Odd বাংলা ডেস্ক: তালিবান আফগানিস্তান দখল করতেই ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। বাংলাদেশের ভারত বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির সদস্যরা এ রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। অনুপ্রবেশের ব্যাপারে মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। ফলে পুলিস এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। জেলার সীমান্তে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী থানাগুলিকেও সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মালদহের পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, সীমান্ত সংলগ্ন থানাগুলিতে সারাবছরই বাড়তি নজরদারি থাকে। মালদহের মাটিকে যাতে দেশবিরোধীরা ব্যবহার না করতে পারে, তা দেখার জন্য থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে তালিবান শাসন কায়েম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলি মাথা তোলার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। কাশ্মীর উপত্যকাকে অশান্ত করার উদ্দেশ্যে শতাধিক বাংলাদেশি যুবক দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে বলে সেদেশের পুলিসকর্তারা জেনেছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা সহ বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলি হয়ে জঙ্গি মনোভবাপন্ন যুবকরা কাশ্মীরে যেতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সরকার উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চরম সতর্ক। সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনকভাবে কাউকে ঘোরফেরা করতে দেখলেই জওয়নারা পিছু ধাওয়া করছেন। এব্যাপারে হঠাৎ করেই সীমান্তে বিএসএফের ব্যস্ততা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
পুলিস এবং গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। পাশাপাশি ২৫ কিলোমিটার জল সীমান্তও উন্মুক্ত। ওই এলাকা গোরু পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত। কাঁটাতার না থাকায় দু’দেশের পাচারকারীরা সহজেই সীমান্ত পার হয়ে যায়। পাচারকারীরা দেশের অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর হলেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় তেমন প্রভাব ফেলে না। তবে তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জেএমবি বা অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এদেশে ঢুকতে পারলে চরম সমস্যা তৈরি হবে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালীন জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত অনেক কমেছে বলে গোয়েন্দাকর্তারা জানিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিককালে আফিগানিস্তানের পরিস্থিতি গোয়েন্দা এবং সীমান্তবর্তী জেলার পুলিসকর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ভারতকে ব্যতিব্যস্ত করার পরিকল্পনা জঙ্গিদের সারাবছরই থাকে। সুযোগ পেলেই পড়শি দেশ থেকে জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করে। সম্প্রতি চীন ও বাংলাদেশ থেকে মালদহ হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। ফলে মালদহ সীমান্তকে জঙ্গিরা ‘সফট টার্গেট’ হিসেবে মনে করতেই পারে। সেই প্রবণতা আমরা এর আগে লক্ষ্য করেছি। সেই কারণে আফগানিস্তানের ঘটনার পর কোনও ঝুঁকি নেওয়া হবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে ‘ইনপুট’ পাওয়ার পর ঝুঁকি নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তথ্য আদানপ্রদান করছে। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, পাচার রুখতে সীমান্তবর্তী থানাগুলি সারাবছরই সক্রিয় থাকে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে থানাগুলিকে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। কোনওরকম সন্দেহজনক গতিবিধি নজরে পড়লে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত বিষয়টি জেলা পুলিসকে জানাতে বলা হয়েছে। আমরাও সীমান্তবর্তী থানা এলাকা পরিদর্শন করব। এর আগে পুলিস সুপার এবং ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিক সীমান্তের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। বিএসএফের সঙ্গেও শীর্ষ আধিকারিকরা সমন্বয় রেখে চলেন। সীমান্ত সংলগ্ন থানাগুলির সঙ্গে বিএসএফের আধিকারিকদের যোগাযোগ রয়েছে। ফলে মালদহ সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঘটবে না বলে আমরা মনে করি।
Post a Comment