ঋতুস্রাব শুরু হলেই থাকতে হয় জঙ্গলে, পুরুষ ছুঁলেই... !
Odd বাংলা ডেস্ক: মহারাষ্ট্রে এই সময়ে এসেও হাজার হাজার নারী ও কিশোরীকে তাদের মাসিক ঋতুস্রাবের সময় বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে তাদের বসবাসের অযোগ্য কুঁড়েঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়।
মুম্বাইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই নারীদের সাহায্য করতে ভেঙে পড়া কুঁড়েঘরের জায়গায় আধুনিক পাকা ঘর তোলার একটি প্রকল্প শুরু করেছে। এই কুঁড়েঘরগুলোকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় "কুর্ম ঘর বা গাওকর।"
কিন্তু তাদের এই কাজ নিয়ে জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে যে, তারা এই অমানবিক প্রথা বিলোপের বদলে তাকে টিকিয়ে রাখারই উদ্যোগ নিয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, মাসিকের সময় নারীদের আলাদা করে রাখার জন্য তৈরি এই কুঁড়েঘরগুলো একেবারে ভেঙে ফেলাটাই সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতো।
যদিও খেরওয়াদি সোসাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠনটি বলছে, এই নারীদের জন্য পাকা ঘর, টয়লেট, ঘুমানোর বিছানা, জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়ে তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। তারাও এই প্রথা বিলোপের পক্ষে।
ভারতীয় সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই ঋতুস্রাবের সময় নারীদের সামাজিকভাবে একটা নিষেধের আবহে কাটাতে হয়। মাসিকের সময় নারীদের অশুচি বলে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়।
তাদের এ সময় সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয় এবং মন্দির বা কোন ধর্মীয় সৌধে, এমনকি রান্নাঘরেও ঢুকতে দেয়া হয় না।
তবে মহারাষ্ট্রের অন্যতম দরিদ্র ও অনুন্নত একটি জেলা গাডচিরোলির মাদিয়া সম্প্রদায়ের নারীদের ঋতুস্রাবের সময় সমাজে চরম বিধিনিষেধের মুখে থাকতে হয়। যা সামাজিক বিধিনিষেধের অন্য সব ঘেরাটোপকেও ছাড়িয়ে যায়।
প্রতি মাসের ওই পাঁচদিন প্রথাগত নিয়ম মেনে তাদের থাকতে হয় একটা কুঁড়েঘরে। শুধু তাই নয়, এই কুঁড়েঘরগুলো হয় মূলত গ্রামের একেবারে বাইরে, জঙ্গলের কিনার ঘেঁষে। অর্থাৎ এই সময়টা তাদের 'একঘরে' হয়ে থাকতে হয়।
তাদের রান্না করতে দেয়া হয় না। গ্রামের কুয়া থেকে জল তুলতে দেয়া হয় না। বাড়িতে নারী আত্মীয়দের দেয়া খাবার ও জল খেয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়। যদি কোন পুরুষ তাদের ছুঁয়ে ফেলে, তাহলে ওই পুরুষকে সাথে সাথে স্নান করতে হয়, কারণ ওই "অপবিত্র" নারীকে "ছুঁয়ে ফেলার কারণে সেও অপবিত্র হয়ে গেছে" বলে মনে করা হয়। মুম্বাইয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৈরি প্রথম আধুনিক পাকা ঘরকে স্বাগত জানিয়েছেন টুকুম গ্রামের নারীরা।
Post a Comment