অবাধ মেলামেশা এমনকি মাদক সেবন সবই করতে পারে এই কারাবন্দীরা
Odd বাংলা ডেস্ক: এই কারাগারে দেশি-বিদেশি প্রায় দুই হাজার কারাবন্দী রয়েছে। তবে তাদের সকলের অভিন্ন একটি পরিচয় আছে- তারা সকলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী।
মার্গারিটা দ্বীপ যেন তাদের জন্য এক ভূস্বর্গ। এই দ্বীপকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মাদক ব্যবসা ও পাচার চক্র। যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মাদক প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই দ্বীপটি।
বাইরে থেকে দেখলে মার্গারিটা দ্বীপে অবস্থিত সান আন্তোনিও কারাগারকে আপনার কাছে ভেনেজুয়েলার আর দশটা কারাগারের মতোই মনে হবে। সবুজ পোশাক পরিহিত সৈন্যরা কারাগারের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন।
ওয়াচ টাওয়ারগুলো থেকে কারারক্ষীরা সমগ্র কারাগারকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো দর্শনার্থী কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বিরত রাখছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
কিন্তু ভেতরের দৃশ্য ভিন্ন। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আপনি যদি কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন, তবে আপনার কাছে এটিকে আর কারাগার মনে হবে না। মদের বার, প্লে-বয় ক্লাব, নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত- এসব দেখে মনে হবে, যেন এটি মার্গারিটা দ্বীপ নয়, লাস ভেগাসের কোনো অভিজাত রেড লাইট এলাকা।
মাদক ব্যবসা এখানে ওপেন সিক্রেট। তারপরও মাদক পাচারের অভিযোগে যদি কাউকে গ্রেফতার করা হয়, তবে তাকে এই কারাগারে বন্দী রাখা হয়। কারাগারের ভেতরে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা সেল বা কারাকক্ষ থাকলেও কারাগার প্রাঙ্গণে তারা অবাধে মেলামেশা করতে পারেন। বন্দীরা অবাধে মাদক সেবন ও ধূমপান করে থাকেন। ধূমপানের সময় দেখা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনপ্রিয় রেগা মিউজিকের তালে তালে নিশ্চিন্তে আকাশের দিকে ধোঁয়া ফুঁকে দিয়ে সময় উদযাপন করছেন।
বিনোদনের অংশ হিসেবে কারা অভ্যন্তরে মোরগ লড়াই উপভোগের ব্যবস্থা আছে। সে খেলায় বসে জুয়ার আসর। পাশাপাশি কয়েদিরা নিজেদের খরচেই উপরি-বিনোদনের জন্য গড়ে তুলেছেন মদের বার ও প্লে-বয় কেন্দ্র। চারটি সুইমিং পুলও আছে সেখানে। সেখানে বিকিনি গার্লের সাহচর্য নেন পুরুষ বন্দীরা। যেসব বন্দীদের পর্যাপ্ত টাকা আছে, তারা অর্থের বিনিময়ে সেখানে যেকোনো কিছু সংগ্রহ করতে পারেন। অনেকের সেলে স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও এয়ার কন্ডিশনারের মতো অভিজাত ব্যবস্থা আছে। চিত্ত বিনোদনের জন্য আছে আরও নানা আয়োজন।
দর্শনার্থীরা যখন কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন, তখন তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। কিন্তু যখন বের হন তখন কোনো তল্লাশি করা হয় না। ফলে তারা কয়েদিদের কাছ থেকে নির্বিঘ্নে মাদক সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারেন। এভাবে কারাগারের অভ্যন্তরেই মাদকের একটি বিশাল চক্র গড়ে উঠেছে। মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হলেও, তারা কারাগারের অভ্যন্তরেই নিরাপদে মাদক ব্যবসা করছেন।
যদি কখনো কারাগারে বিশেষ জরুরি অবস্থা জারি হয় কিংবা তল্লাশির সম্ভাবনা দেখা যায়, তবে কারা প্রহরীরা নিজ দায়িত্বে কয়েদিদের কাছে গিয়ে সবিনয়ে তাদেরকে সতর্ক করে আসেন। মূলত এই সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক মাদক ব্যবসায়ী বাইরের জগতে থাকার চেয়ে কারাগারের ভেতরে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তবে ভেনেজুয়েলার সরকার স্বেচ্ছায় এমন অভিনব কারাগার গড়ে তুলেছে ভাবলে ভুল হবে; মূলত মাদক পাচারকারী চক্রের প্রভাব ও ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে সরকার অনেকটা বাধ্য হয়ে এমন পরিস্থিতি মেনে নিয়েছে। তবে শর্ত একটা- সব সুযোগ সুবিধা থাকলেও পালানোর সুযোগ নেই তাদের! এটি মাদক ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যকার একটি পারস্পারিক নীতিও বটে। কারা অভ্যন্তরে এসব সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে তারা দেশের অন্যান্য স্থানে জটিলতা তৈরি থেকে বিরত থাকেন।
এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কারাগার যে সবসময় শান্ত থাকে এমনটি নয়। কারা অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, শুধুমাত্র ২০১০ সালে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে ৪৭৬ জন কারাবন্দী নিহত হয়েছেন, যা দেশটির মোট কারাবন্দীর এক শতাংশ। ২০১০ সালে দেশটির কারাগারে মোট বন্দীর সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৫২০ জন।
তবে দেশটির সরকার এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজছেন। এজন্য দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি হুগো শাভেজ তার শাসনামলে কারা মন্ত্রণালয় নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয়ও গঠন করেছিলেন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার একটি সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
Post a Comment