চার হাজার বছরের পুরোনো মমি আজও অক্ষত

Odd বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাসের মধ্যে চীন সাম্রাজ্যের ইতিহাস অন্যতম সমৃদ্ধ। এর পেছনে মূল কারণ হলো চীনের ইতিহাস সংরক্ষিত আছে চীনের অলিতে-গলিতে। এছাড়াও বিখ্যাত পণ্ডিত এবং পরিব্রাজকদের ব্যক্তিগত নথিপত্রে চীনের ইতিহাস বিস্তারিতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যদি পৃথিবীর বাকি ইতিহাসে ফাঁকি থাকার বিন্দুমাত্র অবকাশও থাকে, সেটা চীনের ক্ষেত্রে কখনো সম্ভব নয়।

চীনের শিংজিয়ান মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের বিভিন্ন নিদর্শন। চার হাজার বছর আগের পুরোনো মমি এখানে সংরক্ষিত আছে। এসব মমি ও বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায় সিল্ক রোডের পাশে অবস্থিত শিংজিয়ান প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একটা সময় এখানকার সিল্ক রোডই পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ভাষা বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছিল যা অতিক্রম করেছে শিংজিয়ান প্রদেশের বুক চিরে।

চীনের অন্যতম বড় একটি অঞ্চল শিংজিয়ান। এই অঞ্চলের আয়তন ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই এলাকাটি আয়তনে চীনের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ। এর পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে আছে মুসলিম দেশ তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান। আর দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে আফগানিস্তান ও জম্মু-কাশ্মীর।

বর্তমান চীন সরকার এই অঞ্চলে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। বিশেষ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ওয়ান বেল্ড ওয়ান রোড ঘোষণার পর থেকেই এ অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। তবে হাজার বছর আগেই এ এলাকায় বিশাল সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। উদ্ধার করা মমিগুলো যার প্রমাণ। ১৯৭৮ সালের দিকে চীনের তারিম অববাহিকায় বেশ কিছু মমির সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো ‘তারিম মমি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই তারিম মমিগুলো প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো।


শিংজিয়ান মিউজিয়ামের বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, মাটিতে উল্টিয়ে রাখা একটি নৌকায় এসব মমি পাওয়া যায়। নৌকাটি ছিল একটি সমাধিক্ষেত্র। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, লাশগুলো ছিল প্রায় অক্ষত। এরপর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০টি লাশ উদ্ধার করা হয়। গবেষকদের মতে, লাশগুলো প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো।

এতদিন ধরে লাশগুলো অক্ষত থাকে কীভাবে? যদিও এগুলো প্রাচীন মিশরের মমি বানিয়ে সংরক্ষণ করার মতো করে রাখা হয়নি। তারপরও মমির দেহ অক্ষত থাকল বছরের পর বছর। তবে এদের দেহ মিশরীয় মমির মতো ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছিল না। এ লাশগুলো ছিল প্রাকৃতিক মমি। তাই এদের নাম দেয়া হয় ‘তারিম মমি’।

পরবর্তীতে গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, শুষ্ক আবহাওয়ার কারণেই মমিগুলো হাজার বছর ধরে অক্ষত ছিল। বিশেষ করে তারিম অববাহিকায় অবস্থিত তাকলামাকান মরুভূমির আবহাওয়া অত্যন্ত শুষ্ক। আবহাওয়ার শুষ্কতার কারণে লাশগুলোর দেহ পচন থেকে রক্ষা পায়। তবে গবেষকদের বিস্ময়ের কারণ ছিল অন্যদিকে।

লাশগুলো দেখতে স্থানীয় চীনাদের মতো ছিল না। এমনকি শিংজিয়ান বা এ অঞ্চলের মানুষের মতো না। এদের এশিয়ার কোনো জাতির সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। অক্ষত লাশগুলোর অনেকেরই চুল ছিল পশ্চিমাদের মতো সোনালি। চোখের মণি ছিল ইউরোপীয়দের মতো নীল। মমির হাতে পশ্চিমা কায়দায় আঁকা ট্যাটু। পরনের পোশাকও পশ্চিমাদের মতো।  তাই তাৎক্ষণিকভাবে মমির উৎপত্তি নিয়ে কেউই একমত হতে পারলেন না। তাই মমিগুলো গবেষণার জন্য ইতিহাসবিদদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে মমিগুলোর কার্বন ডেটিং টেস্ট করে জানা যায়, সেগুলো প্রায় তিন হাজার ৯৮০ বছরের পুরনো। বেশ কয়েকটি মমির মাথায় এক ধরনের টুপি ছিল। যেগুলো দেখতে অনেকটা প্রাচীন টাইরোলিয়ান টুপির মতো। লাশের কফিনের ভেতর বেশ কিছু গুল্ম পাওয়া যায়। গুল্মগুলো প্রাচীনকালে ইউরোপে শেষকৃত্যে মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর নৌকার মাধ্যমে সমাধিস্থ করার রীতি ভাইকিংদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.