। ফলে স্থানীয়রা গাধা ব্যতীত অন্য কোনো বাহন ব্যবহার করতে পারে না যাতায়াতের জন্য। গ্রামটিতে সব মিলিয়ে বসতির সংখ্যা এক হাজারেরও কম। অনেকটা মধ্যযুগীয় ধাঁচে গড়ে ওঠা এই গ্রামটি তাদের ভিন্ন জীবন ব্যবস্থার কারণে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। বিশেষ করে পাথরের মধ্যে বসবাস ও গাধায় চড়ে যাতায়াত ব্যবস্থা তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.