Odd বাংলা ডেস্ক: নতুন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব পাওয়া নিঃসন্দেহে আপনার জন্য খুশির খবর। কিন্তু নিজের এই সফলতা ও বিজয় উদযাপন শেষ হওয়ার পরপরই ভাবনা আসে, বর্তমান অফিসের বসকে খবরটা কিভাবে জানাবো? ওই মুহুর্তে মনের মধ্যে একটু ভয় ও জড়তা কাজ করাটাও অস্বাভাবিক নয়।
এমন পরিস্থিতিতে আপনাকে অবশ্যই সবদিক বিবেচনা করে, সঠিকভাবে আলোচনার দিকে এগোতে হবে। ভাগ্য যদি ভালো থাকে এবং আপনার কথা বলার দক্ষতায় এমনও হতে পারে যে বর্তমান প্রতিষ্ঠানেই আপনাকে আরও বড় পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলো! তাই আজকে পাঠককে জানাবো, কিভাবে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি চাকরিক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকে কাজে লাগাবেন এবং ম্যানেজারকে জানাবেন আপনার হাতে আসা নতুন সুযোগটির কথা।
ধাপ ১: নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী কৌশল উদ্ভাবন করুন
প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে, কর্মজীবনে আপনার আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী। বাইরে থেকে নতুন প্রস্তাব পাওয়া মানেই এই নয় যে, আপনাকে সাথে সাথে বর্তমান চাকরিটি ছেড়ে দিতে হবে। হয়তোবা সুযোগটা হুট করেই সামনে চলে এসেছে এবং আপনাকে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা করে দেখতে হবে, কোনটি সবচেয়ে ভালো। আপনি হয়তো নতুন চাকরির ইন্টারভিউও দিয়েছেন, তবুও নতুন সুযোগটি গ্রহণ করার ব্যাপারে মনস্থির করতে পারছেন না।
এমতাবস্থায়, ক্যারিয়ারে আপনি ঠিক কী অর্জন করতে চান, তা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন। আপনি চাইলে নতুন সুযোগটিকে বর্তমান কোম্পানিতে স্বার্থসিদ্ধির উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণ সুযোগ বাড়িয়ে নিতে পারেন। আর যদি সিদ্ধান্ত হয়, নতুন সুযোগটি আপনি গ্রহণ করবেনই, তাহলে ম্যানেজারকে জানাতে তৈরি হয়ে যান।
ধাপ ২: বসের সুবিধামত আলোচনার সময় নির্ধারণ করুন
বসের সাথে নতুন সুযোগের ব্যাপারে আলোচনা করা বা নতুন চাকরিতে যাওয়ার কথা জানাতে চাইলে, তার সাথে সাক্ষাতের একটা সময় নির্ধারণ তো করতেই হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যদি ফোনে কথা বলার বদলে সরাসরি আলোচনা করতে পারেন। তবে দুজনেই দূরে অবস্থান করলে, ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্য নিতে পারেন।
চাকরি ছেড়ে দেওয়ার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে নোটিশ দিন। এই সময়ের মধ্যে আপনার হাতে থাকা প্রজেক্টগুলো শেষ করুন অথবা আপনার বদলি যিনি আসবেন, তাকে কাজ শেখাতে পারেন। কেন চাকরি ছাড়ছেন, তা জানানোর বাধ্যবাধকতা অনুভব করবেন না। আপনি চাইলে নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা নাও জানাতে পারেন তাদের। তবে এতদিন কাজের ফলে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, তার জন্য আপনার ম্যানেজারের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে ভুলবেন না। অফিসে আপনার শেষ দিনটির তারিখও আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।
ধাপ ৩: ইতিবাচক ভঙ্গিতে কথা বলুন
বেশি বেতন কিংবা আরও ভালো অভিজ্ঞতা লাভ, যে কারণেই চাকরি ছাড়েন না কেন; বসকে যখন নতুন সুযোগের কথা জানাবেন, ইতিবাচক ভঙ্গিতে কথা বলুন। এমনকি আপনি যদি বর্তমান চাকরি ছাড়তে খুবই আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবুও তা বসের সামনে প্রকাশ করা যাবে না।
আলোচনার সময় কখনোই আপনার বর্তমান চাকরি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ও বিরক্তি-ক্ষোভ প্রকাশ করবেন না। কারণ এখান থেকে আপনার একটি ভালো রেফারেন্স প্রয়োজন হতে পারে ভবিষ্যতে। তার চাইতে বরং, যা বলতে চান তা সহজ ও সোজাসাপ্টা ভাষায় জানান।
ধাপ ৪: পাল্টা প্রস্তাবের জন্য তৈরি হন
এটি অসম্ভব নয় যে, বাইরে থেকে অন্য সুযোগের কথা জানানোর পর বস আপনাকে ধরে রাখার জন্য পাল্টা একটি প্রস্তাব দিলেন। তখন হয়তো বস আপনাকে নতুন চাকরিতে সম্ভাব্য বেতনের কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন, আপনাকে এর চেয়ে বেশি বেতনে নিজের কোম্পানিতে রেখে দেওয়ার লোভও দেখাতে পারেন।
ঠিক ঐ মুহূর্তে আপনি প্রথম ধাপে ফিরে গিয়ে চিন্তা করুন, আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য কী? বেশি বেতন পাওয়াই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে বসের এই অফার আপনাকে প্রলুব্ধ করবে। কিন্তু আপনি যদি নতুন একটি পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা চান, তাহলে এই প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে হবে।
ধাপ ৫: চাকরির প্রস্তাব নিয়ে সমঝোতায় আসুন
এমনও হতে পারে, আপনি বসের কাছ থেকে পাল্টা প্রস্তাবের আশায় বসে আছেন, কিন্তু তিনি তা দিলেন না। সেক্ষেত্রে খেলাটা একটু ভিন্নভাবে খেলতে হবে। বসের সাথে আলোচনার দিন নিজের বেতন, পদমর্যাদা ও চাকরির নানা দিক সম্পর্কে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করুন।
এসময় আপনার সত্যিকার মূল্য বোঝাতে চাইলে বসকে নতুন কোম্পানির বেতনের অংকটা জানাতে পারেন। সেই সাথে জানান, সমান সুযোগ পেলে আপনি বর্তমান প্রতিষ্ঠানেও থাকতে রাজি। উত্তর যদি আসে 'না', তখন আপনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা নিতে হবে- থাকবেন নাকি চলে যাবেন।
আপনার সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, নতুন একটি চাকরির প্রস্তাব অবশ্যই আপনার আত্মবিশ্বাস ও বাজারমূল্য বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ একজন হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন।
Post a Comment