মানব শিশু ডাকযোগে পৌঁছে যেত স্বজনদের কাছে! ভাবতে পারেন?
Odd বাংলা ডেস্ক: আধুনিককালের শুরু থেকেই পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছে দিতে পারে। প্রযুক্তির উন্নতিতে বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে সেই প্রসারতা আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডাকযোগে মানব শিশু পৌঁছে যেত স্বজনদের কাছে- এমন ঘটনা জানলে হয়তো অনেকের মনেই কৌতূহল জাগবে। তেমনই বিস্ময়কর ঘটনা নিয়েই আজকের আয়োজন।
ঘটনাটি বিশ শতকের গোড়ার দিকের। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে মানব শিশু পার্সেল পোস্ট সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো যেত। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ১৯১৩ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে আমেরিকায় পার্সেল পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বাবা-মা তাদের সন্তানদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে পাঠাতে পারতো। তাদের কাছে এটা বেশ সুবিধাজনকও ছিল বলে জানা যায়।
বাচ্চাদের পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর এ ধারণাটির শুরুর কথাও বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। পার্সেল পোস্টাল সার্ভিস শুরুর আগে আমেরিকানরা তাদের পণ্য কাছাকাছি শহরের কোথাও পাঠাতে বেসরকারি ডেলিভারি কোম্পানির সাহায্য নিতো, যা বেশ ব্যয়বহুলও ছিল। এছাড়া এসব কোম্পানি পরিচালিত হতো তাদের নিজস্ব নিয়মে। এর ফলে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যায় পড়তো। সকলেই এর বিকল্প কিছুর জন্য অপেক্ষা করছিল। অন্যদিকে পার্সেল পোস্ট সার্ভিসের ডেলিভারির জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য ছিল, যা তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল ছিল। এর সাহায্যে ৫০ পাউন্ড বা সাড়ে ২২ কেজি ওজনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র পাঠানো যেত।
পার্সেল পোস্ট সার্ভিসের মাধ্যমে সে সময় প্রেরণকৃত সব থেকে বিস্ময়কর ঘটনা ছিল জীবন্ত মানব শিশু পার্সেল। উল্লেখ্য, সে সময় মেইলের মাধ্যমে মানুষ পাঠানো রোধ করার জন্য পার্সেল পোস্ট প্রবিধানে কোনো বিধান ছিল না। এর ফলে কিছু কিছু অভিভাবক স্থানীয় মেইল ক্যারিয়ারের তত্ত্বাবধানে তাদের সন্তানদের আত্মীয়দের কাছে পাঠানো ভালো একটা মাধ্যম হিসেবে নেয়। আর এটি ট্রেনের টিকিট কেনার চেয়ে সস্তা ছিল।
অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে অন্যান্য জিনিসপত্রের মতো বাচ্চাদেরও কি মেইল ব্যাগে ভরে পাঠানো হতো? না, তেমন কিছু করা হতো না। বাচ্চাদের গন্তব্যে পাঠানো হতো মেইল ক্যারিয়ারের তত্ত্বাবধানে। এবং এই পদ্ধতির প্রতি অনেকেরই আস্থা জন্মেছিল।
বাচ্চাদের মেইল করার প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯১৩ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যবাসী এর সাক্ষী হয়েছিল। জেসি ও মাথিল্ডা বিগল তাদের ১০ পাউন্ড ওজনের শিশু পুত্রকে নিজেদের বসবাসের স্থান থেকে এক মাইল দূরে বাটাভিয়ায় অবস্থান করা তার দাদির কাছে পাঠাতে চেয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, তাদের কাছে সবার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটার যথেষ্ট অর্থ ছিল না।
জেসি ও মাথিল্ডা বিগল বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। হঠাৎ করেই তাদের পার্সেল পোস্ট সার্ভিসের কথা মনে আসে। যেই ভাবনা সেই কাজ। তারা স্থানীয় মেইল ডেলিভারি ম্যানের তত্ত্বাবধানে নিজেদের শিশু পুত্রকে দাদির কাছে মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। যেখানে তাদের মাত্র ১৫ সেন্ট খরচ হয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, জীবন্ত মানব শিশুকে পার্সেল পোস্ট সার্ভিসের মাধ্যমে প্রেরণের এই ঘটনা সে সময় স্থানীয়দের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল।
এ ঘটনার কয়েক মাস পরে পেনসিলভানিয়ায় পাইন হোলোর সাভিস পরিবার তাদের মেয়েকে ক্লে হোলোতে আত্মীয়দের কাছে মেইল করে পাঠিয়েছিল। তাদের এজন্য ৪৫ সেন্ট (বর্তমান প্রায় ১১ ডলার) খরচ হয়। তবে সর্বাধিক বিখ্যাত মেইল করা শিশুটি পাঁচ বছর বয়সী শার্লট মে পিয়েরস্টর্ফ নামে পরিচিত। সে তার দাদির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল।
তবে শার্লটের দাদি গ্রেঞ্জভিলি আইডাহোতে থাকতো। সে সময় তাদের থাকার স্থান থেকে আইডাহোতে যাতায়াত করা খুব ব্যয়বহুল ছিল। এর ফলে তার বাবা-মা পার্সেল পোস্টের মাধ্যমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা অনেকটা সাশ্রয়ী ছিল। অবশ্য শার্লটকে অপরিচিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে পাঠানো হয়নি। তার সঙ্গে ছিল তার মায়ের চাচাতো ভাই। সে রেলওয়ে পরিষেবায় কেরানি হিসেবে কাজ করতো। সে কারণেই সম্ভবত এই ক্ষেত্রে ‘মেইলিং’ এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পুরো বিষয়টির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার সদিচ্ছা নিশ্চিত করেছিল যে, এই দুর্দান্ত যাত্রায় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। এ ঘটনাটি এত বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল যে পরবর্তী সময়ে এটি নিয়ে ‘মেইলিং মে’ নামে একটি শিশুদের বই প্রকাশ করা হয়েছিল।
তবে মার্কিন পোস্টাল সার্ভিস মানব শিশু ‘মেইলিংয়ের এ পদ্ধতি বন্ধ করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯১৪ সালে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল-২ জোসেফ স্টুয়ার্ট এ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, শিশু এবং মানুষকে মেইলের মাধ্যমে পাঠানো উচিত নয়। এ ঘোষণা সত্ত্বেও অনেকেই মেইলিংয়ের মাধ্যমে শিশুদের আত্মীয়দের নিকট পাঠানো অব্যাহত রেখেছিল। তবে ধীরে ধীরে ১৯২০-এর দশকে এ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায়।
Post a Comment