৪৩ এ পা রাখলেন বিশ্বের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি লুইস ব্রাউন

Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের প্রথম টেস্ট টেস্ট টিউব বেবি লুইস ব্রাউনের আজ ৪৩তম জন্মদিন। তারিখ ছিল ১৯৭৮ সালের ২৫শে জুলাই। ম্যাঞ্চেস্টার শহরের সদর জেলা হসপিটালে মধ্যরাত নাগাত সিজারিয়ান সেকশনের সাহায্যে জন্ম হল ৫ পাউণ্ড ১২ আউন্স ওজনের এক শিশুর। খুশিতে ঝলমল করে উঠল মা লেসলে ও পিতা পিটারের মুখ। জন্ম হল বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব কন্যা - লুইস ব্রাউনের। 

আজ থেকে প্রায় ৪০-৪২ বছর আগের কথা। লুইস দম্পতি চরম অশান্তিতে ভুগছে। লেসলে ব্রাউন এর ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক থাকার সন্তান সম্ভবা হতে পারছেন না। অবশেষে ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে তিনি ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের দারস্থ হন। তার ডিম্বাশয় (ওভারি) থেকে সংগ্রহ করা হল পরিণত ওভাম এবং তার স্বামীর দেহ থেকে স্পার্ম। একটি ল্যাবরেটরি ডিশে সংগৃহীত ওভাম ও স্পার্মের সংমিশ্রণের সংমিশ্রণের ফলে তৈরি হল ভ্রূণ। এই ভ্রূণটিকে লেসলের ইউটেরাসে প্রতিস্থাপন করা হল।

জন্ম হল লুইসের। এই ঘটনা চারিদিকে প্রচণ্ড সাড়া ফেলে। বিভিন্ন খবরের হেডলাইন হয়। বিভিন্ন নৈতিক ও আইনত প্রশ্ন ওঠে। জনসাধারণ আর মিডিয়ার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে থাকে লুইস পরিবার। ঝড় ঝাপটা কাটিয়ে অবশেষে ২০১৮ সালে সফলভাবে আইভিএফ (ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) এর প্রয়োগ করা প্রথম দম্পতি হিসাবে তাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে প্রথমবারের মতো আইভিএফ সেবা ১৯৮৩ সালে ম্যানচেস্টারের সেন্ট মেরি হাসপাতালে চালু করা হয়েছিল। আইভিএফ বা টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে শিশুর সংখ্যা এখন ৬ মিলিয়নের বেশি, যা যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া মোট শিশুর ২ শতাংশেরও বেশি।

বন্ধ্যাত্ব সমস্যাগ্রস্ত মানুষজনের জন্য আইভিএফ প্রযুক্তির উন্নয়ন করা হয়। টেস্টটিউব বেবির ‘জনক’ বৃটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট এডওয়ার্ডস। ১৯৫৫ সালে তিনি কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ের ওপর গবেষণা শুরু করেন। সহযোগী প্যাট্রিক স্টেপটোর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ইন-ভাইট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতির ওপর গবেষণা করেন। সে গবেষণার ফলেই ১৯৭৮ সালে বিশ্বের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি লুইস ব্রাউনের জন্ম হয়। ২০১০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। আইভিএফ বা টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে গর্ভধারণ যদিও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত, তবে সাফল্যের হার এখনো অনেক কম।

২০০৪ সালে ব্রাউন নৈশ ক্লাবের দারোয়ান ওয়েসলি মুলিন্ডারকে বিয়ে করেন। ড. এডওয়ার্ডসও তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। লুইস প্রথম পুত্রকে প্রাকৃতিকভাবে গর্ভে ধারণ করেছিলেন এবং ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে প্রসব করেছিলেন। ব্রাউনের বাবা ২০০৬ সালে মারা যান। তার মা পিত্তথলির সমস্যাজনিত কারণে ৬৪ বছর বয়সে ব্রিস্টল রয়্যাল ইনফার্মারিতে ৬ জুন ২০১২ তে মারা যান।

জেনে নিন আইভিএফ পদ্ধতি কি?

আইভিএফ (ইন ভিটরো ফার্টিলাইজেশন) বা টেস্ট টিউব বেবি পদ্ধতি হচ্ছে, বন্ধ্যাত্ব সমস্যাগ্রস্ত দম্পত্তিদের সন্তান জন্মদানে সাহায্য করার পদ্ধতি। ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাণু একদমই না থাকা বা শুক্রাণুর স্বল্পতা এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বোস্ফোটনে সমস্যা, টিউবাল ব্লকেজ, জরায়ুতে সমস্যা, হরমোনাল সমস্যাসহ আরো কিছু কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। ফলে ভ্রুণ তৈরি হয় না।

আইভিএফ পদ্ধতির ক্ষেত্রে, জরায়ুর বাইরে ল্যাবরেটরিতে ভ্রুণ তৈরি করা হয়। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর ডিমগুলোকে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিপক্ক করে এরপর বাইরে এনে ল্যাবটেরিতে স্বামীর শুকাণুর সঙ্গে ফার্টিলাইজেশন বা নিষেক করা হয়। ফার্টিলাইজেশন সফল হলে ল্যাবরেটরিতে তা দুই থেকে ছয় দিন রেখে ভ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর সেই ভ্রুণ স্ত্রীর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়, বড় হওয়ার জন্য। এভাবেই টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করানো হয়।

অনেকেই মনে করেন, যেহেতু টেস্ট টিউব বেবি তাই পুরো প্রক্রিয়াটি বোধ হয় টেস্ট টিউবে হয়। কিন্তু আসলে কেবল ভ্রুণ গঠন টেস্ট টিউবে হয়, এরপর জরায়ুর মধ্যে স্বাভাবিক বেবির মতোই বড় হয়। টেস্ট টিউব পদ্ধতির সফলতার বিষয়টি নির্ভর করে শুক্রাণুর মান, ডিমের মান, জরায়ুর মান, জরায়ু তা ধরে রাখতে পারবে কিনা, পাশাপাশি ল্যাব টেকনোলজি এসবের ওপরে। টেস্ট টিউব গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর বয়স খুব বড় একটা বিষয়। কেননা বয়স বড়লে ডিমের মান কমে যাওয়ায় সফলতার হার কম হয়।

ল্যাবরেটরিতে সাধারণত একাধিক ভ্রুণ তৈরি করা হয়। যেসব ভ্রুণ জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয় না, সেগুলো হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হয়। প্রথম চেষ্টায় সফল না হলে কিংবা পরবর্তী সন্তানের জন্মদানের জন্য- যেন তা পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়। যুক্তরাজ্যের হিউম্যান ফার্টিফাইজেশন এবং এমব্র্যায়োলজি অথোরিটি’র তথ্যানুসারে জেনে নিন, নারীদের বয়স অনুযায়ী টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানে সাফল্যের হার-

* ৩৫ বছরের কম বয়সি নারীদের : ২৯ শতাংশ

* ৩৫-৩৭ বছর বয়সি নারীদের : ২৩ শতাংশ

* ৩৮-৩৯ বছর বয়সি নারীদের : ১৫ শতাংশ

* ৪০-৪২ বছর বয়সি নারীদের : ৯ শতাংশ

* ৪৩-৪৪ বছর বয়সি নারীদের : ৩ শতাংশ

* ৪৪ বছরের বেশি বয়সি নারীদের : ২ শতাংশ

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.