নারীদের সব ইচ্ছে পূরণ করে এই গাছ !
Odd বাংলা ডেস্ক: ভূমধ্যসাগরের বুকে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হচ্ছে সাইপ্রাস। এটি ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত একটি দেশ। এর আয়তন নয় হাজার ২৫১ বর্গ কিলোমিটার। ভূমধ্যসাগরের বুকে অনেকগুলো দ্বীপ বিদ্যমান। তার মধ্যে সাইপ্রাস তৃতীয় বৃহত্তম। এখানকার প্রধান ভাষা হচ্ছে গ্রীক এবং তুর্কি। তবে ইংরেজি ভাষাও ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। এটি এক সময় ব্রিটিশ কলোনিয়ান রাষ্ট্র ছিল। ১৯৬০ সালের ১৬ আগস্ট এক চুক্তির মাধ্যমে তারা স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন হলেও বর্তমানে এটি একটি বিভক্ত রাষ্ট্র।
দেশটিকে ঘিরে তুর্কি এবং গ্রীকের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান। দ্বীপের উত্তরের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তুর্কি, যা তাদের রাজনীতিতে আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাইপ্রাসে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বেশি। যা মোট জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ। দেশটির মানুষ দুটি পরিচয়ে পরিচিত। একটি হলো গ্রীক সাইপ্রিয়ট এবং অন্যটি তুর্কি সাইপ্রিয়ট। গ্রীক সাইপ্রিয়টদের বেশিরভাগই অর্থোডক্স চার্চের সদস্য এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের বেশিরভাগই মুসলিম।
সাইপ্রাসের সবচেয়ে বড় নগরী এবং রাজধানী নিকোসিয়া। এটি পৃথিবীর একমাত্র নগরী, যা প্রশাসনিকভাবে দুটি অংশে বিভক্ত। দেশটির মাথাপিছু আয় ২৮ হাজার ৩৮১ ডলার। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ইউরোই হচ্ছে তাদের প্রধান মুদ্রা। তাদের আয়ের অন্যতম উৎস পর্যটন খাত। প্রতিবছর ২৪ লাখ বিদেশি পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। সাইপ্রাসে বিশ্বের প্রাচীনতম কিছু পানির কূপ পাওয়া গেছে। যেগুলো প্রায় ১০ হাজার পাঁচশো বছর ধরে টিকে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটিতে একটি গাছে আছে যেটিকে সবাই ইচ্ছেপূরণকারী গাছ হিসেবে বিশ্বাস করে। এই গাছটি রুমাল এবং ফিতা দিয়ে সজ্জিত। মানুষ বিশ্বাস করে যে সব নারীদের বাচ্চা নেই তার সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হবেন গাছটির কল্যাণে। ধারণা করা হয় কিংবদন্তি গ্রীক দেবী অ্যাফ্রোডাইট এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যাতে ভালোবাসার দেবী বলে অভিহিত করা হয়।
রোমান রককে সে জায়গার মানুষ অ্যাফ্রোডাইটে রক নামেই চেনে। এটি সেই জায়গা যেখানে অ্যাফ্রোডাইট সমুদ্র থেকে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিলেন। বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহের তালিকায় সাইপ্রাসের তিনটি স্থান রয়েছে। দেশটিতে ঘুরে দেখার জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হলো পাফস শহর। পুরো পাফস একটি মুক্ত বায়ু শহর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরনো পারফিউমটি সাইপ্রাসে আবিষ্কার হয়েছিল।
সাইপ্রিয়টদের দুপুরের খাবার খাওয়া একটি শিল্প। তারা খেতে বসে বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। অনেক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে সেখানে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হলৌমি পনির, কাওপিয়া, ভাইন লিভস, বৈচিত্র্য সম্পন্ন গ্রিলড মাংসের থালা। সাইপ্রাসের আরেকটি অবাক করা বিষয় হচ্ছে আইয়া নাপা। এটি একসময় বনভূমি ছিল। বর্তমানে এই নামে একটি শহর আছে। প্রাচীন সময়ে এই শহরটি গাছপালায় পরিবেষ্টিত ছিল। তাই এই বনভূমির নামে জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে।
পৃথিবীতে মাত্র দুইটি রাষ্ট্র রয়েছে। যাদের জাতীয় পতাকায় বিশ্বের মানচিত্র বিদ্যমান। সাইপ্রাস তাদের মধ্যে একটি। ব্রিটিশ শাসনের সাক্ষী হিসেবে এই দেশে এখনো বেশ কিছু ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি বিদ্যমান। সাইপ্রাসে ২০টি বিরল প্রজাতির অর্কিড এবং ৩৭১ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায়। সেখানকার একটি বিরল জাতের ভেড়া সাইপ্রাস মোফ্লোন, যা বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। বলা হয়ে থাকে যে এশিয়ান গুণ্যে ভেড়াই বংশধর হলো এই সাইপ্রাস মোফ্লোন। ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য রাজধানী নিকোসিয়া বেশ বিখ্যাত।
দেশটির সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট অলিম্পাস, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০২ ফুট উপরে। সাইপ্রাসে গড়ে বছরে ৪০ দিন বৃষ্টিপাত হয়। রৌদ্রের জন্য বেশ বিখ্যাত দেশটি। এক বছরের মধ্যে ৩০০ দিনই রৌদ্রজ্জল থাকে এখানকার পরিবেশ, যা ব্রিটেনের চেয়ে দ্বিগুণ।
Post a Comment