Odd বাংলা ডেস্ক: মমির অভিশাপেও মানুষ মারা যায়! অবাক করা বিষয় হলেও দুঃখজনক যে, এক বা দু’জন নয় বরং ৯ জন ব্যক্তি মমির অভিশাপে রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন!
ফারাও রাজার মমি উদ্ধারের কাজে সম্পৃক্ত ৯ ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যুরহস্য আজও বিশ্ববাসীর অজানা। ধারণা করা হয়, তারা সবাই মারা গিয়েছেন ফারাও রাজা তুতেনখামুনের অভিশাপে।
১৯২২ সালের ৪ নভেম্বরে হাওয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্বে প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল রাজা তুতেনখামুনের সমাধি আবিষ্কার করেন। তিনি রাজা তুত নামেও পরিচিত।
৩৩০০ বছর পুরোনো তুতেনখামুনের কফিনবন্দি মমি পাওয়া যায় সমাধিস্থলে। বিশেষজ্ঞরা গবেষণার প্রয়োজনে ২৬ নভেম্বর তুতেনখামুনের কফিনটি খোলার সিদ্ধান্ত নেন। গবেষকরা তুতেনখামুনের মমির পাশে একটি চিরকুট খুঁজে পান।
যাতে লেখা ছিল ‘রাজার শান্তি বিনষ্টকারীদের মৃত্যু’। রাজার সমাধিস্থল থেকে আরও পাওয়া যায় মহামূল্যবান সব ধন-সম্পদ। একইসঙ্গে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি হস্তশিল্প খুঁজে পাওয়া যায় তার সমাধিক্ষেত্রে।
কথিত আছে, তুতেনখামুনের সমাধির সঙ্গে যারাই কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন তাদের বেশিরভাগই রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ কারণেই অনেকের মত, এই ফারাও রাজার সমাধি অভিশপ্ত।
রাজা তুতেনখামুনের সমাধি আবিষ্কার ও গবেষণার কাজে জড়িত থাকা ৯ ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু আজও স্মরণ করিয়ে দেয় রাজা তুতের অভিশাপ।
জর্জ হারবার্ট, পঞ্চম আর্ল কার্নারভন
রাজা তুতের সমাধি খননের জন্য অর্থায়ন দিয়েছিলেন এই ব্যক্তি। তিনিই প্রথম অনুমিত রাজার অভিশাপে আত্মহত্যা করেন। শেভ করার সময় গলা কেটে অতিরিক্ত রক্তপাত হয়ে মারা যান তিনি।
তুতেনখামুনের সমাধি আবিষ্কারের ৬ সপ্তাহ পর তিনি মারা যান। জনশ্রুতি আছে, যখন জর্জ হারবার্ট মারা যান তখন তার বাড়ির সব আলো রহস্যজনকভাবে নিভে গিয়েছিল।
জর্জ জয় গল্ড
গল্ড ছিলেন আমেরিকান এক ধনী ব্যক্তি। তিনি সেখানকার রেলপথ নির্বাহী ছিলেন। ১৯২৩ সালে তুতেনখামুনের সমাধি পরিদর্শনকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর আর সুস্থ হননি। কয়েক মাস নিউমোনিয়ায় ভুগে তিনি মারা যান।
ওব্রে হারবার্ট
ধারণা করা হয়, জর্জ হারবার্টের মৃত্যুর পর তার সৎ ভাই ওব্রে রাজা তুতের অভিশাপে ভুগেছিলেন। চোখের সমস্যা নিয়েই জন্মায় সে। তবে জীবনের শেষের দিকে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
চিকিৎসকরা জানান, দাঁতের সংক্রমণের কারণে তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন। পরবর্তীতে কয়েক দফায় তার সংক্রমণযুক্ত দাঁত তুলে ফেলা হয়।
তবুও চোখের আলো ফিরে পাননি। অতিরিক্ত অস্ত্রোপচারের ফলে সেপসিসে মারা যান ওব্রে। জর্জ মারা যাওয়ার ৫ মাস পরেই তার ভাই ওব্রের মৃত্যু ঘটে।
হিউজ ইভেলিন-হোয়াইট
ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ইভেলিন-হোয়াইট রাজা তুতেনখামুনের সমাধিস্থল খননকাজে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনার পর ১৯২৪ সালের মধ্যে প্রায় দুই ডজন সহকর্মী হারান তিনি।
