যে কারনে পিঁপড়েরা ঘুমায় না!


Odd বাংলা ডেস্ক: সারাদিন টই টই করে আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো অদ্ভুত প্রাণীটি আর কিছু নয় সেটি হল পিঁপড়ে। এই অদ্ভুত প্রাণীটি সম্পর্কে যতই জানতে চাই ততই আমরা অবাক হয়ে পরি। কারন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করা এই প্রাণীটির কোনো ঘুম বলে নেই। যেখানে আমাদের শরীর সুস্থের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এই অদ্ভুত প্রাণীটির ঘুম না হওয়া নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই অবাক করা বিষয় হল এদের কোনো ফুসফুস নেই। এবং এদের হাঁটু ও পায়ে আছে বিশেষ এক ধরণের সেনসিং ভাইব্রেসন যার মাধ্যমে এরা আশেপাশের পরিস্থিতি বুঝতে পারে। পোকামাকড়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হল এই পিঁপড়ে।

ঘুম না হওয়ার কারণ?
পিঁপড়েরা খুবই পরিশ্রমী একটা প্রাণী। এত ব্যস্ততার জন্যই কি তারা ঘুমায় না? ব্যাপারটা তা নয়। ব্যাপারটা হলো পিঁপড়ের চোখের পাতা নেই, তাই এরা চোখ বন্ধ করতে পারে না। তবে তার জন্য এদের দেখতে কোনো সমস্যা হয় না। অধিকাংশ পিঁপড়ের দুটি চোখ থাকে, এতে কয়েকটি লেন্স থাকে যার সাহায্যে এরা খুব ভালো দেখতে পায়। ঘুম মানেই চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা নয়। আমাদের না হয় চোখের পাতা আছে বন্ধ করে ফেলি। যাদের চোখের পাতা নেই তারা কি তাহলে ঘুমাবে না? পিঁপড়াও ঘুমায় তবে তাদের সে ঘুম হুবহু আমাদের মতো নয়। এখানে ঘুম বিষয়টিকে আমরা গভীর বিশ্রামের সাথে তুলনা করতে পারি। পিঁপড়ার ঘুম নিয়ে কিন্তু গবেষণা পর্যন্ত হয়ে গেছে।

জেমস ও কোটেল পিঁপড়ার গভীর বিশ্রাম নিয়ে গবেষণা করেন। ১৯৮৩ সালে বিষয়টি উল্লেখ করেন যে এই বিশ্রামদশা ২৪ ঘণ্টায় অনেকগুলো ক্রমে ঘটার বিবরণ পাওয়া যায়। কিছু পিঁপড়া যখন বিশ্রাম নিতে থাকে তখন অন্য পিঁপড়া তাদের বাসস্থানের দেখভালের পুরো দায়িত্ব পালন করে। আর বিশ্রাম চলা কালে পিঁপড়ার ম্যান্ডিবল ও অ্যান্টেনার সঞ্চালন বেশ কমে যায় স্বাভাবিকের তুলনায়। তাই এই দশাকে গভীর বিশ্রাম দশা নাম দেন।

১৯৮৬ সালে বেইসিং ও ম্যাক্লাস্কি পিঁপড়ার ছোটোখাটো মস্তিষ্কের কার্যকারিতার তথ্য উপাত্ত নিয়ে পিঁপড়ার গভীর বিশ্রাম দশাই যে প্রচলিত অর্থে ঘুম তা জানিয়ে দেন।

ডিভন সুইক, ডেবি কেসিল, জর্জ ইয়ানেভ ও স্কাই ব্রাউন সহ এই কয়জন গবেষক পিঁপড়ার ঘুম নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ২০০৯ সালের দিকে। সেখানে তারা প্রকাশ করেন বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়ার ঘুম বিভিন্ন রকমের হয়। লাল পিঁপড়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন উনারা।

মানুষ যেমন একবারে ৮/৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে, পিঁপড়া ঠিক এমনভাবে ঘুমায় না। ওদের ঘুম ছোট ছোট পর্বে বিভক্ত।

কর্মী পিঁপড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫০ বারের মতো ঘুমায়। আর প্রতিবার তারা মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময় ঘুমিয়ে থাকে। সবমিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় একটি কর্মী পিঁপড়া সাড়ে চার ঘণ্টার মতো ঘুমাতে পারে। তারা কখনোই একসাথে সবাই ঘুমায় না, অন্তত ৮০% জেগে থাকে। কিছু পিঁপড়া যখন বিশ্রামে যায় তখন পর্যাপ্ত সংখ্যক পিঁপড়া জেগে থাকে প্রতিরক্ষা কিংবা কাজের তাগিদে।

অন্যদিকে রানী পিঁপড়া একটু অলস প্রকৃতির। যদিও তারা ২৪ ঘণ্টায় ৯০ বারের মতো ঘুমায়, কিন্তু প্রতিবারে প্রায় ৬ মিনিটের মতো সময় নেয়। সবমিলিয়ে রানী পিঁপড়া ৯ ঘণ্টার মতো ঘুমায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।

তাহলে দেখা গেল রানী পিঁপড়া আমাদের সমপরিমাণ ঘুম দিলেও একটানা নয়। মজার বিষয় হলো একটি কলোনিতে একাধিক রানী পিঁপড়া থাকলে তারা ঘুমানোর সময় একসাথেই ঘুমায়, একরকম জড়াজড়ি করে। কিন্তু ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তারা আলাদা হয়ে পড়ে।

ডেবি কেসিল এর মতে রানী পিঁপড়ারা মাঝে মধ্যে মুখ খুলে এবং অ্যান্টেনা পাশের দিকে রেখে ঘুমায়। আবার অনেক সময় মুখ বন্ধ করে ঘুমায় এবং অ্যান্টেনা খাঁড়া করে। এটাই এদের গভীর বিশ্রাম দশা।

সদ্য জেগে ওঠা থেকে ওঠা পিঁপড়া কিছু সময় ঢুলুঢুলু ভাবে চলাফেরা করে, এটা কিন্তু আমাদের সাথে বেশ মিলে যায়।

মস্তিষ্ক থাকলে ঘুমের দরকার পড়বেই বলা চলে। সেই ঘুমের প্যাটার্ন একেক প্রাণীর একেক রকম। আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী যারা কিনা পতঙ্গ নামে পরিচিত, এদের চোখের পাতা নেই। অন্যদিকে বেশ উন্নত প্রাণী মাছেরও চোখের পাতা নেই। তাই ঘুম বলতে প্রচলিত অর্থে আমরা যেমনটি দেখে থাকি তেমনটা এসব প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যাবে না।

পিঁপড়ার মস্তিষ্কে মোটামুটি ২৫০০০০ এর মতো নিউরন থাকে, যা আমাদের তুলনায় অনেক অনেক কম। ওদের মস্তিষ্কের গঠনও বেশ সরল। তাই ঘুমের বিষয়টিও আমাদের সাথে পুরোপুরি আলাদা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.