অস্বাভাকিভাবে একের পর এক সহকর্মীর মৃত্যু দেখে ভয় পান তিনি। ইভেলিন-হোয়াইট গলায় ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করেন। মারা যাওয়ার আগে তিনি চিরকুটে লিখে যান- ‘আমি এমন এক অভিশাপের সম্মুখীন হয়েছি, যা আমাকে মরতে বাধ্য করেছে’।
অ্যারন অ্যাম্বার
রাজা তুতেনখামুনের সমাধি খোলার সময় সেখানে জর্জ রবার্টসহ উপস্থিত অনেক ব্যক্তির মধ্যে আমেরিকান মিশরবিদ অ্যারন অ্যাম্বারও ছিলেন। ১৯২৬ সালে অ্যাম্বার মারা যান। হঠাৎ তার বাড়িতে আগুন লেগে যায়।
বাল্টিমোরে তার বাড়িতে সেই রাতে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। হঠাৎ বাড়িতে আগুন লাগে। এক ঘণ্টারও কম সময়ে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় তার বাড়ি। সবাই বাড়ি থেকে বের হলেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বের হতে পারেননি অ্যারন।
তিনি তখনও স্ত্রীর সঙ্গে তার বইয়ের পাণ্ডুলিপি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মুহূর্তেই পরিবারসহ আগুনে পুড়ে মারা যান অ্যারন। তার পাণ্ডুলিপির নাম ছিল ‘মৃতদের মিশরীয় বই ’।
রিচার্ড বেথেল
বেথেল ছিলেন জর্জ হারবার্টের সচিব। তিনিই কার্টারের পেছনে সবার আগে সমাধিতে প্রবেশ করেছিলেন। ১৯২২ সালে রহস্যজনকভাবে তিনিও মারা যান। লন্ডনের একটি অভিজাত ক্লাবের এক কক্ষ থেকে তার পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্যার আর্চিবাল্ড ডগলাস রিড
তিনি ছিলেন একজন রেডিওলজিস্ট ও গবেষক। রাজা তুতেনখামুনের মমি উদ্ধারের পর সেটির প্রথম এক্স-রে করেন রিড। এর পরের দিনই আকস্মিকভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩ দিন পরেই মারা যান এই ব্যক্তি।
জেমস হেনরি ব্রেস্টেড
তিনি ছিলেন বিখ্যাত মিশরবিদ। কার্টারের সঙ্গে সমাধিস্থলে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধারকাজ শেষে বাড়ি ফিরেই দেখেন তার পোষা ক্যানারিকে একটি কোবরা সাপ খেয়ে ফেলেছে। সাপটি তখনও তার বাড়িতেই ছিল।
জানলে অবাক হবেন, কোবরা মিশরীয় রাজতন্ত্রের প্রতীক। মিশরীয় রাজাদের মুকুটেও সাপের ফনার মতো কারুকার্য শোভা পেত। ব্রেস্টেড তখনও অক্ষত ছিলেন। ১৯৩৫ সালের শেষের দিকে মিশর ভ্রমণকালে মৃত্যু ঘটে তার।
স্যার ব্রুস ইঙ্গাম
তুতেনখামুনের সমাধি আবিষ্কারক প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার তার বন্ধু ইঙ্গামকে একটি উপহার দেন। তুতেনখামুনের সমাধি থেকে পাওয়া একটি পেপারওয়েট তিনি বন্ধুকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
এই উপহার গ্রহণের কিছুদিন পরেই ইঙ্গামের বাড়িতে আগুন লেগে যায়। এরপর তিনি বাড়িটি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেন। তখন আবার বন্যায় ভেঙে পড়ে তার বাড়িটি। তবে ইঙ্গামের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনি।
হাওয়ার্ড কার্টার
কার্টারের নেতৃত্বেই রাজা তুতেনখামুনের সমাধি খননকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। তবে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় জীবন কাটিয়েছেন। তার সঙ্গে অস্বাভাবিক কিছুই ঘটেনি। তিনি স্বাভাবিকভাবেই ৬৪ বছর বয়সে লিম্ফোমাতে মারা যান।
Post a Comment